আনন্দ, উৎসব আর টান, টান উত্তেজনা
লেখা ও ছবি : ইফতেখার আহমেদ ফাগুন
বরাবরের মতো এই আগামী দিনের উৎসবটি ছিল উত্তেজনায় ঠাসা, ভালোবাসায় ভরা। ভবিষ্যদের বাংলাদেশ সেরা জীবনবিজ্ঞানীরা এসেছিলেন দেশের অন্যতম প্রধান কৃষি শিক্ষা ও গবেষণার উচ্চতম প্রতিষ্ঠান সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারা অনেক শুনেছেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গল্প। এখানেই আছেন দেশের একদল সেরা ছাত্র, ছাত্রী ও অধ্যাপকরা। তারা বাংলাদেশের খাদ্য সমস্যার সমাধানে কাজ করেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ঘুরতে আসেননি ওরা। এসেছেন অনেক কাজ নিয়ে। গাছগাছালিতে ঘেরা, অন্যরকমের বিভাগগুলোতে সাজানো, মাছ, পুকুরের দেশে এসে তাদের চমক লেগে গিয়েছে। আয়োজকরাও তাদের নিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন সোনালী কৈশোরে। এ এক অন্যরকম দিনের গল্প।
শুরুটি হয়েছিল সকাল নয়টাতে। তারিখের হিসেবে ১৯ মার্চ। আমাদের বিভিন্ন বিভাগের, হলের ছাত্র, ছাত্রীরাও চমকে গিয়েছেন তাদের দেখে। আরে আমাদের ছেলেবেলা ফিরে এলো কেন? আমরাও তো এমন ছিলাম কটি বছর আগে! এই আয়োজনটির নাম হলো ‘বিডিবিও-সমকাল জীববিজ্ঞান উৎসব-২০২২।’
আয়োজন করে প্রতি বছর কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে ‘বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান সমিতি’, ‘বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড’। ইংরেজিতে ‘বাংলাদেশ বায়োলজিক্যাল অলিম্পিয়াড -বিডিবিও)’। তারাই দারুণ আয়োজনটির নেপথ্যের কারিগর। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা শিক্ষকরা আছেন পেছনে। আছেন অনেক বিখ্যাত বাংলাদেশী ছাত্র, ছাত্রী; গবেষক। আমাদের সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আমাদের আঞ্চলিক উৎসবটি হয়েছে ও দিন।
আঞ্চলিক পর্বে অংশ নিতে বাবা, মা, ভাই, বোন বা নিজেই চলে এসেছেন প্রতিযোগিরা। সিলেট বিভাগের চারটি জেলা, যেগুলো বাংলাদেশের মাছ ও কৃষির আধার; অনিন্দ্য সুন্দর-সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ’র বিভিন্ন বিদ্যালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র, ছাত্রীরা; এসেছিলেন জীববিজ্ঞানের নানা কুইজ, প্রশ্নোত্তর, ধাঁধা, বিজ্ঞানীদের জীবনী, বাংলাদেশের খ্যাতনামা জীববিজ্ঞানীদের কাজসহ সারা বিশ্বের খবর নিয়ে পরস্পরের সঙ্গে লড়তে-মুখে ও খাতা, কলমে। তাদের এই প্রতিযোগিতা নিয়ে আগ্রহের কোনো শেষ নেই। সারা দেশের মানুষই প্রতিযোগিতাটির খবর জানেন। ফলে এই দিনে কী দেরি সয়?
সকাল নয়টার মধ্যে সিলেটের চার জেলার ছেলেমেয়েরা চলে এলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। জাদুকাটা নদী, হাকালুকি, টাঙ্গুয়া, হাইল হাওড়ের দেশের মানুষদের কী দেরি করলে চলে? আগের রাতেই তারা তাই থেকেছেন আত্মীয়জনের বাসায়। পরদিন সকালে ভালোভাবে রেডি হয়ে খাতা, কলম নিয়ে চলে এলেন আমাদের ক্যাম্পাসে। ছোট্ট ছেলে আর মেয়ে, কিশোর, তরুণীর অদ্ভুত যৌবন, তাদের মেধা ও প্রজ্ঞার নহর ছুটেছে এইখানে। অনেক তারা। আমরা স্বেচ্ছাসেবীর কাজ করেছি অবিরাম। সকাল নয়টার মধ্যে সকলের রেজিস্ট্রেশন নেওয়া হয়ে গেল। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে চলে এলেন মোট ৯শ ৭৩ জন সিলেটের সব স্কুল কলেজের সেরা ছেলে, মেয়েরা। তাদের নিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত গাইলেন আমাদের সব শিক্ষক, ছাত্র, ছাত্রী; আশপাশের সবাই।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র পরামশ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক আমাদের প্রিয় অধ্যাপক ড. মো. মোস্তফা সামসুজ্জামান বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাকে উড়িয়ে দিয়েছেন ভালোবেসে। এই দেশের প্রতি ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে তখন তার কিশোরকালে চলে গেলেন! আমাদের প্রিয় অধ্যাপক বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড সিলেট আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি ড. মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ডু উড়িয়েছেন আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান সমিতির অলিম্পিয়াডটির গৌরবময় চিহ্ন। তাকে আমরা ক্লাসরুমে, ক্লাসরুমের বাইরে সবসময় অত্যন্ত দক্ষ, যোগ্য ও কীর্তিমান অধ্যাপক হিসেবে জেনে এসেছি। তিনি জীববিজ্ঞান অন্ত:প্রাণ মানুষ। তেমনিভাবে অসাধারণ একজন জীববিজ্ঞানী, বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড সিলেট আঞ্চলিক কমিটির সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আ.