প্রবালের পরানে ‘সন্ধানী’
গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের এমবিএসের ছাত্র শাহ পরান ইসলাম প্রবাল ২০১৭ থেকে ২০১৮ সাল মেডিক্যাল ও ডেন্টালের সব ছাত্র, ছাত্রীদের প্রধান সংগঠন ‘সন্ধানী’র ‘কেন্দ্রীয় কমিটি’র সভাপতি ছিলেন। এখন ‘সন্ধানী কেন্দ্রীয় পরিষদ’র উপদেষ্টা। তার সেবাজীবনের গল্প লিখেছেন একই মেডিক্যালের সাবেক ছাত্র ও কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা ডা. মনির হোসেন শিমুল
পুরোনো ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের সেন্ট গ্রেগরিজ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২০১০ সালে বিজ্ঞানে এসএসসি। ঢাকা ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে ২০১২ তে এইচএসসি। দুটোতেই ‘জিপিএ ৫’। শাহ পরান ইসলাম প্রবাল কেবল ভালো ছাত্রই নন, একজন দারুণ সংগঠক। খুব ভালো এক খুদে বিজ্ঞানী। ২০০৬ সালে, সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় বানিয়েছেন বিজ্ঞানের প্রতিযোগিতার জন্য ‘সোলার অ্যানার্জি প্রজেক্ট’ বা ‘সৌরচালিত যন্ত্র’। সেটি তাকে প্রথম পুরস্কার এনে দিয়েছে গ্রেগরিয়ানদের মধ্যে। এখানে এসেই বাস্কেটবলের প্রতি ভালোবাসা হলো প্রবালের। খুব ভালো খেলোয়াড় ছিলেন। অষ্টম শ্রেণীতে তার দল বাস্কেটবলে পুরো স্কুলে সবার সেরা হয়েছে। তার মধ্যে সংগঠকের সত্তা তৈরি হলো। ফলে ২০০৯ সালে শিক্ষকদের নিয়ে আয়োজন করেছেন ১৮৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত খৃস্টান মিশনারিদের এই নামকরা, নটরডেম কলেজের আঁতুড়ঘর, গেগ্ররিয়ানদের স্কুল-কলেজের বিখ্যাত সায়েন্স ক্লাবের ইতিহাসের প্রথম ‘ইন্টার স্কুল অ্যান্ড কলেজ সায়েন্স ফেয়ার’।
ঢাকা ও সারাদেশের নামকরা ১৫টি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়কে নিয়ে মেলাটি করেছিলেন তারা ২০০৯ সালের মাচে। প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অনেক শ্রম দিয়ে পালন করেছেন তিনি। সেবারের নটরডেম কলেজ সায়েন্স ক্লাবের সায়েন্স ফেয়ারে তার সেই ‘সোলার অ্যানার্জি প্রজেক্ট’ এনে দিয়ে প্রথম পুরস্কার। এসেছিলেন হলিক্রস, মতিঝিল সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের খুদে বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞানপ্রেমী নানা বয়সের ছাত্র, ছাত্রীরাও। তার আরেকটি প্রকল্প গ্লেবাল ওয়ার্মিং প্রজেক্ট’ পুরস্কার এনে দিয়েছে ঘরে। বিজ্ঞানের প্রতি এই ভালোবাসা ও সংগঠকের প্রেরণায় ঢাকা ইম্পিরিয়াল কলেজে পড়ার সময় বিজ্ঞান ক্লাব ও ‘ইম্পিরিয়াল তার্কিক সভা’র সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন প্রবাল।
