শিব-হরির প্রথম ছবি ‘সিলসিলা'
ভারতীয় হিন্দি ছবির সুরের, সঙ্গীতের আর গানের ভুবনে অনন্য এক নাম সিলসিলা। বক্স অফিসে ১৯৮১ সালের ছবিটি মোটে ৩৫ মিলিয়ন রূপী ব্যবসা করেছে। এই ছবির গানগুলোর গল্প লিখেছেন ওমর শাহেদ
১৯৮১ সালে কিংবদন্তী চলচ্চিত্র পরিচালক যশ চোপড়া তার দেশের বিশ্বখ্যাত ‘সন্তুর’ বাদক ও বাঁশিওলা ‘পন্ডিত শিবকুমার শর্মা’ ও ‘পন্ডিত হরি প্রসাদ চৌরাসিয়া’কে ভালোবেসে ‘শিব-হরি’ জুটি নামে ডাকলেন। এই তাদের নাম হলো। তিনি তাদের তার ‘সিলসিলা’ ছবির জন্য সঙ্গীত তৈরি করতে প্রস্তাব দিলেন। এই শুরু হিন্দি ছবিতে শিব কুমার শর্মা ও পন্ডিত হরি প্রসাদ চৌরাসিয়ার অনন্য বাদন ও সঙ্গীতজ্ঞের অসাধারণ জীবনের। এরপর ১৯৮০ ও ১৯৯০’র দশকে পন্ডিত শিবকুমার শর্মা ও পন্ডিত হরি প্রসাদ চৌরাসিয়া হিন্দি ছবিগুলোর জন্য তাদের জনপ্রিয় সুরগুলো তৈরি করেছেন। তারা সন্তুর বাজিয়েছেন, বাঁশি বাজিয়েছেন। সঙ্গীত পরিচালক হয়ে কাজ করেছেন ‘চাঁদনী’, ‘দ্বার’, লামহের মতো ছবিতে। আরো অনেক ছবিতে চিরসবুজ গানগুলো বেছে সঙ্গীত পরিচালনায় সেগুলোকে চিরস্থায়ী করেছেন।
তবে শুরুতে অনেক গঞ্জনা সইতে হয়েছে তাদের। এই বিষয়ে পন্ডিত শিবকুমার বলেছেন, “আমার মনে পড়ে, শুরুতে হিন্দি ছবিতে ক্লাসিক্যাল মিউজিক বা উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতকে নিয়ে আসায় আমাদের সারা দেশের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পীদের অনেক বেশি সমালোচনা সইতে হয়েছে। লোকেরাও জিজ্ঞেস করতেন, ‘টাকার জন্য কেন ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত, শিল্পকলাকে আমরা দুজনে এভাবে পরিবেশন করে যাচ্ছি?’ ফলে বুঝতে পারলাম এর কারণগুলোর পক্ষে আমাদের দাঁড়াতে হবে, সবাইকে জানাতে হবে। ফলে অনেক সেশন কাটালাম সিলসিলা ছবির দৃশ্য, লোকেশন, গল্প নিয়ে। যশরাজজির সঙ্গে আলোচনায় অনেকটা সময় গেল। তিনি আমাদের চিত্রনাট্যটিও দিলেন। দুজনেই খুব মনোযোগ দিয়ে পড়লাম।”
এরপর কাজ শুরু করলেন পন্ডিত শিবকুমার শমা-সন্তুরের জাদুকর ও বিশ্বখ্যাত বংশীবাদক পন্ডিত হরি প্রসাদ চৌরাসিয়া। এই ছবির অসাধারণ সুন্দর গানগুলো অমিতাভ বচ্চন, রেখা, জয়া বচ্চন, শশী ও সঞ্জীব কাপুরকে যশ, খ্যাতি এবং সাফল্য দিয়েছে। তারা সবাই অনন্য, অন্য ধারার গানগুলোর জন্য আরো বিখ্যাত হয়েছেন। যেমন একটি সুপারহিট গান হলো-‘রঙ বারসে’। রেখা ও অমিতাভ, জয়া বচ্চন ও সঞ্জীব কাপুর অভিনয় করেছেন। গেয়েছেন লতা মুঙ্গেশকর ও অমিতাভ। আরেকটি সুপারহিট-নীল আসমান সো গায়া’। গানটি রেখা লতা মুঙ্গেশকরের কণ্ঠে অভিনয় করেছেন। এই ছবিটির সুরগুলো অবিশ্বাস্য।
সিলসিলার জন্য নিজের কাব্য প্রতিভা দিয়ে হরি প্রসাদ চৌরাসিয়া আবার তৈরি করেছেন ‘ইয়ে কান আ গায়ে হাম।’
