শীতের আগমণে রাবি ক্যাম্পাসে প্রাণের মেলা
একদিকে পাতাঝরার বিষাদ অন্যদিকে ফুলের দল মেলা উচ্ছ্বাস। সকালের কুয়াশার মাঝেই দেখা মিলছে তাদের কলরব। তাতে সাজসজ্জার বাড়তি উপাদান হিসেবে প্রকৃতি যোগ করেছে শিশির কনা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মিতালিতে যোগ দেয় শীতের সকালের রাঙা সূর্য। এমনই চিত্র এখন উত্তরবঙ্গের সেরা বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের।
এখন অগ্রহায়ণ মাস। পুরোপুরি শীত আসেনি তবুও যেন মতিহারের সবুজ চত্বরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাকে বরণ করে নিয়েছে। ভোরের সকালে ও সন্ধ্যার পর শিক্ষার্থীদের গায়ে বাহারি শীতের কাপড়, অতিথি পাখির আনাগনা, ভোরের শিউলি, হাসনাহেনা, গোলাপ, গাদার হাজির শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে।
অগ্রহায়ণে পুরোদমে শীত না নামলেও সন্ধ্যে নামার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ঠান্ডার তীব্রতা। গাছের সবুজ পাতাগুলো সজীবতা হারিয়ে মাটিতে ঝরে পড়তে শুরু করেছে। অন্যদিকে বাহারি ফুলে সৌন্দর্যে মুগ্ধ প্রকৃতিপ্রেমীরা। শীতের এই বহুরূপী সৌন্দর্য ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের করে তোলে ভাবুক ও সৃজনশীল। প্রকৃতির সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে কেউ কেউ কবিতা লেখেন, কেউবা হারিয়ে যায় প্রাকৃতির সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে।
নানা রঙের ছটায় রেঙে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ। যেন ফুলের সম্মিলন। একইভাবে রবীন্দ্রবভন, বিজ্ঞান অনুষদের ভভনগুলো, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, কেন্দ্রীয় মসজিদ, ডিনস কমপ্লেক্সের প্রাঙ্গণও ছেয়ে গেছে ফুলের রঙে। এ ছাড়া আবাসিক হলগুলোর ভেতরেও যেন ফুলের মেলা বসেছে। এ ছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণ প্যারিস রোডের শীতলতা আছেই।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৩৮ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। ক্যাম্পাসের চারদিকে এখন শীতের আগমনী আড্ডায় মুখর। অনেকে গিটার হাতে গোল করে বসে গান করে, কেউ কেউ বাদ্যযন্ত্র ছাড়াই খালি গলায় ধরে কোরাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসির সামনে বসেছে পিঠার দোকান। সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে সেখানে শীতের পিঠা খাওয়া। ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, কালাই রুটি, পুলি পিঠা প্রভৃতি। তবে ভাপা পিঠার কদর বেশি। অনেকে বনভোজনের আয়োজন করে ক্যম্পাসের বধ্যভূমি কিংবা শহীদ হবিবুর মাঠের আশেপাশে।
শীত আসার আগেই চলে খেলাধুলার নানা প্রস্তুতি। রাবির মতিহার হল, মাদার বখ্শ হল, শহীদ জিয়াউর রহমান হলের সামনে নওয়াব আবদুল লতিফ হল, আমীর আলী হল ও শাহ মখ্দুম হলের সামনে ছাড়াও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন একাডেমিক ভবনের সামনে এবং খোলা জায়গায় ব্যাডমিন্টন কোর্ট বসিয়েছে। দিনে ও গভীর রাত পর্যন্ত খেলা চলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও ব্যাডমিন্টন খেলে সময় পার করেন।
শীতের আগমনে সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষার্থী মরিয়ম আক্তার বলেন, শীত আমাদের কাছে খুব অল্প সময়ের জন্য আসে। শীতের পাখির মতো শীতও আমাদের কাছে অতিথি। কিন্তু এই অল্প সময়ে শীত প্রকৃতিতে যে সৌন্দর্যের লীলা সৃষ্টি করে তা অতুলনীয়। শীতের স্নিগ্ধ কুয়াশা আমার মনকে মুগ্ধ করে। শীতের আমেজ যেন প্রকৃতিতে নিয়ে আসে সৌন্দর্যের মেলা।
ভালোবাসার ঋতুকে বরণ করতে নানা প্রস্তুতি নিচ্ছেন শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। ক্যম্পাসের গাছপালা, কাঠবিড়ালির দৌড়ঝাঁপ, অতিথি পাখির আগমন শীতকে আরও আকর্ষণীয় করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে।
এসএন