তিনি পড়েছেন বাংলাদেশের অন্যতম বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিক্যাল কলেজে। ভর্তি ২০১৩ সাল। ছোটবেলা থেকেই ভালো ছাত্রটি ‘এমবিবিএস প্রথম’ ও ‘দ্বিতীয় পেশাগত পরীক্ষা’য় পুরো মেডিক্যাল কলেজের সব ছাত্র, ছাত্রীদের মধ্যে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়েছেন। ফলে অলাভজনক এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে লাভ করেছেন ‘সামির-সুফিয়া মেধাবৃত্তি’। তারপর চাকরি জীবনের শুরু করেছেন মানবসেবার দীক্ষা নিতে তাদের গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিক্যাল হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে। এরপর বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জন (বিসিপিএস) থেকে ‘এফসিপিএস পার্ট-১’ পাশ করেছেন। এখন এসআইবিএল (সাউথ ইস্ট ব্যাংক) ফাউন্ডেশন হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে কর্মরত। হাসিমুখে প্রবাল জানালেন, সন্ধানী কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা ডা. মনির হোসেন শিমুলকে, ‘১ জুলাই থেকে আমি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এফসিপিএস প্রশিক্ষণে যোগদান করব। এরপর পাশ।’
অসাধারণ মেধাবী ছাত্রটি সাভারের মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অন্যতম পরিচিত ও প্রিয়। তিনি যে সন্ধানীর অন্যতম কেন্দ্র এই ক্যাম্পাসের দারুণ কর্মী। বিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই তো সন্ধানী সম্পর্কে জানলেন। এর কারণ হলো, রক্তের প্রয়োজন। টিভিতে হুমায়ূন আহমেদের নাটক ও বিজ্ঞাপন এবং বিজ্ঞানের প্রতি তাদের বিদ্যালয়ের ফাদারদের দারুণ ভালোবাসা। মা, বাবার আগ্রহও ছিল খুব ছেলে ডাক্তার হবে। মনে পড়ে, ‘আমারে রক্ত দিব কে’-এই বিটিভি বিজ্ঞাপনে হুমায়ূন জানালেন, সন্ধানী নামের মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র, ছাত্রীদের দারুণ কার্যকর বিরাট স্বেচ্ছাসেবী এক সংগঠন আছে। যারা ছাত্র, শিক্ষকের চাঁদায় চলেন। ফলে একবার বইমেলাতে গিয়ে কাউকে না জানিয়ে চুপি, চুপি রক্তদান করে এলেন। পরে তো মা শুনে অবাক। অসাধারণ মেধাবী এই ছেলেটির বাবা মোটে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময় মারা গিয়েছেন। সারাজীবন তাকে বাবা হারানোর কষ্ট বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।
ভর্তির পরপরই গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ‘সন্ধানী ইউনিট’-এ নাম লেখালেন। তাদের আলাদা রুম আছে। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কল্যাণে পাওয়া। সেখানেই কাজের শুরু হলো আগামীর এই নায়কের। ক্লাসের অবসরে, আড্ডার ফাঁকে চলে আসতেন সন্ধানীর রুমে। সিনিয়র বড় ভাই, আপুরা ধীরে, ধীরে তাকে তৈরি করতে লাগলেন। জানালেন, ‘সন্ধানী আসলে মানুষকে স্বেচ্ছায় বিনামূল্যে জরুরী প্রয়োজনে অসহায়ের পাশে দাঁড়ায়। রক্তদান আমাদের প্রধান কাজ। দুর্গতদের সেবা করা আরেকটি কম।’ রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করতে কাজ করতে লাগলেন প্রবাল। জানালেন, কত বড় প্রতিষ্ঠান এই অলাভজনক স্বেচ্ছাশ্রম। সন্ধানীর আছে মূল কেন্দ্রীয় পরিষদ, রয়েছে কেন্দ্রীয় রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র। সারা দেশের সবগুলো মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এবং ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতালে গড়ে তুলেছেন তারা ইউনিট। আছে অনেকগুলোতে ডোনার ক্লাব। তারা সবাই সবার রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, রক্ত সংগ্রহ, সরবরাহ, টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করেন। প্রবালরা গড়ে তুলেছেন ‘সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান কার্যক্রম ও সমিতি’ ও ‘সন্ধানী আন্তর্জাতিক চক্ষু ব্যাংক’। এই ব্যাংক দুটিতে চোখের মণি বা কর্নিয়া সংগ্রহ করেন তারা। অসহায়ের চোখে প্রতিস্থাপন করে দেন বিনাখরচে।
সন্ধানীর আছে ওষুধ সংগ্রহকেন্দ্র ‘সন্ধানী ড্রাগ ব্যাংক’। ব্যাংকটির ওষুধগুলোর বিরাট ভান্ডারটি চিকিৎসকের দুয়ারে ঘুরে, ঘুরে জোগাড় করেন সবাই। সন্ধানীর মাধ্যমে গরীব ও অসহায়দের ফ্রি প্রেসক্রিপশনের পর উপহার দেন। এর বাদেও ‘বিশ্ব উচ্চরক্তচাপ দিবস’, দারুণ পরিচিত ‘থ্যালাসেমিয়া’, ‘ক্যান্সার’, ‘মাদকবিরোধী’, ‘ডায়াবেটিস’ ইত্যাদি দিবসগুলো সারা দেশের মানুষের কাছে পরিচিত ও প্রাথমিক চিকিৎসা জানানো এবং দেবার কৃতিত্ব এই ছেলে, মেয়েদের।
সন্ধানী যেকোনো এলাকার যেকোনো দুর্যোগ ও রোগে, শোকে মানুষের পাশে থাকে কোনো প্রতিদান ছাড়া। মানবিক কাজে সন্ধানীয়ানরা সবার সেরা। ডা. শাহ পরাণ ইসলাম প্রবাল গর্বের সঙ্গে বলেছেন, ‘যেকোনো কষ্টে আমরা সদা প্রস্তুত।’ এই জীবনের খাতায় অনেক গল্প জমে আছে তার-“বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির মাস কয় পরেই গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সাভারের প্রধান হাসপাতালে আমার নামটি উঠলো রক্তদাতা সন্ধানীয়ান হিসেবে। আমাদের সবার ফোন নাম্বারগুলো হাসপাতালটির নোটিশ বোর্ডগুলো সাঁটিয়ে দিলাম সবাই মিলে। যেহেতু নিজেদের কাছ আমাদেরই করতে হয়। নানা ধরণের রোগে আক্রান্ত রোগীদের অত্মীয়রা আমাদের বেশিরভাগ সময় মোবাইলে ফোন করেছেন। রাতে রোগ বাড়ে বলে তখনই ফোন বেশি এসেছে। আমাকে অন্যদের চেয়ে বেশিই কাজ করতে হয়েছে। এর বাদেও নানা ব্লাড ব্যাংকের রক্তদাতাদের স্বেচ্ছায় রক্তদানের জন্য জরুরীভিত্তিতে কাজ করে দিতে হয়েছে। রক্ত দিয়েছি। এভাবেই ২০১৪ সালে ’১৪-’১৫ শিক্ষাবর্ষে আমাদের মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ‘যুগ্ম রোগী কল্যাণ সম্পাদক’, এরপরের বছর আরো ভালো কাজ করে সম্পাদক ও তার পরের বছর সহ-সাধারণ সবার মতামত ও ভোটের ভিত্তিতে নির্বাচন করা হলো আমাকে।”
২০১৭ সালের এপ্রিলে হলো সারাদেশের সব মেডিক্যাল এবং ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতালের সন্ধানীয়ানদের মিলনমেলা ‘৩৬তম বার্ষিক কেন্দ্রীয় সম্মেলন’। খুব কাজ করেছেন বলে দিন তারিখ স্পষ্ট জানালেন তিনি সহযাত্রীকে, “এবারই আমাকে ২০১৭-’১৮ শিক্ষাবর্ষের সবার ঐক্যমতের ভিত্তিতে ‘সন্ধানী কেন্দ্রীয় পরিষদ সভাপতি’ নির্বাচিত করা হলো। সাভারের একটি মেডিক্যাল কলেজ থেকে সন্ধানীর সেরা হওয়া মোটেও কম কথা নয়।”
