শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে এবার পুলিশের মামলা
লাঠিচার্জ, গুলিবর্ষণের পর এবার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। মামলায় কারো নাম উল্লেখ করা না হলেও অজ্ঞাত ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সোমবার (১৭ জানুয়ারি) রাতে সিলেট মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানার এসআই (নিরস্ত্র) মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ।
তিনি জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে পুলিশ আক্রান্ত হয়। মামলাটি মূলত প্রশাসনিক কারণেই করা হয়েছে। তবে কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। মামলায় অজ্ঞাত ২ থেকে ৩ শত জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজহারে বলা হয়েছে, ঘটনার দিন বিকাল সাড়ে ৫টায় আন্দোলনরত ২-৩শ’ উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী হঠাৎ কর্তব্যরত পুলিশের ওপর চড়াও হয়। তারা সরকারি আগ্নেয়াস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। চারদিক থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলিও ছুড়ে। এ ছাড়া পুলিশের ওপর ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ক্যাম্পাসে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীরা সেদিন সোয়া ৩টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে অবস্থান করে থেমে থেমে পুলিশের ওপর আক্রমণ অব্যাহত রাখে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, জান-মাল, আগ্নেয়াস্ত্র ও সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় ১১ রাউন্ড রাবার কার্তুজ ও ২০ রাউন্ড সিসা কার্তুজসহ মোট ৩১ রাউন্ড শটগানের গুলি ছুড়ে। এ ছাড়া সিআরটি ২১টি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। সেদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ভিসিকে উদ্ধার করা হয়।
মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, ইটপাটকেল ও ককটেলে উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর), অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর), জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত), এসআই আসাদুজ্জামান, কাজী জামাল উদ্দিন, রফিকুল ইসলাম, এএসআই কামাল হোসেন, ফারুক আহমেদ, কনস্টেবল রকিবুল হাসান, জয়নাল আবেদীন, মিজানুর রহমান, ইয়ারুপ মিয়া, কাওছার হাবিব, শুকুর আলী আহত হন। তারা ওসমানীতে চিকিৎসা নেন।
শিক্ষার্থীদের ছোড়া গুলিতে কনস্টেবল সাবিনা আক্তারের বাম পায়ে গুরুতর জখম হয়। ইটপাটকেলে কনস্টেবল সঞ্জিত দাসের ডান হাতের আঙুল ভেঙে যায়। সিআরটির কনস্টেবল ফাহাদ হোসেন অপুর মাথা ফেটে যায় ইটের আঘাতে।
এদিকে, মঙ্গলবার এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাসভবনের সামনে অবস্থান ও শ্লোগান অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে সকাল ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বর থেকে মিছিল শুরু করেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্টবক্সে রাষ্ট্রপতি বরাবর চিঠি পাঠাবেন। এ চিঠিতে উপাচার্যের পদত্যাগের জন্য নির্ধারিত সময় বেঁধে দেওয়া হবে। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে উপাচার্য পদত্যাগ না করলে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।'
মামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, 'মামলা-হামলা করে ভয় দেখানো যাবে না। যৌক্তিক আন্দোলনে যতই বাধা আসুক তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।'
শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে গণস্বাক্ষর দিয়েছেন সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা। পঞ্চমদিনের আন্দোলন চলাকালে দুপুর ১টার দিকে ক্যাম্পাসে যান তারা।
আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে ছিলেন- কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেট জেলা আওয়ী লীগের সহসভাপতি ও সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহা প্রমুখ।
এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক উল্লেখ করে একাত্মতা প্রকাশ করে গণস্বাক্ষরও দেন। সেই সঙ্গে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
জানতে চাইলে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, 'আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের যৌক্তিক আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেছি। এ সময় তারা গণস্বাক্ষর চাইলে আমরা দিই। আমরা উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এটি সমাধানে আনতে চাই।'
এদিকে গতকাল সোমবার ছিল শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনের চতুর্থ দিন। এদিন শিক্ষার্থী-পুলিশ অনেকটা মুখোমুখি অবস্থানে থাকলেও রাত ১১টার দিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে অতিরিক্ত পুলিশ সরিয়ে নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে মূল ফটক থেকে পুলিশের সাজোয়া যান ও জল কামান সরানো হয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) রাত থেকে সিরাজুন্নেছা ছাত্রী হলের প্রভোস্টের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে ছাত্রীরা আন্দোলন শুরু করেন। এর এক পর্যায় রোববার (১৬ জানুয়ারি) দাবি আদায়ে ছাত্রীরা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখলে পুলিশ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে, রাবার ব্যুলেট, টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। শিক্ষার্থীরাও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা ও কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন।
ওইদিন রাতেই পদত্যাগ করেন হল প্রভোস্ট। উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়। দেওয়া হয় হল ছাড়ার নির্দেশ। কিন্তু শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
এসইউ/এমএসপি