নায়করাজ রাজ্জাকের চলে যাওয়ার পাঁচ বছর
ঢাকাই চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়করাজ রাজ্জাকের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ (২১ আগস্ট)। ২০১৭ সালের আজকের এ দিনে (২১ আগস্ট) পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি চিত্রনায়ক।
এ অভিনেতার প্রয়াণ দিবসে তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছেন অনেকেই। তাকে স্মরণ করে ফেসবুকে লিখেছেন তার সহকর্মী চিত্রনায়িকা অঞ্জনা লেখেন, ‘আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের পরিপূর্ণ একটি অধ্যায় তিনি। যাকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে কয়েক যুগ। বাংলা চলচ্চিত্র সমৃদ্ধশালী হয়েছে যার পরিশ্রম, সততা, নিষ্ঠা ও কর্মদক্ষতায়। বাংলা চলচ্চিত্রে আপনার (রাজ্জাক) অবদান সর্বশ্রেষ্ঠ ও চিরস্মরণীয়। আপনিই একমাত্র নায়ক যার অবস্থান ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে খ্যাতির সর্বোচ্চ আসনে দীপ্তময় সূর্যের ন্যায় সমুজ্জ্বল ছিল। এককথায় আপনি অনন্য, আপনি মহান শিল্পী। বাংলা চলচ্চিত্র আপনার কাছে চিরঋণী। আমি নিজে সৌভাগ্যবতী আপনার সাথে জুটি হিসেবে প্রায় ৩৫টার মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি। এরমধ্য বেশিরভাগ সুপারহিটও কালজয়ী চলচ্চিত্র।’
চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার ফেসবুকে লেখেন, ‘মুকুটটা তো পড়ে আছে, রাজাই শুধু নেই। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য অভিনেতা আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় পিতৃপ্রতিম অভিভাবক নায়করাজ রাজ্জাক আংকেলের প্রয়াণ দিবসে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। হে কীর্তিমান কালপুরুষ, ওপারে ভালো থাকুন; থাকুন প্রভুর চিরশান্তির ছায়াতলে।’
এই কিংবদন্তির প্রয়াণ দিবসে তার বাসা ও শিল্পী সমিতিতে দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। পাশাপাশি তাকে বিশেষভাবে স্মরণও করবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। নায়ক রাজ্জাক এই সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম সভাপতি ছিলেন।
নায়করাজ একাধারে ছিলেন অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজক। দুই বাংলাতেই তিনি পেয়েছিলেন জনপ্রিয়তা। বাংলা চলচ্চিত্র জগতে দীর্ঘ সাড়ে ছয় দশক কাজ করেছেন তিনি। প্রখ্যাত সাংবাদিক আহমদ জামান চৌধুরী তার কাজের প্রতি সম্মান জানিয়ে তাকে নায়করাজ উপাধি দেন। এরপর এই উপাধির স্বীকৃতি মিলে যায় সবখানে। দল মত নির্বিশেষে তিনি ছিলেন সবার প্রিয় নায়করাজ।
১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার টালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতার খানপুর হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে সরস্বতি পূজা চলাকালীন মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের জন্য তার শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাকে বেছে নেন। এতে তিনি নায়ক অর্থাৎ নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন। শিশু-কিশোরদের নিয়ে লেখা এ নাটকের শিরোনাম ছিল ‘বিদ্রোহী’। এতে অভিনয়ের মধ্য দিয়েই নায়করাজের অভিনয় জীবন শুরু।
১৯৬৪ সালে রাজ্জাক তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তা নে চলে আসেন। চলচ্চিত্রকার আবদুল জব্বার খানের সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে ‘তের নম্বর ফেকু ওস্তাগার লেন’ সিনেমায় ছোট একটি চরিত্রে প্রথম অভিনয় করেন। এর পর ‘কার বউ’ ও ‘ডাক বাবু’ চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন তিনি। নায়ক হিসেব তার প্রথম চলচ্চিত্র হচ্ছে জহির রায়হান পরিচালিত ‘বেহুলা ’। সেই থেকে তিনি ৩ শতাধিক চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন।
এর বাইরে প্রযোজনা ও পরিচালনা করেছেন ১৬টি চলচ্চিত্র। তিনি সাতবার চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার, চলচ্চিত্রের জন্য আজীবন সম্মাননাসহ অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন।
নায়করাজ দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগে ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট না ফেরার দেশে চলে যান।
এএম/এমএমএ/