এরপর সিনিয়র, জুনিয়রদের নিয়ে কাজ শুরু করলেন প্রবাল। ‘শিক্ষকদের সহযোগিতাও অনেক পেয়েছি’-হাসিমুখে বললেন। জানালেন, “আমার সাধারণ ও সাংগঠনিক সম্পাদককে নিয়ে সবার সাহায্যে সারা দেশের মানুষের কাছে মেডিক্যাল কলেজগুলোর মাধ্যমে আমাদের ছাত্র, ছাত্রীদের দান করা রক্তের ভান্ডার আরো সহজলভ্য করতে কাজ শুরু করলাম। সেকাজে অনেকটাই সফল হয়েছি। আমাদের বড় অর্জন ‘সন্ধানী কেন্দ্রীয় রক্ত পরিসঞ্চল কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা। সেজন্য কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামন্ডলীর সঙ্গে বহুবার তাদের মূল্যবান সময় নিতে হয়েছে।” জানাতে ভুললেন না, ‘আমাদের অন্যতম উপদেষ্টা হলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সাবেক ছাত্রী এবং সন্ধানীর আজীবনের কমী শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মণি। তাদের পরামর্শে, চেষ্টায়, আমাদের শ্রমে ২০১৮ সালের ১৬ এপ্রিল স্বপ্নের রক্ত পরিসঞ্চল কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হলো। আছে ঢাকার নীলক্ষেতের সন্ধানী ভবনে। এই ভবনটিও আমাদের নতুন, পুরোনোদের, দেশ-বিদেশের সন্ধানীয়ানদের দানের টাকায় গড়া।’
কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে ‘সন্ধানীয়ান’ ডা. শাহ পরান ইসলাম প্রবালের আরেকটি কীর্তি, ফেসবুকের মাধ্যমে রক্তদানের জন্য আবেদন সংগ্রহ ও রেজিস্টার্ড রক্তদাতাদের কাছে সঙ্গে, সঙ্গে পৌঁছানো। এই পেইজটিতে এত লাইক, সদস্য ও ভিউ আছে যে, ফেসবুক ভেরিফাইড করে দিয়েছে।
তারা গড়েছেন ‘মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন রক্তকরবী’। এটি রক্তের চাহিদা জানানো ও নিবন্ধনের ফ্রি অ্যাপলিকেশন বা মোবাইল অ্যাপ। গুগল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করে যেকেউ ব্যবহার করতে পারেন। তবে নিজেকে নিবন্ধিত হতে হবে।
তারা তৈরি করেছেন ‘রোজা রেখে রক্ত দেওয়া জায়েজ?’ নামের একটি ইসলামিক প্রামাণ্যচিত্র। তাতে বাংলাদেশের বরেণ্য হাফেজ, মুফতি ও মাওলানারা অংশ নিয়েছেন। যখনই শুনেছেন, বিনা খরচে মেডিক্যালের ছাত্র, ছাত্রীরা রক্ত দেন। সারা দেশের অসহায় মানুষকে রক্ত সংগ্রহ করে বাঁচিয়ে চলেন-তারা কেউ আর না করেননি। বিনা খরচে অংশ নিয়েছেন। আছে ইউটিউবে ও সন্ধানীর ফেসবুক পেইজে।
পেছনে ফেলে আসা সোনালী জীবন নিয়ে সন্ধানী কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. শাহ পরান ইসলাম প্রবাল বলেছেন, ‘আমরা ও আমি সবসময়ই একটি পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করেছি সন্ধানীতে। আগামীতে সন্ধানী রক্তদান নিয়ে নানাভাবে কাজ করতে পারবে, গবেষণামূলক নানা কর্ম সম্পাদন করবে, গবেষণাপত্রগুলো প্রকাশ করবে। সেই ভিত গড়ে দিয়েছি।’
