বজ্রপাত থেকে রক্ষায় খোরশেদ আলীর ব্যতিক্রমী উদ্যোগ
৮০ বছর বয়সী খোরশেদ আলী। পেশায় একজন পল্লী চিকিৎসক। বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধ এবং বজ্রপাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে সড়কের দুই ধার, বসতভিটার আশপাশে তালগাছের বীজ রোপণ করছেন তিনি। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবার ও মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদদের স্মরণে বিভিন্ন সড়কে এখন পর্যন্ত লাগিয়েছেন ৫২ হাজার তাল গাছ। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ১ লাখ গাছ লাগানোর ইচ্ছা খোরশেদ আলীর।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের দুই ধারে লাগানো গাছের পরিচর্যা করছেন খোরশেদ আলী। এভাবে গত ৯-১০ বছর ধরে জেলার বিভিন্ন উপজেলার সড়কে তাল গাছগুলো লাগিয়েছেন তিনি। এই কাজ করতে গিয়ে নিজের কৃষি জমি পর্যন্ত বিক্রি করতে হয়েছিল তাকে। তবুও তিনি থেমে যাননি। নিজের টাকায় আঁটি কিনে বিভিন্ন সড়ক ও গ্রামীণ রাস্তার পাশে তাল গাছ রোপণ করায় যেন তার নেশা।
খোরশেদ আলী ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, এই ইউনিয়নের পাহাড়ভাঙ্গা এলাকায় তার বাড়ি। স্ত্রী আর ৭ ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে তার সংসার। আয়ের উৎস বলতে কেবল নিজের অল্প কিছু কৃষি জমি আর পল্লী চিকিৎসা দিয়ে যতটুকু অর্থ উপার্জিত হয় ততটুকুই। এ দিয়েই চলে তার সংসার।
এ বয়সে এসেও হাজার হাজার তালগাছ কেন রোপণ করছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবার ও মহান মুক্তিযুদ্ধে যাদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি সেসব শহীদদের আত্মার শান্তি কামনায় আমার এই উদ্যোগ। একইসঙ্গে মানুষ যাতে বজ্রপাত থেকে রক্ষা পায় তাই সড়কের দুই ধার দিয়ে এখন পর্যন্ত ৫২ হাজার তালগাছের চারা রোপণ করছি। তবে ইচ্ছে আছে ১ লাখ তাল গাছ রোপণ করার।
তিনি আরও জানান, প্রতিদিন মোটরসাইকেলযোগে বিভিন্ন সড়কে ১০০টি করে তাল গাছের চারা পরিচর্যা করি। তবে তাল গাছগুলো কিছু দুষ্ট প্রকৃতির লোক উপড়ে ফেলছে, গাছগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারি সহায়তা চান তিনি।
আব্দুল আলিম নামের এক ব্যক্তি বলেন, তাল গাছ পাগল ডাক্তার দীর্ঘদিন ধরে অনেক গাছ লাগিয়েছেন মানুষের উপকারের জন্য। তিনি এই গাছগুলো লাগিয়েছেন নিজ খরচে। অনেক সময় তিনি লোক নিয়ে এই চারাগুলো রোপণ করেন। তিনি সাধারণত রাতের বেলায় চারা রোপণ করেন। কারণ দিনে চারা রোপণ করলে কেউ চারাগুলো নিয়ে নিতে পারে। তাই তিনি রাতের বেলায় এই চারা রোপণ করেন। সাধারণত রাত ১২টা-৩টার মধ্যে এই চারা রোপণ করেন তিনি।
সাগর আলী নামে আরেকজন বলেন, তাল গাছ রোপণ করা নিয়ে তার পরিবারের মধ্যে অনেক সময় ঝগড়া হয়েছে। তিনি নিজ উদ্যেগে জমি বিক্রয় করেও তালের চারা রোপণ করেছেন। এই মহৎ কাজ তিনি করে যাচ্ছেন আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের উপকারের জন্য। সরকারের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করলে তিনি আরও উৎসাহ পাবেন।
খোরশেদ আলী নিজ উদ্যোগে তালগাছের বীজ রোপণ করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বলে জানান স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হক। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তাল গাছের ভূমিকা অনেক। ইউপি কার্যালয় থেকে তাল গাছ রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক (ডিসি) মাহবুবুর রহমান খোরশেদ আলীর তাল গাছ রোপণকে সাধুবাদ জানিয়ে ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, খোরশেদ আলীর তাল গাছ লাগানো সামাজিক ভালো কাজের একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। জেলা প্রশাসন খোরশেদ আলীকে সহযোগিতা করবে।
এসজি