নেত্রকোনায় মুখলেসের ২১০ রকমের চা

চা- খুব সুস্বাদু কোনো পানীয় নয়। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো এটি ছাড়া খুব কম মানুষই চলতে পারে। কারো কারো সকালে ঘুম ভাঙার পর দিনের শুরু হয় চায়ে চুমুক দিয়ে। অফিসে কাজের চাপ হালকা করতে এক কাপ চা অনেকটা মুশকিল আসানের মতো কাজ করে। সারা দিনের ক্লান্তি শেষে এক চা অমৃতের মতো মনে হয়। কিন্তু কালের আবর্তে চায়ের মৌলিকত্ব খানিকটা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে হরেক রকম ভেষজ ও মশলা চায়ের সঙ্গে যোগ করতে শুরু করেছেন দোকানিরা।
নেত্রকোনার মুখলেস উদ্দিন তৈরি করেন ২১০ রকম চা। পুদিনা পাতার চা যেমন আছে, তেমনি আছে হরীতকীর চা। আছে তেঁতুলের চা, বহেরার চা, থানকুনিপাতা, বাসকপাতা,ঝাল চা। তিতকুটে স্বাদের চিরতা দিয়েও চা বানান তিনি। জনপ্রিয় চা তৈরিতে সিদ্ধহস্ত মুখলেস উদ্দিন। ষাটোর্ধ্ব এ দোকানির বাসা নেত্রকোনা জেলা শহরের মুক্তারপাড়ায়।
তিনি ফুটপাতে বসতেন, বানাতেন ৬০ পদের চা। ফুটপাত ছেড়ে দোকানে উঠেছেন এখন। মুক্তারপাড়ায় তার দোকান। নাম দিয়েছেন ‘কবি মামার চা’। একসময় লেখালেখি করতেন। গ্রাহকেরাই ভালোবেসে তার দোকানের এ নাম দিয়েছেন। কবি কবি ভাব নিয়ে চলেন হেলেদুলে।
এ দোকানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অগণিত মানুষ এসে চা পান করেন। ‘দুই থেকে আড়াইশ মানুষ তো রোজ আসেই। তারারে দেইখ্যাই চিনি। কে কোন চা খায়, দেখলেই কইতাম পারি। বইয়া (বসে) ইশারা দিলেই অয়। তবে কুনু কুনু দিন মিটিং-টিটিং থাকলে পাঁচ থেকে সাতশ কাপ চা-ও বেচা অয়’, বললেন মুখলেস।
মুখলেস উদ্দিনের দোকানে সবই ‘সেলফ সার্ভিস’। কারণ, তিনি একাই সব সামলান। কোনো কর্মচারী আগেও ছিল না, এখনও নেই। কর্মচারী না রাখার যুক্তি হচ্ছে, শত শত মসলা ও ওষুধিগাছের মিশ্রণে চা বানান তিনি। প্রতিটারই আলাদা আলাদা পরিমাণ আছে। একটু হেরফের হলেই পানীয়টি বিষে পরিণত হতে পারে। ফলে কোনো কর্মচারী নেন না।
কয়েক বছরে জীবনে অনেক কিছু পাল্টে গেছে মুখলেসের। ফুটপাত ছেড়ে শুধু দোকানেই ওঠেননি, বাড়ির টিনের ঘর এখন দুইতলা ভবন। বড় ছেলে এবার এসএসসি দেবে। ছোট মেয়ে পড়ে মাদ্রাসায়। তবে করোনা দুই বছর ভীষণ ভুগিয়েছে তাকে। দোকান বন্ধ ছিল একদম। কথা বলতে বলতেই লাচ্ছি বানিয়ে দিলেন একটা। সাধারণ লাচ্ছির চেয়ে স্বাদে ও গুণে একেবারেই আলাদা।
তবে অনুষ্ঠানে চা দিতে চাইলে ২/৩ দিন আগে অর্ডার দিতে হবে। ইচ্ছে করলেই সঙ্গে সঙ্গে বাইরে চা সরবরাহ করা সম্ভব নয়। কিছু লোক নিয়মিত আসেন এখানে। বড় বড় শহরেও এ চা পাওয়া যায় না। তবে তিনি কোনো প্রশিক্ষণ নেননি। বড় বড় কর্মকর্তা, নেতা ও বিশিষ্টজনরাও এখানে আসেন।
দোকানের চা খেতে আসা শিক্ষক মনোরঞ্জন সরকার বলেন, এমন স্বাদের চা আর কোথাও নেই। উনার আচরণও ভালো। সবাই তাকে পছন্দ করেন। কেউ উনার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন না। সত্যি মুখলেস ভাইয়ের চা যেমন, মানুষও তেমন।
এসএন