খ.ম. গোলাম সারোয়ার যখন আমাদের জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের পতাকা ওড়ালেন, তারপর জানলাম, কী অসাধারণ দক্ষতা আছে তার এই বিষয়ে, চমকে যেতে দেরি হলো না। দিনটি আসলেই অন্যরকম ছিল। আরো ছিলেন আয়োজক মিডিয়া প্রতিষ্ঠান সমকালের সিলেট ব্যুরোর স্টাফ রিপোটার ফয়সল আহম্মদ বাবলু, আমাদের বিডিবিও সিলেট কমিটির সাবেক সভাপতি সৈয়দ জাহিদ হাসান, সাধারণ সম্পাদক তাসফিয়া তাহজিন, অঞ্চলগুলোর সহ-সভাপতিরা, সমকালের পাঠক ফোরাম সুহৃদ সমাবেশের কর্মীরাসহ ১শ জন।
আমাদের দিনটি বাংলাদেশ ও জীববিজ্ঞানের প্রতি ভালোবাসার। কৃষির স্বর্গভূমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঁকে, বাঁকে ঘুরে বেড়ানোর। আনন্দ, উৎসব আর টান, টান উত্তেজনার। অনেক লিখেছি আমি, অনেক কাজের কাজী। কিন্তু এমন উৎসব খুব একটা দেখিনি। আহা, আমার সোনালী কৈশোর। আমির মতোই কত, শত ছেলেমেয়েরা এসেছেন এখানে। তাদের মধ্যে গুণে, গুণে এনেছেন তারা ষষ্ঠ থেকে অষ্টমের মোট ২শ ১০ জনকে। নবম-দশমের ছিলেন মোট ৫শ ৪৯ জন। তারা বিপুল, জীবনের আগামী দিন তাদের এখনই ঠিক করার সময়। জীববিজ্ঞানকে ভালোবাসেন বলে বাংলাদেশের বিশ্বসেরা জীববিজ্ঞানীর জন্ম হবেন তাদের থেকেই। ওরা খুব পড়ুয়া। কদিন পরেই তো এসএসসি সায়েন্স থেকে পরীক্ষা দিতে হবে। হতে হবে সেরা। তাদের সিনিয়র ব্যাচগুলোর ছিল মোট ২শ ২৭ জন। তারা এইচএসসিতে-একাদশ, দ্বাদশে পড়েন। বলা প্রয়োজন, বাংলাদেশের জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে এই তিন বিভাগ থেকে মোট যে ৯শ ৮৬ জন নাম রেজিষ্ট্রেশন করেছেন এসে, তারাই এই অঞ্চলের সেরা। তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিল মোট ৯শ ১ জন। মোটে ৭৫ জন নানা কারণে আসতে পারেনি বলে খুব মন খারাপ করে পরদিনের পত্রিকা, সেদিনের অনলাইন, ফেসবুক আর টিভির খবরগুলো গিলেছেন। বলা দরকার, অত্যন্ত মানসম্পন্ন এই বাৎসরিক প্রতিযোগিতার সুনামের তো কমতি নেই। মেধারও শেষ নেই। ফলে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যমেও প্রতিযোগিতা হয়েছে।
ঘড়ির কাঁটা ধরে চলি আমরা সবাই এখানে। সকাল ১০টার মধ্যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মজার, মজার বিষয়ের-যেমন কৃষি প্রকৌশল ইত্যাদি শ্রেণীকক্ষগুলোতে ঢুকে পড়লো খুদে আর জুনিয়র ছাত্র, ছাত্রীদের দল। আধঘন্টার মধ্যে খাতাপত্র হাতে উত্তেজনা, পাশ-ফেল দুশ্চিন্তা বাদে হাসতে, হাসতে ঢুকে পড়লেন শিক্ষকের দল। অনেকে আবার বাইরের। ভাবা যায়? শুরু হলো পরীক্ষা। নানা কিছু তাতে ছিল। মজার একটি প্রশ্ন বলি-মানুষের হাঁচির গতিবেগ ঘন্টায় কত? মানে একজন পূর্ণ বয়সের মানুষ যখন হাঁচি দেন, তখন তার বাতাসে গতিবেগ কত থাকে? ভাবতে হবে না। উত্তর হলো ৬০ কিলোমিটার। আশ্চর্য হলেও সত্যি।
এরপর তারা সবাই চলে এলেন আমাদের সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্যান্ডেলের নীচে। আছে প্রশাসনিক ভবনের সামনে। তারা অবাক হতে না হতে প্রধান অতিথির সঙ্গে পরিচিত হলেন। তিনি হলেন ইউজিসি (বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন)’র অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর। এই অলিম্পিয়াড কমিটির অন্যতম সদস্য, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় উপাচার্য, তাদের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অন্যতম সিনিয়র অধ্যাপক, দেশ সেরা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষক। তার পাশেই বসে ছিলেন আমাদের অধ্যাপক, খুব