বলি, মোরগ লড়াই, বউচি
লেখা ও ছবি : জুনায়েদ খান
দুই বছর পর মঙ্গল শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, চট্টগ্রামের বিখ্যাত বলি খেলা, মেয়েদের বউচি ও ছেলেদের মোরগ লড়াই হয়েছে পহেলা বৈশাখের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। খেলার আয়োজনগুলো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে।
শহরের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে আয়োজন করা হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। তবে প্রধান মঙ্গলশোভাযাত্রা হয়েছে ক্যাম্পাসে, অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের নেতৃত্বে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতিফলকের সামনে থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত তাদের প্রধান মঙ্গলশোভাযাত্রার নেতৃত্ব দিয়েছেন। চারুকলা তাদের ইনস্টিটিউটের সামনে থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো ঘুরে আবার চারুকলায় শেষ হয়েছে।
এবারে সবখানেই মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য হলো-মুছে যাক গ্লানি,ঘুচে যাক জরা, অগ্নিস্নানে সূচি হোক ধরা।' চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় তাদের মঙ্গল শোভাযাত্রায় পাখির প্রতিকৃতি নিয়ে বেড়িয়েছে। আরো ছিল বিরাট ফুল, পাতা, মৌমাছি, পেঁচা, বাঘ, সাপ, ময়ূর, হাতপাখা, মাছ, প্রজাপতি, পালকি, ঘোড়া, হাতি, মুখোশ। ছাত্র, ছাত্রীরা কৃষক, মাথায় তাল পাতার টুপি, গ্রাম্যবধূ হয়ে এসেছেন।
মঙ্গলশোভাযাত্রায় ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম নারী উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরিন আখতার, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. বেণু কুমার দে, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল ইসলাম, প্রক্টর অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য অধ্যাপকরা, অনুষদগুলোর ডিন, আবাসিক হলগুলোর প্রভোস্টসহ সব বিভাগের অধ্যাপকরা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অঅধিভুক্ত ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র, ছাত্রীরা অংশ নিয়েছেন শোভাযাত্রায়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো তাদের ব্যানারগুলো অংশ নিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা নবর্ষবরণের মূলমঞ্চে সূচনা সঙ্গীতের পর বক্তৃতানুষ্ঠান হয়েছে। অধ্যাপক ড.শিরিন আখতার ও অধ্যাপক ড. বেণু কুমার দে বক্তব্য দিয়েছেন।
উপাচার্য বলেছেন, ‘আমার তরফ থেকে সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সবসময় যথাযথ গুরুত্বে পহেলা বৈশাখসহ জাতীয় দিবসগুলো পালন করে। ভবিষ্যতেও সকল জাতীয় দিবসে সবাই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করবেন, এমনই আশা করছি।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার ছাত্র, ছাত্রীরা তাদের রং, তুলি ও কারুকার্যে খচিত বিভিন্ন প্রাণীর মুখোশ, ভুভুজেলা, হাতি, ঘোড়া, পাখি বাহারি রংয়ের জিনিস প্রদর্শন ও বিক্রি করেছেন। তাদের বেলুনের মাছ, ঘোড়া, পাখি-মা-বাবার সঙ্গে বেড়ানো ছোট্ট শিশুরা নিয়ে ঘুরেছে সারাদিন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ছাত্রীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল সংগীত বিভাগের পরিবেশনায় নৃত্য ও সংগীত, লোকগীতি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকসু ভবনের সামনে খোলা জায়গায় ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পাশে উন্মুক্ত মঞ্চে বলি খেলা, বউচি, মোরগ লড়াই হয়েছে ছাত্র, ছাত্রীদের। চট্টগ্রামের অনেক জায়গায় জব্বারের বলিখেলা স্থগিত। তবে এই বলিতে অংশ নিয়েছেন তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। এই বলির আয়োজন করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা। উপচে পড়া ভিড় হয়েছে।
চ্যাম্পিয়ন বলি হয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পোর্টস সায়েন্সের ছাত্র মাহমুদুল হাসান ও রানার-আপ হয়েছেন তার বিভাগের হিব্বান মুরাবী।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পহেলা বৈশাখ আয়োজন ও উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলাম বলেছেন, ‘বলিখেলা বাঙালির প্রাণের উৎসব। বাংলার চিরায়িত লোক ঐতিহ্য। বর্ষবরণে নানা আয়োজনে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চট্টগ্রামের বিখ্যাত জব্বারের বলিখেলা বাড়তি আমেজ তৈরি করেছে। বলি ছাড়াও আমরা শোভাযাত্রা, বউচি, মোরগ লাড়াই ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি।’
সব খেলায় বিজয়ীদের মাঝে বিকাল ৩টায় পুরস্কার বিতরণ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা।
ওএস।