কারা, কীভাবে বানালেন পিনোকিও’র পাপেটগুলো
‘পিনোকিও’ নামের বিখ্যাত সিনেমাটি এবার অস্কার জয় করেছে অ্যানিমেশনে। গিয়েরমো দেল তোরোকে এনে দিয়েছে জীবনের তৃতীয় অস্কার। এই পাপেটগুলো তৈরি করে দিয়েছেন ব্রিটেনের একদল পাপেটিয়ার। তাদের কাহিনী ও কিভাবে তৈরি করেছেন, বিশেষত্ব কী লিখেছেন ওমর শাহেদ
ব্রিটেনের গ্রেটার ম্যানচেস্টারের পাপেট মাস্টাররাই তৈরি করে দিয়েছেন গিয়েরমো দেল তোরোর পাপেটগুলো। যেগুলো তার ‘পিনোকিও’ নামের বিশ্বখ্যাত উপন্যাসটির সিনেমার চরিত্রগুলোতে অভিনয় করেছে এবং হাজার, হাজার দর্শকদের মন জয় করে অস্কারও জিতে নিয়েছে। তাদের বসবাস অলট্রিনামে। তারা ম্যাককিনন অ্যান্ড স্যান্ডার্স। হলিউডের পরিচালককে নিয়ে নেটফ্লিক্স স্টপ মোশন অ্যানিমেশনের হয়ে কাজ করেছেন। তাদের ‘পিনোকিও’ সেরা অ্যানিমেশন ছবির অস্কারটি পেয়েছে। এর আগে বাফটা এবং গোল্ডেন গ্লোবের পুরস্কারগুলোও নিয়ে এসেছে।
‘পিনোকিও’ হলো বিশ্বের প্রথম পাপেট ছবি যেটি তৈরি করতে থ্রিডি স্টেইনলেস স্টিল ব্যবহার করা হয়েছে। মেইড স্মার্টারের নর্থ ওয়েস্ট অ্যাডপশন প্রগ্রামের মাধ্যমে এই আবিস্কার করা সম্ভব হয়েছে। এই প্রকল্পটি সরকারী অনুদানে পরিচালিত হয়। সাহায্য করেছে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পীদের ডিজিটালাইজ কার্যক্রমগুলো। প্রকল্পটিতে নতুন প্রযুক্তি ও মেধা এবং দক্ষতাগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। সাহায্যগুলো লাভ করার ফলে ম্যাককিনন ও স্যান্ডার্স খুব ভালোভাবে তাদের কাজগুলো করতে পেরেছেন। তারা তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শও লাভ করেছেন। একেবারেই নতুন ও ব্যান্ডের থ্রিডি প্রযুক্তিগুলো লেজার প্রটোটাইপ ইউরোপকে নিয়ে তৈরি করেছেন। সেগুলোর বারবার অনুশীলন করেছেন।
ম্যাককিনন অ্যান্ড স্যান্ডর্সের সহ-প্রতিষ্ঠাতা পিটার স্যান্ডাস বলেছেন, ‘এত বেশি দেখা ও ভালোবাসা এবং দারুণ সফল ছবিটিতে পাপেটগুলো নির্মাণ অংশে কাজ করতে পেরে আমরা প্রবল উত্তেজনা বোধ করেছি। সবশেষে এটির মানে হলো এই, আমাদের দলের ভুবনটি একটি অস্কার জয়ী ছবিতে কাজ করেছে। এখানে টেস্ট করা হয়েছে আরো স্মাটভাবে তৈরি করার প্রকল্পের মাধ্যমে কী, কী লাভ ও সম্পন্ন করা যায়। যারা আমাদের এমন মূল্যবান প্রযুক্তিগত সাহায্য এবং অভিযানের সুবিধাগুলো প্রদান করেছেন, তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ। আমরা ইতিহাস বদলে দেওয়া প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করেছি। তাদের সবার সাহায্যেই আমাদের এই কাজের মাধ্যমে আগামী অস্কারজয়ী প্রযোজনাগুলোতে মনোযোগ দিয়ে কাজ করার বিরাট মানসিক শক্তি প্রদান করেছে।’
