গল্পের মেলা বসেছে
লেখা ও ছবি : তানভীর আহমেদ, প্রতিনিধি, গণ বিশ্ববিদ্যালয়
উচ্ছ্বাস-আনন্দ, বর্ণিল আয়োজন, অপরূপ বাঙালি সাজে সেজে এসেছেন তারা। আজ যে তাদের অনার্সের শেষ দিন। এরপর অনেকে পড়ালেখা চালিয়ে যাবেন। অনেকে কাজে। এই দিনটিকে বলেন তারা ‘শিক্ষা সমাপনী উৎসব’। দারুণ আয়োজনটি হয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে। আছে সাভারে। তারা পড়েন ফার্মাসি বিভাগে। নামে ‘আমরা ব্যাচ ৩৪’। নিজেদের ব্যাচের শেষ উৎসবে নাম দিয়েছেন ‘শব্দগুচ্ছ’। আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন গণ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাদের অধ্যাপকরা সবাই। ফলে অসাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাগুরুদের প্রতি তাদের কারো কৃতজ্ঞতার কোনো শেষ নেই।
ঠিক এক সপ্তাহ আগে শিক্ষা সমাপনী উৎসব হয়ে গেল শব্দগুচ্ছের। এর পেছনে দিন কয়েকের টানা শ্রম কাছে সবার। বিভাগের ক্লাসরুমগুলোকে সাজানো, ফুল দিয়ে রঙিন করা, প্রজাপতি বানিয়ে টাঙানো-সবই করেছেন এই ছেলে, মেয়েরা অনেক কষ্ট করে। রান্নার আয়োজনও ছাত্রীদের। তাতে মনের কোণে চিরকাল আরো জ্বলজ্বল করে জ্বলবে সবার। কোনোদিনও ভুলতে পারবেন না। বারবার আসবেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে, যখনই অধ্যাপক আর পরিচিতদের সঙ্গে দেখা হবে, মনে পড়বে তাদের, পুরোনো দিনের স্মৃতি। আবার ভালোবাসার কোনো মুহূর্তে ফিরে আসবে ফার্মাসির এই ভালোবাসার ক্ষণগুলো। হাসি, আনন্দ, জীবনের বোধ আর ভালোবাসার সোনালী ক্ষণগুলো।
১৪ মে শনিবার ছেলেরা সবাই সাদা লুঙ্গি আর রঙিন পঞ্জাবি পরে এসেছেন। মেয়েরা আগে থেকে ঠিক করা নীল ব্লাউজ আর সাদা শাড়িতে সেজেছেন অপরূপ হয়ে। একে, একে এসেছেন বিরাট বিশ্ববিদ্যালয় ভবনের নিজেদের বিভাগে। একে অন্যকে ফোন করে ডেকে এনেছেন। ততক্ষণে প্রিয় অধ্যাপকরাও এসে হাজির। সবাইকে নিয়ে কেক কাটা হলো বিরাট। ভাগ করে খেলেন। গল্প হলো দিকে, দিকে।
স্মৃতিচারণের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হলেন ফার্মাসি-গণ বিশ্ববিদ্যালয়, প্রধান অধ্যাপক ড. নিলয় কুমার দে। তবে তারা এর নামটি দিয়েছেন আলোচনানুষ্ঠান। নামেই আলোচনা, আসলে গল্পের মেলা বসেছে। আগামী দিনের জন্য নির্দেশগুলো এসেছে অধ্যাপকদের কাছ থেকে। তখন কারো চোখে জল, অন্য সময় কারো মুখে হাসি। গল্পের কী শেষ আছে এই চার বছরের দারুণ জীবনের।
এরপর সবাই মিলে ভালো খাওয়া। আয়োজনে ছাত্র, ছাত্রীরা। চাঁদা প্রদানে সবাই। অধ্যাপকদের টাকার হার ও দেখাশোনার মান অনন্য। এক কোণে একজন দুজন, অন্য কোনো অনেকে, কেউ, কেউ আবার প্রিয় অধ্যাপকের কাছে। শিক্ষকরা একে, অন্যের সঙ্গে প্রিয় ছাত্র, ছাত্রীদের নিয়ে টুকটাক আলাপ করতে করতে খেয়ে নিলেন। স্মৃতির ভান্ডারে জমা হলো আরো কিছু রত্নভান্ডার। যোগ হলো তাতে অনন্যতা। খাবার নিয়ে আশপাশের গরীব পথচারীদের বাড়তিটুকু বিলিয়ে দিলেন তারা। তারও আগে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের প্রিয় মামাদের উপহার দিলেন নিজেদের খাবারের ভাগ। তারা করলেন দোয়া। হলো আজীবনের আর্শীবাদ।
এরপর সাংবাদিকতা। এই লেখক আবার গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা সাংবাদিক সমিতির সভাপতি। তানভীর বললে একনামে চেনেন সবাই। কত যে লেখেন তারা-কোনো ইয়াত্তা নেই। তিনি চলে গেলেন খবর নিতে কেমন কেন পোশাক, মিলিয়ে কেন সবাই? কেন ঢাকাইয়া সাজ? হিন্দি সিনেমার আদল? উত্তরটি এলো দারুণ চমৎকার-‘মিলিয়ে পড়লে দেখতে লাগে ভালো। রুচির প্রকাশ ঘটে। ছাপ থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের।’ আবার এলো চমৎকার উত্তর-‘একজন এক রকম, আরেকজন আরেকরকমের চেয়ে এই ভালো নয় কী?’ বলা হলো এই আলাপে জ্ঞানী বাক্য-‘অসংবেদনশীল পোশাক-আশাক, অতিমাত্রায় অশ্লীলতায় যদি কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা সমাপনী পালন করা হয়, তবে সেটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটে।’ আরেকটি ভাবনা হলো-‘গুরুত্বপূর্ণ দিনটিতে হাসি-আনন্দের সঙ্গে কাটানো সবাই মিলে ভালো হয়।’ মনে রাখার মতো কথা প্রতিটিই। পালনীয়ও বটে।
শেষে গানের আসর। গাইলেন তারা, তারাই। কফি হাউজের এই আড্ডাটা, আগে যদি জানতাম, বন্ধু তিনদিন তোর বাড়ি গেলাম, চলতি পথে জাদুকর ভালোবাসা গানগুলো মন ছুঁয়ে গেল চিরপরিচিত কন্ঠে, চার বছরের টানা ভালোবাসায়। এর মধ্যে নাচ-বান্ধবীদের, অভিনয়, আবৃত্তি সবই ছিল। বরাবরের মতো ছাত্র, ছাত্রীদের সাফল্যে চমকে গেলেন, খুব খুশি হলেন অধ্যাপকরা। মন ভরে দোয়া করলেন তাদের আগামীর সুন্দরের জন্য।
ওএস।