চমকে দিলো প্রতিবন্ধীয় আক্রান্ত শিশুরা
রাজধানী ঢাকা থেকে বহু দূরের এক জেলা নাটোর। বনলতা সেনের নাটোরের কথা কে বা ভুলতে পারেন? ‘এতদিন কোথায় ছিলেন’-কবিকে প্রশ্ন করেছিলেন পাখির বাসার মতো দুটি চোখের অনিন্দ্য সুন্দরী। এই নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার ধানাইদহ গ্রামে আছে একটি প্রতিবন্ধীতায় আক্রান্তদের বিশেষ স্কুল। নাম হলো ‘ধানাইদহ হক অটিস্টিক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়’। বিদ্যালয়টি খুব ভালো। একটি গ্রামে আশপাশের, কাছে দূরের নানা ধরণের প্রতিবন্ধীতাসহ বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতায় আক্রান্তদের জন্য বিদ্যালয় চালু ও শিক্ষাদানের অনন্য উদ্যোগ।
সারা বছর এই ছাত্র, ছাত্রীরা বিদ্যালয়টির মাধ্যমে অনেককিছু শিখতে পারে। তারা ছবি আঁকতে পারে, গল্প বলতে পারে। লিখতে ও পড়তে জানে। ভালো মানুষ হবার স্বপ্ন দেখে।
প্রতিদিন সকাল সাড়ে নয়টায় তাদের বিদ্যালয়ের বিশাল মাঠে খেলার আসর বসে। খেলার মাধ্যমে শেখে তারা। আছে অংক দৌড়, হাতি ওড়ে, পাখি ওড়ে খেলা। বর্ণ দৌড় খেলায় নিয়মিত বাংলা বর্ণমালা ও অক্ষরগুলো চেনে নেয় সবাই।
আলু কুড়ানো খেলায় গরীব মা, বাবার জীবনের সহযোগী হয় তারা। তাতে সামাজিকীরণ ঘটে।
খেলে বিস্কুট দৌড়। তাতে খিদের চাহিদা মেটে। বাড়ন্ত হয় তারা।
এবারের স্বাধীনতা দিবস ২৬ মাচ তাদের বিদ্যালয়ে খেলাগুলো খেলেছে তারা। চমকে দিয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের দুই বীর সেনাকে। তারা এসেছিলেন অতিথি হয়ে। নামগুলো বলা হয়নি এই লেখাটি যিনি পাঠিয়েছেন তার লেখাতে। অবশ্য ওরা তাদের নাম বড় হয়ে লিখে দেবে।
স্বাধীনতা যুদ্ধের নায়করা তাদের নিয়ে রক্তে কেনা তাদের বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছেন ধানাইদহ হক অটিস্টিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে। তখন ঘড়িতে ঠিক সাড়ে আটটা বাজে। এভাবেই সময়ের সঙ্গে চলে তারা আগামী দিনের যোগ্য নাগরিক হয়ে উঠছে সবাই।
এই সময় ও পুরো আয়োজন দেখতে একমাত্র প্রতিবন্ধীতায় আক্রান্ত শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে স্বাধীনতা দিবসে এসেছেন মোট ১৮টি গ্রামের গণমান্য ব্যক্তি, অতিথি ও সমাজসেবক এবং তাদের অভিভাবকরা।
এরপর তাদের ও আশপাশের মানুষদের ফ্রি মেডিক্যাল চেকআপ, রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করেছেন বিনা খরচে জাহেদা হাসপাতাল। তাতে অংশ নিয়েছেন অন্যতম অতিথি
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের জরুরী চিকিৎসা সেবা বিভাগের অফিসার চিকিৎসক ডা. জাহিদুর রহমান। তারপর শিশুদের নিয়মিত ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ। পুরস্কার পেয়ে শিশু-কিশোর-কিশোরীদের মুখে হাসি ধরে না। শিক্ষকরাও সবার সামনে ছেলেমেয়েদের এমনসব অর্জনে খুব খুশি হয়েছেন। ছাত্র, ছাত্রীরা সবাই নিজে থেকে খেলাধুলা ও বিদ্যালয়ের সবগুলো আয়োজনে অংশ নিয়ে মা-বাবা, ভাই, বোন, আত্মীয়দের গর্বিত করেছেন।
তারপর আলোচনা সভা হয়েছে। প্রধান অতিথি ছিলেন সোহেল রানা, সমাজসেবা অফিসার বড়াইগ্রাম উপজেলা, নাটোর। বিশেষ অতিথি হিসেবে বলেছেন শামসুজ্জোহা, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, ৪ নম্বর ইউনিয়ন পরিষদ, বড়াইগ্রাম। আরো ছিলেন ভার্চুয়াল মার্কেট সলিউশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান। তিনি তার প্রতিষ্ঠান থেকে বিদ্যালয়টিকে অনুদান দিয়েছেন ও ভষিষ্যতে আরো সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মাহফুজুল এই আয়োজনের অন্যতম অতিথি ছিলেন।
উপস্থাপনা করেছেন অন্যতম শিক্ষক এ.কে.এম. লুৎফুল হক।
(ছবিটি প্রতীকী)
ওএস।