‘নীল আসমান সো গায়া’ নিয়ে বিশ্বখ্যাত বাঁশীবাদক বলেছেন, ‘আমি টিউনের সুরটিকে পছন্দ করেছিলাম, আমার ভালো লেগেছিল। আমাদের জন্য গানটি লতাজিতে গাইতে বলেছিলাম। গানটিতে একটি পূর্ণ ছবির গানে অন্যগুলোর মতো তৈরি করতে বলেছি।’ এই গানের শুরুতেই আছে পন্ডিত শিব কুমার শর্মার সন্তুর বাদন! এটি বিখ্যাত রং বারসে গানটির আগে ছবিতে যুক্ত করার কথা ছিল। এখানেও আছে। শিব-হরি জুটি এর আগে চেয়েছিলেন, এটি একটি হরি গান গাওয়া হোক। ফলে হরি প্রসাদ আবার সংগ্রহ করলেন, ‘আহমেদাবাদ কা হায়, উসে গাভা দিয়া, জায়সে গালে মে হাত ডাল কে।’ তবে যশরাজ গানটি অমিতাভকে দিয়ে গাইয়ে চমকে দেবেন বলে আরো ভেবে চাইলেন, অমিতাভের বাবা হরিবংশীরাই বচ্চন তার ছেলের জন্য গানটি লিখুন। তবে ভারতের এই বিখ্যাত কবি তখন মুম্বাইতে। তাকে টেলিফোন করা হলো। মোটে এক ঘন্টার মধ্যে ছেলের জন্য রং বারসে লিখে দিলেন হরিবংশী রাই বচ্চন। ‘তিনি এত অল্প সময়ে লেখার কারণ হলো উত্তর প্রদেশের প্রত্যন্ত এলাকার একজন গীতিকবির লেখা গান থেকে এটিকে রূপান্তর করেছিলেন। প্রায় কোনো মুহূর্তই নষ্ট করেননি, যখন তার ছেলে গানটি গাইবেন জানলেন’-স্মৃতির জানালা খুলে জানিয়েছেন চৌরাসিয়া। ‘গানটির অনুশীলনে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় নিয়েছেন তার ছেলে ‘বিগ বি’।” খুব ভালোভাবে অনুশীলন করেছেন। ভালো করে গাওয়া, চলাফেলা, অভিনয়সহ সবকিছুই অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে করেছেন। তিনি পুরো গানের পরিবর্তন ও সম্পূর্ণতা ঠিকভাবে দিয়েছেন। বলেছেন, বিশ্বখ্যাত বংশীবাদক পন্ডিত হরি প্রসাদ চৌরাসিয়া।
আরেকটি গান সিনেমার ‘ইয়ে কাহান আ গায়ে হাম’ নিয়ে পন্ডিত শিব কুমার শর্মার মনে পড়ে, ‘পরিচালক যশ চোপড়া গানটির সঙ্গীতকে কাব্যিকভাবে প্রদান করতে চেয়েছিলেন। আমরা তাকে বলেছি, কবিতা আবৃত্তি দিয়ে গানটির শুরু হতে পারে। এর ভেতরে গান থাকবে।’ গানটিকে রেখার লিপে গেয়েছেন লতা মুঙ্গেশকর। শর্মা শেষে বলেছেন, ‘এটিও আসলে একটি পূর্ণ গান। গানের পরিবেশে অভিনয় নয়। যশজি শব্দগুলোকে চেয়েছিলেন- কবিতা ও গানের ভেতরে সঙ্গীত থাকবে। আমরা পরামর্শ দিয়েছিলাম, একটি গান ও কবিতার ছন্দ গনটির ভেতরে সুরসহ থাকুক। ফলে তার বিরতিতে গাইতে হবে না। প্রথমে স্থায়ী, তারপর আবৃত্তি, তারপর অন্তরা, এরপর কথামালা।” এই গানের কবিতাটি মেগাস্টার অমিতাভের আবৃত্তি। ছবির বাড়তি পাওনা। গানটি শুরু হয়েছে রু, রু, রু...তে।
ও, এই ছবির প্রতিটি গানের সুর অনন্য, নতুন ও অসাধারণ। যেকারো জন্য চিরকাল শোনার ও জানার মতো গান। বারবার যেকোনো দেশের যেকোনো শহরের যেকোনো ভাষার মানুষের শুনতে ইচ্ছে করে। আছে রেখার অবিশ্বাস্য নাচ, অসাধারণ লোকেশন। তারা দুজনে যশরাজের শেষ ছবি ‘দ্বার’-এ কাজ করেছেন।
(ইংরেজি থেকে অনুবাদ)