চলে গেলেন জঁ-লুক গদার
ফরাসি-সুইস পরিচালক জঁ-লুক গোদা বা জঁ-লুক গদার-উপন্যাসের গর্বিত একটি মূল চরিত্র, যেটি তাদের সিনেমা তৈরির আন্দোলন, তাদের ধারাটি বিপ্লব তৈরি করেছে ১৯৫০’র দশকের শেষ থেকে ১৯৬০’র দশকে।
তিনি মারা গিয়েছেন ৯১ বছর বয়সে আজ ১৩ সেপ্টেম্বর।
তার দেশের রাষ্ট্রপতি ইমান্যুয়েল ম্যাখো তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন, ‘আমার দেশ একটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ হারিয়ে ফেলেছে। তিনি ছিলেন ফরাসী সিনেমায় একটি ধুমকেতুর মতো, তিনি এই পর্যায়ক্রমিক ধুমকেতুগুলোর একটি হিসেবে শিক্ষক হয়েছেন। জঁ-লুক-গদার নতুন ধারার চলচ্চিত্র পরিচালকদের মধ্যে কালাপাহাড়। তিনি উদ্ভাবন করেছিলেন একটি অটল আধুনিক, প্রচন্ডভাবে মুক্ত শিল্পকলা। আমরা একজন প্রতিভাধর দৃষ্টিভঙ্গিকে হারালাম।’
তিনি জন্মেছিলেন প্রথম বিশ্বযুুদ্ধের পর ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের অস্থির, ভঙ্গুর সময়ে। ১৯৩০ সালের ৩ ডিসেম্বর। তার বাবা-মা ছিলেন সুইজারল্যান্ডের, দুজনেই চিকিৎসক। ওদিল ও পল গদারের ছেলে। তারা ছিলেন ধনী। ফ্রাঙ্কো-সুইস বংশোদ্ভুত প্রটেস্টান্ট তারা। তার মা ছিলেন জুলিয়েন মনোর মেয়ে, তিনি বঙ্ক পারিবা’র প্রতিষ্ঠাতা। এটি আন্তর্জাতিক একটি ফরাসী ব্যাংকিং গ্রুপ। অনেক দীর্ঘ তার পরিবারের ইতিহাস।
মোটে চার বছর বয়সে ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে বাবা চলে এলেন সুইজারল্যান্ডে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যখন মহামারির মতো ছড়িয়েছে, তখন গদার ছিলেন ফ্রান্সে। তিনিও নানা ধরণের কঠিন বাধার মধ্যে সুইজারল্যান্ডে ফিরলেন। তিনি যুদ্ধের বেশিরভাগ সময় সুইজারল্যান্ডে কাটালেন। যদিও তার পরিবার লুকিয়ে ভ্রমণ করেছে তার দাদার সম্পত্তিতে ফ্রান্সের পাশের লেক জেনেভার ধারে।
তিনি বিদ্যালয়ে পড়েছেন সুইজারল্যান্ডের নিওতে।
তিনি আধুনিক সিনেমার ইতিহাসের অন্যতম দিকপাল। একজন চলচ্চিত্র পরিচালক তো বটেই, চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র সমালোচক। তাকে যুক্তির মাধ্যমে বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আজ পর্যন্ত ফ্রান্সের সবচেয়ে প্রভাবশালী চলচ্চিত্র পরিচালক বলা হয়। তার কর্ম চলৎশক্তিসম্পন্ন ছবিকে নিরীক্ষাসহ বণনা, নিরবিচ্ছিন্নতা, শব্দ ও ক্যামেরার কাজের মাধ্যমে বিপ্লব প্রদান করেছে।
২০০২ সালে সাইট অ্যান্ড সাউন্ডর একটি জরিপে চলচ্চিত্র সমালোচকদের বিচারে বিশ্বের সর্বকালের সেরা ১০ পরিচালকের তৃতীয় হয়েছেন তিনি।
২০১০ সালে তাকে অক্যাডেমি অনারারি অস্কার পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। তবে তিনি অস্কারে হাজির হননি।
দুবার বিয়ে করেছেন তিনি। দুজনই অভিনেত্রী। প্রথমবার অভিনেত্রী আনা কারিনাকে। দ্বিতীয়বার অ্যান ওয়াইজেনস্কিকে। তারা দুজনেই অত্যন্ত প্রতিভাধর ও তার কটি ছবিতে আছেন।
গদারের প্রথম ছবি একটি ফিচার ছবি। ১৯৬০ সালের ব্রেথলেস। তার অন্য বিখ্যাত কাজগুলোর মধ্যে আছে ট্রিলজি অব সাবলাইম, ১৯৮২ সালের প্যাশন, পরের বছরের ফাস্ট নেম : কারনেম, ১৯৮৫ সালের হেইল ম্যারি।
তার দীর্ঘ জীবনে গদার ১৯৮৭ ও ১৯৯৮ সালে সম্মানসূচক সেজার ভূষিত হয়েছেন। এই পুরস্কারটি ফ্রান্সের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
ওএফএস।