ভূতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে টংকনাথের রাজবাড়ি
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার কুলিক নদীর তীরে রাজা টংকনাথের জমিদার বাড়িটি। অপরূপ সৌন্দর্য্যের এ বাড়ি এখন ভূতুড়ে বাড়ি হিসেবে রূপ নিয়েছে। শতবর্ষী ঠাকুরগাঁওয়ের জমিদার বাড়িটি সংস্কারের অভাবে এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
জেলার ঐতিহ্য বহন করা বাড়িটি যুগের পর যুগ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় এখন মাদকের অভয় আরণ্যে পরিণত হয়েছে। আর প্রশাসন বরাবরের মতো বলছেন, সংশ্লিস্ট দপ্তরে পত্র পাঠানো হয়েছে খুব দ্রুতই সংস্কার করা হবে।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে নির্মিত জমিদার বাড়িটি বর্তমানে অনেক অংশই নষ্ট হয়েছে দেখভাল ও সংস্কারের অভাবে। মাঝে মাঝেই খসে পড়ছে ইট ও পলেস্তারা। দ্বিতল ভবনের বেশিরভাগেই আগাছা জন্মেছে। ১৯১৫ সালে রাজবাড়িটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, জরাজীর্ণ ও অবহেলিত দণ্ডায়মান রাজবাড়িটি। চামচিকার অবাধ বিচরণ এ বাড়িটিতে। সংস্কার ও সংরক্ষণে কোনো সরকারি উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
টংকনাথের পিতার নাম বুদ্ধিনাথ চৌধুরী। বুদ্ধিনাথ চৌধুরী ছিলেন, মৈথিলি ব্রাক্ষণ এবং কাতিহারের ঘোষ বাগোয়ালা বংশীয় জমিদারের শ্যামরাই মন্দিরের সেবায়েত। নিঃসন্তান বৃদ্ধগোয়ালা জমিদার কাশিবাসে যাওয়ার সময় সমস্ত জমিদারি সেবায়েতের তত্ত্বাবধানে রেখে যান এবং তাম্রপাতে দলিল করে যান। তিনি কাশি থেকে ফিরে না এলে এ জমিদারির মালিক হবেন শ্যামরাই মন্দিরের সেবায়েত। পরে বৃদ্ধ জমিদার ফিরে না আসার কারণে বুদ্ধিনাথ চৌধুরী জমিদারি পেয়ে যান। তবে অনেকে মনে করেন এ ঘটনা বুদ্ধিনাথ চৌধুরীর দু-এক পুরুষ আগেরও হতে পারে।
রাজবাড়ি নির্মাণের কাজ বুদ্ধিনাথ চৌধুরী শুরু করেলও শেষ করতে পারেনি। এটির কাজ সমাপ্ত করেন রাজা টংকনাথ। বৃটিশ সরকারের কাছে টংকনাথ রাজা উপাধি পান। উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে রাজ বাড়িটি নির্মিত হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকেই ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় রাজবাড়িটি। যা কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ইতিহাসের পাতা থেকে। চোখ জুড়ানো জমিদার বাড়ির পশ্চিমদিকে সিংহদরজা। দরজার চূড়ায় দিক নির্দেশক হিসেবে লৌহদণ্ডে ঝ.ঘ.ঊ.ড চিহ্ন অঙ্কিত থাকলেও তা এখন আর চোখে পড়ে না। দিন যত যাচ্ছে অযত্নে ও সংরক্ষণের অভাবে মুছে যাচ্ছে রাজবাড়ির ঐতিহ্য।
দূর-দূরান্ত থেকে ভ্রমণ পিপাসুরা রাজবাড়িটি উপভোগ করতে এসে মুগ্ধতার বদলে ফিরছেন আক্ষেপ করে। স্থানীয়রা মনে করেন এখনো রাজবাড়িটি সংস্কার করা হলে বিনোদন স্পটের পাশাপাশি এলাকার উন্নয়নে প্রসার ঘটবে।
ঢাকাপ্রকাশকে রংপুর থেকে রাজবাড়িতে ঘুরতে আসা রেজওয়ান রনি বলেন, এখানে ঘুরতে এসে দেখলাম এটির অবস্থা ভঙুর। এটি মাদকের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে। প্রাচীন এ স্থাপনাগুলো এভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে কিন্তু দেখার কেউ নেই। এগুলো সংস্কারের জন্য আবেদন জনাচ্ছি।
রাণীশংকৈল ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ তাজুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, দীর্ঘ সময় তদারকির অভাবে স্থানীয় প্রভাবশালীদের কবলে পড়ে রাজবাড়ির মূল্যবান সম্পদ চুরি ও লুট হয়ে গেছে। এ বিষয়ে অনেকবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিউজ প্রচার হওয়ার পরেও কোনো প্রকার সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। প্রাচীন এ নিদর্শন আজ বিলুপ্তির পথে।
ঢাকাপ্রকাশকে রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির স্টিভ জানান, ইচ্ছে থাকলেও প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া রাজবাড়ির কোনো কাজ করা সম্ভব নয়। তবে সংস্কারের জন্য চিঠি পাঠানোর পরে প্রত্নতত্ব কর্তৃপক্ষ দ্রুত সংস্কার করার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।
এসএন