'হাওয়া’ সিনেমার মামলার বিরুদ্ধে শিল্পীদের প্রতিবাদ
মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত ‘হাওয়া’ সিনেমার বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন ২০১২ লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা করেছেন বন্যপ্রাণী পরিদর্শক নারগিস সুলতানা। এই সিনেমা প্রদর্শন বন্ধ চেয়ে লিগ্যাল নোটিসও পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি খন্দকার হাসান শাহরিয়ার।
সোমবার (২২ আগস্ট) রেজিস্ট্রি ডাক ও ই-মেইলযোগে নোটিসটি পাঠান আইনজীবি। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে এই নোটিসের জবাবও দিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এবার এই নোটিসের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ অভিনয় শিল্পী সংঘ।
সংগঠনটির সভাপতি অভিনেতা আহসান হাবিব নাসিম ও সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসান স্বাক্ষরিত একটি প্রতিবাদলিপি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরালও হয়েছে। তাদের প্রতিবাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন সাধারণ দর্শক ও চলচ্চিত্রের অনেক শিল্পী কলাকুশলীরা।
সংঘের প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্র যখন কয়েকজন তরুণ, মেধাবী, শিক্ষিত শিল্পী, নির্মাতার হাত ধরে ধ্বংসস্তুপ থেকে আবার নতুনভাবে একটু একটু করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শুরু করেছে, আবার যখন সিনেমা হলে মানুষের জোয়ার নেমেছে, মানুষ দলে বলে সিনেমা দেখতে আসছে, ঠিক তখনই এ জোয়ার বন্ধ করবার ষড়যন্ত্র নিয়ে অশুভ শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে দাঁড়িয়েছে।’
এতে আরও লেখা হয়েছে, ‘বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে এই অশুভ শক্তি বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতিকে ধ্বংস করবার জন্য জঘন্যতম তৎপরতা চালিয়ে আসছে। এবার তারা আইনের ধারা-উপধারাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে যে হাওয়ায় পুরো বাংলাদেশ ভাসছে, সেই হাওয়াকে রুদ্ধ করবার ষড়যন্ত্রের নকশা নিয়ে উপস্থিত।
বলা হচ্ছে ‘হাওয়া’ চলচ্চিত্রের সকল রকম প্রদর্শনী বন্ধ করতে হবে। বলা হচ্ছে বন্যপ্রাণী আইন লঙ্ঘন হয়েছে। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। শিল্পী সাহিত্যিক সংস্কৃতিকর্মী মানেই তারা সমাজের সবচেয়ে সচেতন জনগোষ্ঠীর অংশ। আমরা কখনো আমাদের সমাজ, পরিবেশ ও প্রকৃতি বিরুদ্ধে কোনো কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করি না। বরং সকল প্রকার সমাজ সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডে শিল্পীরাই সর্বাগ্রে সবসময় ভূমিকা পালন করে আসছে। নাটক চলচ্চিত্র নির্মাণে কখনও শিল্পী নির্মাতারা পশু-পাখি প্রাণী হত্যা ও নির্যাতন করেন না। গল্পের প্রয়োজনেই কখনও কখনও পশু-পাখিদের দেখানো হয়ে থাকে। যা হাওয়া চলচ্চিত্রে ঘটেছে।’
এতে আরও লেখা হয়েছে, ‘জেলেরা গভীর সমুদ্রে হারিয়ে গেলে পাখি ছেড়ে দিয়ে দেখেন কাছাকাছি কোনো স্থলভূমি আছে কি না! যা এই চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছে। এটি জীবনেরই অংশ। এবং চলচ্চিত্রে ঘোষণাই দেওয়া হয়েছে এখানে কোনো বন্য প্রাণীর ক্ষতি সাধন করা হয়নি। জন্মলগ্ন থেকে আমরা বিভিন্ন নাটক চলচ্চিত্রে দেখে আসছি এমন কত দৃশ্য সেগুলো নিয়ে আপত্তি উঠল না কেন! সরকার নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রযোজিত ভীষণ জনপ্রিয় নাটক বহুব্রীহির সেই খাঁচায় বন্দি টিয়া পাখির ‘তুই রাজাকার’ সংলাপ এখনো আমাদের স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে। এমন হাজারো ঘটনায় কর্তৃপক্ষ তখন কোথায় ছিল!
এ ঘটনায় চলচ্চিত্রের প্রযোজক, পরিচালককে ডেকে কথা বলা যেত। আইন লঙ্ঘন হয়ে থাকলে কীভাবে তা শোধরানো যায়, সেই আলোচনা ও পদক্ষেপ নেওয়া যেত। তা না করে ২০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী বন্ধের জন্য আইনি তলব এসবই আমাদের শিল্প সংস্কৃতির কণ্ঠ রুদ্ধ করবার, শিল্প সাহিত্য চর্চাকে নিরুৎসাহিত করবার ষড়যন্ত্র হিসেবেই আমরা দেখছি। নাট্য নির্মাতা অনন্য ইমনের বিরুদ্ধে ১৫ কোটি টাকার মামলা, মেজবাউর রহমান সুমনের বিরুদ্ধে ২০ কোটি টাকার মামলা ও হাওয়া সিনেমা প্রদর্শনী বন্ধের ষড়ষন্ত্রের বিরুদ্ধে আমরা তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। আমাদের সংস্কৃতি চর্চার পথকে রুদ্ধ করবার সব অপচেষ্টাকে রুখে দেওয়ার জন্য আমরাও বদ্ধপরিকর।’
এএম/এমএমএ/