অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও কীটনাশকে বিলুপ্ত হচ্ছে শাপলা
জাতীয় ফুল শাপলা। জলের ওপর ফুটে থাকা শাপলা ফুলের দৃষ্টিকাড়া সৌন্দর্য যেকোনো মানুষকে মুগ্ধ করে। কিন্তু আফসোস! প্রকৃতির বিরূপ প্রভাব, মানব সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতায় বিলুপ্ত হচ্ছে নওগাঁয় মুক্ত বিল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শাপলা ফুল। খাল বিলের জলে আগের মতো ভাসে না জাতীয় ফুল শাপলা।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, ৯৯টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত নওগাঁ জেলা। এ জেলায় রয়েছে অসংখ্য বিল। জবই, রক্তজবা, ছাতরা, হাঁসাইগাড়ি, ঘুটার, মুনসুর ও তালতলীর বিল বৃহত্তর বিল। নগরায়ণ ও আধুনিকায়নসহ আধুনিক কৃষি ও বোরো ধানের চাষ শাপলাকে ক্রমাগত দূরে ঠেলে দিয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন প্রকৃতির জীবন্ত নয়, কংক্রিটের তৈরি শাপলা আর ব্যাজ পদকের প্রতিকি শাপলা দেখেই মনের ক্ষুধা মেটাতে হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক এ. কে এম. মঞ্জুরে মওলা বলেন, ব্যাপক চাহিদা থাকলেও নওগাঁর হাট-বাজার আর গঞ্জে আমাদের প্রিয় সেই শাপলা তেমন একটা দেখা যায় না। আধুনিকায়ন ও দেশের ক্রমবর্ধমান মানুষের পেটের জ্বালা নিবারণে বোরো ধান উৎপাদনের জন্যই শাপলাকে ছেড়ে দিতে হচ্ছে জায়গা। তাই শাপলা প্রজননের অবারিত সেই প্রান্তর এখন আর নেই।
তিনি আরোও বলেন, অনেক গুণে গুণান্বিত আমাদের জাতীয় ফুল শাপলা ভূমিক্ষয় রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া মাছের অভয়ারণ্য গড়ে তোলা ও মাছের খাদ্য সৃষ্টিতে সহায়তা করে থাকে শাপলা। এটি দেশি মাছের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন রঙের শাপলা ফুল শুধু মানুষকে বিমোহিতই নয় উপকারি বা ফসলের বন্ধু পোকার আশ্রয়স্থল হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। বাণিজ্যিকভাবে নয় প্রাকৃতিকভাবেই দেশে শাপলা উৎপাদন হয়।
এ বিষয়ে নওগাঁ সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এনায়েতুস সাকালাইন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তনে আগের মতো সঠিক সময়ে বন্যা হচ্ছে না। এ ছাড়া আবাদি জমিতে অপরিমিত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার প্রয়োগে অনেক শাপলা বীজ বা মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা মা শালুক বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে নতুন করে শাপলার গাছ জন্ম হচ্ছে না। এখন বর্ষাকাল শেষের দিকে বড় বড় বিলগুলোতে কোথাও সেই আগের মতো শাপলা-শালুকের দেখা মেলে না।
এসএন