এরপর জানালেন, ‘আমার সন্ধানী একদল আরো দক্ষ, মানবিক ও যোগ্য কর্মীকে গড়ে তুলবে, যারা চিকিৎসক হিসেবেও খুব ভালো করবেন। সামাজিক কাজগুলোতে সন্ধানীয়ানদের আরো প্রশ্নাতীত অবদান থাকবে। আগামী দিনের জন্য আমি একটি গোছানো, কার্যকর সন্ধানী রেখে গেলাম।’
এমবিবিএসে পড়ালেখার প্রচন্ড চাপ থাকে। ইংরেজি মাধ্যমে পড়তে হয়। মুখস্ত বিদ্যা, সৃজনশীলতার অসামান্য ভুবন চিকিৎসাবিদ্যা। কীভাবে পাঁচটি বছর কাজ করে গিয়েছেন একটানা? ‘ভিত গড়ে দিয়েছে ইংরেজির সেন্ট গ্রেগরি। আমাদের গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল নিকট অতীতে অনেক দারুণ সন্ধানীয়ানের জন্ম দিয়েছে। মেডিক্যাল কলেজটি পুরোপুরি অন্যরকম। আর আমাদের নিবেদনের তুলনা করবেন আগামী দিনের কর্মীরা।’
এরপর বলেছেন, ‘এমবিএস পাশের বছর, ফাইনাল ইয়ারে আমি নিয়মানুসারে সন্ধানীর প্রেসিডেন্ট হয়েছি। ফলে চ্যালেঞ্জ নিতে হয়েছে। কেননা, এই বছরটিই গুণী অধ্যাপকদের লেকচার ক্লাস, ওয়ার্ড ক্লাস, ব্লক ফাইনাল দেওয়া, প্রচুর পড়ালেখাতে ডুবে থাকে। সাভারে থাকি বলে অনেকটা সুবিধা পেয়েছি। তাতে সময় পেয়েছি নিজেদের জগতে। সেখানে কাজ করেছি আমাদের শিক্ষক-সহকর্মীদের নিয়ে। এর বাদে আমার জীবনের প্রথম থেকেই ছাত্র হিসেবে পড়ালেখা করা প্রধান কর্তব্য-এই নীতিটি অনুসরণ করে অনেকটাই এগিয়ে থেকেছি। অন্যদের বলবো, এটি ফলো করো। অবসর ও অতিরিক্ত সময়ে সন্ধানীতে আসো।’
শিমুলকে বিশেষ ধন্যবাদ দিয়েছেন ‘সন্ধানী’র জন্য একটি পুরো পাতা করে দেওয়ায়। এটি ইতিহাসে প্রথম ও সেরা। এরপর সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রীয় কমিটি রিদওয়ান জুবায়ের রিয়াদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান সিদ্দিকীকে ভালোবাসা জানালেন। বলেছেন, তাদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি, ‘আমার সঙ্গে সব কাজে ওরা সবাই কাঁধ মিলিয়ে থাকায় কোনোদিনই চাপ অনুভব করিনি।’
এখন ডা. শাহ পরান ইসলাম প্রবাল ‘সন্ধানী কেন্দ্রীয় পরিষদ’র উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। কেন্দ্রীয় পরিষদের সদস্য, বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের ইউনিট ও মেডিক্যাল এবং ডেন্টালের স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে কাজ করেন তাদের সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে তিনি বরাবরের মতো সৎ ও দায়িত্ববান চিকিৎসক। এই সুনামও তার জীবনের অন্যতম পাথেয়। বলেছেন লাজুক হেসে, ‘রোগীর আত্মীয় ও রোগী নিজে আমার ওপর আস্থা রাখছেন বলে ভালো লাগছে। তাদের মাধ্যমেও নিজেকে গড়ে তুলছি। সন্ধানী আমাকে সাংগঠনিক বানিয়েছে, সাধারণের কাছে নিয়ে গিয়েছে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। সেবা পরম ধর্ম শিখিয়ে দিচ্ছেন রোগীরা।’
তবে ছেলের এত সাফল্য দেখে যেতে পারলেন না বাবা শফিকুল ইসলাম। তিনি ও কামরুন নাহারের তিন ছেলে, মেয়ের দ্বিতীয় প্রবাল। তাকে ওপর থেকে নিশ্চয় দোয়া করে চলেন বাবা।
ওএস।