কুষ্টিয়ায় বৈশাখের আনন্দ ম্লান কালি-ছাই ও ধুলায়
বৈশাখ মানে বাঙালি জাতির নিজস্ব সংস্কৃতি মেলে ধরা। বৈশাখ মানে আনন্দ, বৈশাখ মানে অশুভশক্তিকে পেছনে ফেলে সকল গ্লানি ভুলে নতুন করে জেগে ওঠা। কিন্তু বৈশাখের আনন্দ আর উচ্ছ্বাস ম্লান হয়ে গেছে কুষ্টিয়ার সদরের বটতৈল, খাজানগর, পোড়াদহ এলাকার বিভিন্ন কল-কারখানার কালি-ছাই ও ধুলায়।
এ এলাকার জলাধারগুলো পঁচা পানি তুষ, ভুসির জমাট বাঁধা নর্দমায় পরিনত হয়েছে। এই এলাকার প্রকৃতির বাতাসে ভরে গেছে বাণিজ্যিক দূষণ।
এমন অসহনীয় জনদুর্ভোগ বছরের পর বছর ভোগ করতে হচ্ছে এ এলাকাতে বসবাস করা বিশাল জনগোষ্ঠীকে। ফসলের মাঠেও এসব কল-কারখানার দূষিত পানি ফসলি জমিতে গিয়ে জমির উর্বরতা নষ্ট করছে। উৎপাদ হচ্ছে না কাঙ্খিত ফসল এতে করে কৃষককে পড়তে হচ্ছে অর্থনৈতিক লোকশানের।
ধান প্রক্রিয়াজাত করা, চাল, তুষ, ভুসি, আটা উৎপাদন করতে এইসব এলাকায় বিগত ৪৫ বছরে প্রায় চারশো কলকারখানা গড়ে উঠেছে। এর অধিকাংশ কলকারখানায় মানা হচ্ছে না পরিবেশ আইন, শ্রমিকের নিরাপত্তার মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো।
এ প্রসঙ্গে পরিবেশ কর্মী আক্তারি সুলতানা বলেন, চালকল মালিকদের সিন্ডিকেট পরিবেশের তোয়াক্কা না করে খেয়ালখুশি মতো কলকারখানা চালাচ্ছে।
এ ব্যাপারে বটতৈল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিন্টু ফকির উদ্বেগ প্রকাশ করে ঢাকা প্রকাশকে বলেন, ছাই এবং কারখানার অন্যান্য বর্জ্য নিয়ন্ত্রণে আমরা সম্মিলিতভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
এই এলাকায় ৪ শতাধিক কলকারখানা স্থাপিত হলেও এ সংশ্লিষ্ট মাত্র ৩০টি কারখানার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র প্রস্তুত আছে বলে জানা গেছে পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়া দপ্তর থেকে।
সরেজমিনে বটতৈল, খাজানগর, পোড়াদহ এলাকায় গিয়ে দেখা যায় নিয়মনীতির কোনো বালাই নেই। যত্রতত্র যেমন খুশি তেমন গড়ে ওঠা ধান-চাল সংশ্লিষ্ট কারখানাগুলো প্রকৃতিতে ব্যাপকভাবে দুষণ ছড়াচ্ছে।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তরুণ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, চালকলের দুষণে টিকতে না পেরে ওইসব এলাকার মানুষ ঘর বাড়ি নিয়ে দূরে সরে যাচ্ছেন। কারখানা সংশ্লিষ্ট এলাকার বসতির মানুষেরা অভিযোগ করেন, অনেকক্ষেত্রে তাদের ঘরবাড়ি বেঁচে চলে যেতেও বলা হয় চাল কলের পক্ষ থেকে।
দেশ অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের সত্বাধিকারী এমএ খালেক বলেন, কল কারখানার আধিক্য অনুসারে কুষ্টিয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তরের পূর্ণাঙ্গ অফিস প্রয়োজন।
ব্যাপারী অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তোফাজ্জল হোসেন ব্যপারী বলেন, এর আগে কল কারখানা কম ছিলো, এখন কলকারখানা বেশি হয়ে যাওয়ায় এই এলাকায় দূষণ বেড়ে গেছে।
বড় বড় কারখানাগুলোর বিভিন্ন কাজ সাব কনটাক্টে করে দিচ্ছে এখানে গড়ে ওঠা ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন কারখানাও। দিনে দিনে এই এলাকায় বেড়েই চলেছে চালকল আর এ সংশ্লিষ্ট নানা রকম কারখানা, এমন পরিস্থিতিতে অতি শিগগিরই এসব কারখানাকে নিয়মের মধ্যে না আনলে আগামী দিনগুলোতে দেখা দিতে পারে শিল্পের সঙ্গে লোকালয়ের মারাত্বক বিবাদ।