বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বানার্ড আরনো
দামী পণ্য ও খাবারের উৎপাদক প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের ‘এলভিএমএইচ’ ব্র্যান্ডের মালিক তিনি। নাম বানার্ড আরনো। তিনিই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। প্রথম ইউরোপীয়ান হিসেবে বøুমবার্গের এবারের বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির তালিকায় সবার ওপরে উঠেছেন। তার সম্পদের মূল্য ১৭১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তার পণ্যগুলো ভালো বিক্রি হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ জুড়ে। আর এই সম্রাজ্যটির বাজার মূল্য হলো ৩শ ৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বানার্ড আরনো জন্মেছেন ১৯৪৯ সালে ফ্রান্সে। নামকরা অ্যাকোল পলিটেকনিক থেকে পাশ করেছেন। এটি প্যারিসের একটি বিখ্যাত ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল। তাদের পরিবারের মালিকানাধীন নির্মাণ কম্পানিটির মাধ্যমে তিনি তার পেশাজীবনের শুরু করেছেন। নাম হলো ফ্যারেট-সাবিনাল। পদোন্নতি পেয়ে, পেয়ে ১৯৭৮ সালে চেয়ারম্যান হয়েছেন। এর ছয় বছর পর তার পালে বাতাস লাগলো। তখন ফরাসি সরকার একজন নতুন বিনিয়োগকারীকে খুঁজছিল যিনি বুসাক সেইন্ট ফ্রেয়ার নামের প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা কিনে নেবেন। দেউলিয়া হয়ে যাওয়া এই টেক্সটাইল গ্রুপটির একটি মূল প্রতিষ্ঠান হলো ক্রিস্টিয়ান ডায়োর বিশ্বজুড়ে নামকরা একটি তারকা ফরাসী ফ্যাশন হাউজ। আরনো কিনে নিলেন ও পুরো গ্রুপটির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করলেন। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে তিনি লাভে ফিরিয়ে আনলেন ও কেবল তাই নয়, তিনি তার অবিশ্বাস্য ব্যবসা বুদ্ধিতে বিশ্বের প্রধান দামী পণ্যগুলোর উৎপাদক প্রতিষ্ঠান হবার দিকে তাদের নিয়ে গেলেন। যেগুলোর মধ্যে আছে দামী ব্যাগ, জুতো, ঘড়ি ইত্যাদি। এই উন্নতির হাত ধরে তিনি নতুন করে উজ্জীবিত করলেন ক্রিস্টিয়ান ডায়োরকে। তাকে নিয়ে গেলেন একটি নতুন প্রতিষ্ঠানে। ১৯৮৯ সালে এলভিএমএইচের নিয়ন্ত্রণ নেবার মতো শেয়ার স্টক থেকে কিনে নিলেন তিনি। এর দুটি বছর আগে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করেছে। তখন থেকে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও সিইও। নিজের নামটিকে নয়, তিনি তার প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্র্যান্ড নামগুলোর দিকে মনোযোগ দিয়েছেন। ফলে বাসাবাড়িতে পরিচিত ও প্রবল বিক্রি হওয়া পণ্য হয়ে গেল সেগুলো। তার ক্রিস্টিয়ান ডায়োর তো আছেই, মদের ব্র্যান্ড ডম প্যারেনিয়ন তেমনই আরেকটি নাম।
গত তিন দশকে আরনো তার এলভিএমএইচকে নিয়ে গিয়েছেন দামী ৭৫টি ব্যান্ডে। অত্যন্ত শক্তিশালী এই প্রতিষ্ঠানটি নামকরা ওয়াইন, ম্পিরিট, চামড়ার পণ্য, পারফিউম, কসমেটিকস, ঘড়ি, গহনা বিক্রি করে। ব্যয়বহুল ভ্রমণের ব্যবস্থা ও হোটেলে অবস্থানের কাজগুলোও করে দেয়। তার দামী লুই ভিতোর দোকান চালু করেছেন চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে ১৯৯২ সালে।
২০২১ সালের জানুয়ারিতে তার এলভিএমএইচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত নামকরা অলংকার শিল্প তৈরি প্রতিষ্ঠান টিফানি অ্যান্ড কোংকে ১৫.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দামে কিনে নিয়েছে। আজকে পর্যন্ত এটিই হলো দামী পণ্যগুলোর মালিকানার ক্ষেত্রে সবচেয়ে দাম দিয়ে কেনা পরিবর্তন।
তিনি একজন দাতা। তার এলভিএমএইচের মাধ্যমেই প্রধানত শিল্প ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে দাতব্য কাজগুলো করে চলেছেন। ২০১৯ সালে ২১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তিনি তার গ্রুপের মাধ্যমে আগুনে পুড়ে যাওয়া প্যারিসের নটর ডেম গির্জাটিকে আবার তৈরি করার জন্য ২১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দান করেছেন।
দীর্ঘকাল ধরে পুরো ইউরোপের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি বানার্ড আরনো। তবে ৭৩ বছরের মানুষটিকে এই বিষয়ে দেখলে উদাসীন মনে হয়। তেমন কোনো বাহুল্য ও চমক দেখান না তিনি। তেমনভাবে গণমাধ্যমে উপস্থিতি নেই তার। ২০২২ সালের অক্টোবরে নিজের মালিকানাধীন রেডিও ক্লাসিককে বলেছেন, নিজের ব্যক্তিগত জেট বিমানটি বিক্রি করে দিয়েছেন তাকে নিয়মিত বিমানে যাতায়াত করতে হয় বলে এবং টুইটারে নিজের জেট বিমান থাকার জন্য তাকে লজ্জ্বা পাওয়ার কারণে। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত ও তার পাঁচটি ছেলেমেয়ে আছে। তাদের সবাই তার এলভিএমএইচে কাজ করেন বা তাদের কোনো না কোনো ব্র্যান্ডে দায়িত্বশীল।
ডিএসএস/