গর্ব লেগেছে-তিনি মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ডু স্যার। তারা এই দিন জীববিজ্ঞান নিয়ে মজার, মজার প্রশ্ন করেছেন। একটি আমি করি-ব্যাথা পেলে আমরা হাত বুলাই কেন? তাতে ওই নার্ভে এই ব্যথার অনুভূতিতে আরাম হয় ও মস্তিস্কে পৌঁছায়। তারা কিন্তু জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড ও কাজ নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। অনেক প্রশ্ন ও উত্তরের পর্বটি পরিচালনা করেছেন বিডিবিও বা বাংলোদেশ বায়োলজি অলিম্পিয়াড সিলেট অঞ্চল কমিটির সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. গোকুলচন্দ্র বিশ্বাস, তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অন্যতম শিক্ষক; আমাদের ছাত্রী হলের অন্যতম কর্তী, কৃতি অধ্যাপক ড. শরিফুন্নেছা মুনমুন, অধ্যাপক ড. মাসুদুর রহমান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন নামকরা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ এবং আমাদের সহকারী অধ্যাপক ড. কাজি জিন্নাহ।
তাদের পরীক্ষার পর হলো ফলাফল। জুনিয়র মানে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী শাখায় প্রথম হয়েছে সবচেয়ে বেশি ১শ তে ৮৬.০৭ পয়েন্ট পেয়ে, সিলেটের উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারী অগ্রগামী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছোট্ট মেয়ে স্বস্তিকা পাল। তাদের নামকরা স্কুল-কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা সিলেটের মহিয়সী হেমন্ত কুমারী চৌধুরাণী; বিদ্যালয়ের জন্ম ১৯০৩ সাল। নবম-দশম শ্রেণীর বিজ্ঞানের মেধাবী ছাত্র, ছাত্রীদের মাধ্যমিক শাখা বা সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে ৮৫.৫৩ পয়েন্টে বিজয়ী হয়েছেন ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্লু-বার্ড হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের মেধাবী হিমেল দাশ পরাগ ও উচ্চমাধ্যমিক শাখা বা হায়ার সেকেন্ডারিতে সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছে বিখ্যাত জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অন্তর। তাদের স্কুলটি ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অধীনে পরিচালিত। তারা পুরস্কারগুলো লাভ করেছে ঠিক দুপুর আড়াইটায়।
তাদেরসহ অনেককে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। স্বস্তিকা যেমন তার বিভাগে সবার সেরা হয়েছে, তেমনি তুমুল মেধার লড়াইয়ের পর ৮৬.০৭ থেকে ৫৬.৩৫ পয়েন্ট পর্যন্ত বিজয়ীদের পুরস্কার দিয়েছেন বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড কমিটি ও সমকাল। ওরা ছিল মোট ৪৯ জন। তারা মাধ্যমিক শ্রেণীতে মোটে ৪ পয়েন্টের মধ্যে ৬৪.২৯ থেকে ৬০.২৯ পয়েন্টে পুরস্কার দিতে বাধ্য হয়েছেন ১শ ১৪ জনকে! উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীতে ৬৯.০৯ থেকে ৫৭.৮৯ মোটে ১১ পয়েন্টের সামান্য বেশি ছেলেমেয়েদের পুরস্কার দিয়েছেন ৪৪টি।
এর বাদেও বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড কমিটি ও সমকাল পুরস্কার প্রদান করেছে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী আসায় সিলেটের নামকরা শায়েস্তাগঞ্জ ইসলামী অ্যাকাডেমি অ্যান্ড হাই স্কুলকে। সবচেয়ে বেশি ভালো ছাত্র, ছাত্রীরা এসেছে জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে। তারা সবচেয়ে বেশি পুরস্কার জিতেছে। এই উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় দুটির সব ছেলেমেয়েরাও তাদের অমূল্য পুরস্কারগুলো নিয়ে খুশি মনে ফিরে গেছে। সেসব সুন্দর চেহারাগুলো চিরকালের জন্য আমাদের মনে আঁকা হয়ে রইল।
ছবি : মহিয়সী হেমন্ত কুমারী চৌধুরাণী।
২. শায়েস্তাগঞ্জ শায়েস্তাগঞ্জ ইসলামী অ্যাকাডেমি অ্যান্ড হাই স্কুলের একটি ছবি।
৩. জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শহীদ মিনারে শিক্ষকরা।
৪. ইউজিসি (বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন)’র অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর
ওএস।