ইউআইইউর ‘ট্রিপলএসআই’ জয় করলো ‘স্মার্ট ইউরোপ অ্যাওয়ার্ড’
জার্মানির মিউনিখে ইউরোপীয়দের বিচারে দারুণ প্রযুক্তি ‘স্মার্ট ইউরোপ অ্যাওয়ার্ড’টি জয় করেছে ‘ট্রিপলএসআই’। মানে হলো ‘স্মার্ট সোলার ইরিগেশন সিস্টেম’। আমাদের বাংলায় ‘সৌরশক্তিতে পরিচালিত চটপটে সেচ যান্ত্রিক ব্যবস্থা’। উদ্ভাবন করেছেন, এ দেশের অন্যতম বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ইউআইইউ (ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভাসিটি)’র ‘সেন্টার ফর অ্যানাার্জি রিসার্চ’ গবেষকরা।
অনন্য এই আবিস্কারটি বাংলাদেশের কৃষিখাতের সেচে সৌরশক্তির ব্যবহার নিয়ে আসছে। সেচ পদ্ধতিটি পুরো জলসেচ পদ্ধতিই বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে আশা করেছেন সবাই।
১০ মে, ২০২২ মঙ্গলবার, জার্মানির রাজধানীতে ‘স্মাট ইউরোপ অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ করেছেন পাইলট প্রকল্পটির দলনেতা, ‘ইউআইইউ সেন্টার ফর অ্যানার্জি রিসার্চ’র পরিচালক ও আইসিডিআরইটি (ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন দি ডেভেলপমেন্টস ইন রিনিউয়াবল অ্যানার্জি টেকনোলজি)’র আয়োজক কমিটির সহ-প্রধান এবং অন্যতম অধ্যাপক ড. শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী, সিইএ।
তিনি জানিয়েছেন, ‘আমাদের বহুদিনের অনেক কষ্টের ফসল। সৌরশক্তিতে একা, একাই দ্রুত সেচ প্রদানের এই যন্ত্রটি মানুষের এক অনন্য আবিস্কার। কেননা, ট্রিপলএসআইতে আছে স্মার্ট সেন্সর ব্যবস্থা। সেগুলো মাটির আদ্রতা, পানীয় জলের স্তর পরীক্ষা, পিএইচ স্তর (যেখানে মৌলিক পানি থাকে) ইত্যাদি পরীক্ষা ও সে অনুসারে কাজ করতে পারে।’
‘আরো আছে, দিক নির্দেশক যোগাযোগের অনন্য ব্যবস্থা, আইওটি (স্মার্ট পানি ব্যবস্থার ভিত্তি ইন্টারনেট অব থিংকস)। এমনকি আমরা এই সেচ ব্যবস্থায় কৃত্রিমভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারার ব্যবস্থা যোগ করেছি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যবস্থা রেখে।’
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইইই (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী আরো জানিয়েছেন, ‘আমাদের ট্রিপলএসআই অনন্য এই কারণেও, আগে থেকে টাকা দিয়ে এখানে পানি কিনতে হয়। ফলে একটি টাকা রাখার বা দেবার ব্যবস্থা যুক্ত করা হয়েছে প্রিপেইডের মাধ্যমে। মোবাইল ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিলটি প্রদান করা যায়।’
তিনি বলেছেন, “পে অ্যাজ ইউ গো’ নামের বিশেষ প্ল্যাটফর্মটির মাধ্যমে আগে থেকে প্রয়োজনানুসারে জমির জলের বিল শোধ করা যায়।’
বহু কষ্টের ফসল এই প্রযুক্তিটি নিয়ে অধ্যাপক ড. শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী আরো জানিয়েছেন, ‘আমাদের এই স্বয়ংক্রিয় সৌরশক্তি চালিত পানি সেচ যন্ত্রটি কাউকে পরিচালনা করতে হবে না। কেননা, এটি চালাবে এই যন্ত্রের রিমোট কন্ট্রোলার। সৌর জল সেচ যন্ত্রে আমরা আরো রেখেছি, কয়েকটি সেন্সর যেগুলো ফিল্ড প্যারামিটার সেন্সিং করে চলে। ফলে সেচের জল নিয়ন্ত্রিত হয়।’
গর্বের সঙ্গে বাংলাদেশের এই অন্যতম সৌরবিজ্ঞানী জানিয়েছেন, ‘আমাদের সৌরশক্তিতে পরিচালিত চটপটে সেচ ব্যবস্থা কেবল কৃষককে জলসেচের কাজ থেকে বাঁচায় না, তার পানির অভাবের হাহাকার দূর করে না; এই যন্ত্র ফসল ও মাটির ধরণের ওপর নির্ভর করে জমিতে পানি সেচের সর্বোত্তম ব্যবস্থাও নিশ্চিত করে। পানির অতিরিক্ত ব্যবহার কমায়। কোনো ধরণের বিদুৎ খরচ নেই এখানে, ডিজেল কিনতে হয় না কৃষককে।’
‘এই গরিব কৃষক জানবেনও না, ট্রিপলএসআই ব্যবহার করে তার পরিবেশে কার্বন নি:সরণ কমে আসে।’
তিনি বলেছেন, ‘এটি দূর নিয়ন্ত্রিত একটি বিশেষ ধরণের জলসেচ পদ্ধতি। সূদূর পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিও বটে।’
অধ্যাপক ড. শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী শেষে বলেছেন, ‘স্মার্ট ইউরোপ অ্যাওয়ার্ডটি প্রদানের সময় আমাদের বিচারকরা জানিয়েছেন, কার্বন নিঃসরণ কমানো ও মানব সম্পদ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তিটি পরিবেশগত বিরাট ভূমিকা পালন করবে। ট্রিপলএসআইয়ের সামাজিক প্রভাবও অনেক। সারা দুনিয়ার কৃষকের সেচ ও পানি খরচ বাঁচিয়ে আনবে।’
ছবি : স্মার্ট ইউরোপ দলের পক্ষে গ্রহণ করছেন অধ্যাপক ড. শাহরিয়ার আহমেদ চৌধরী ও অন্য ছবিতে পাইলট প্রকল্পটির দলনতো ড. শাহরিয়ার।
ওএস।