তাদের কোম্পানিটি পাপেটিয়ার পিটার স্যান্ডার্স ও ইয়ান ম্যাককিনের হাত ধরে ৩০ বছর আগে তৈরি হয়েছে। এই বিখ্যাত কোম্পানিটি শিশুদের সবচেয়ে প্রিয় টিভি চরিত্রগুলোর অন্যতম ‘বব দ্যা বিল্ডার’, ‘পোস্টম্যান প্যাট’ ও ‘দ্যা নিউ ক্ল্যাঞ্জারস’র পাপেটগুলো তৈরি করার ইতিহাসের স্বাক্ষী। এবারের অস্কার জয়ের আগে তাদের প্রতিষ্ঠানটি হলিউডের পরিচালক টিম বারটনের সঙ্গে তার ‘মাস অ্যাটাকস’ ছবিতে কাজ করেছে। তারা ২০১২ সালের থ্রিডি অ্যানিমেটেড সায়েন্স ফিকশন হরর কমেডি সিনেমা ‘ফ্রাঙ্কেনউইনি’তে কাজ করেছেন। ছবিটি স্যাটার্ন অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট অ্যানিমেটেড ফিল্মের পুরস্কারটি জয় করেছে। তারা ২০০৫ সালে টিম বারটনের ‘ক্রপস ব্রাইড’ ছবিতেও কাজ করেছেন। বারটনের প্রথম এই স্টপ মোশন ছবিটি ওয়ার্নার ব্রস পিকচার্স পরিবেশন করেছে। টেকনিক্যাল অ্যাচিভমেন্ট শাখায় অ্যানি অ্যাওয়ার্ড জয়ী সিনেমা হয়েছে। আমেরিকান চলচ্চিত্র নির্মাতা ওয়েস অ্যান্ডারসনের সঙ্গে তারা তার ‘ফ্যানটাসটিক মি.ফক্স’ ছবিতে কাজ করেছেন। সেটি ২০০৪ সালের ঘটনা।
স্যান্ডার্স বলেছেন, “থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের ক্ষেত্রগুলোতে এতগুলো বছরে আমরা বিপুল পরিমাণ জ্ঞানের জন্ম দিয়েছি ও অনেক কিছু আবিস্কার করেছি। সেগুলোর সবই এই ‘পিনোকিও’ ছবিতে আছে। আমাদের জন্য ‘মেইড স্মার্টার’ প্রকল্পটি একেবারে ঠিক সময়ে এসেছিল। আমাদের ফান্ড যোগাড় হয়ে দিয়েছে এই প্রকল্পটিই। মেটাল প্রিন্টিং মেশিনগুলোতে আমাদের সর্বশেষ উন্নয়নগুলো পরীক্ষা করার সুযোগটিও এসেছে। আমাদের লেজার প্রটোটাইপ ইউরোপের সঙ্গে অংশীদারিত্ব সত্যিকারভাবে সবাইকে বুঝতে স্বক্ষম করেছে যে, আমরা কিসের জন্য সংগ্রাম করছিলাম ও একটি চলমান পাপেট তৈরি করতে তাদের মেশিনগুলো সর্বোচ্চটি লাভ করতে সাহায্য করেছে। আমরা এই কাজগুলো মেটাল পেইনটিংয়ের ওপর কাজ করেও করেছি।”
“যে অ্যানিমেটররা পিনোকিও’র পাপেটগুলো ব্যবহার করেছেন তারা এর ফলাফলগুলোতে খুবই খুশি হয়েছেন। আর এটি ছিল খুবই আনন্দিত পাপেট ছবি।” তিনি আরো জানিয়েছেন, ‘আমাদের মেধাবীদের এই দলটিতে ১শ বেশি উদ্ভাবনীশক্তিসম্পন্ন এবং যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষরা কাজ করেছেন। তবে সবাইকে খেয়াল রাখতে হয়েছে যে, আমরা একটি অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক শিল্পবাজারে কাজ করছি। আমরা আমাদের সিনেমা শত্রুদের কাছে মাছের পোনার মতোই ছিলাম। ফলে পিনোকিওতে আমরা যা কিছুই লাভ করেছি, সেগুলোর কোনোটিই এই মেইড স্মার্টার প্রকল্পটি ছাড়া লাভ করতে পারতাম না। এই খেলায় আমাদের সামনে এগিয়ে দিতে সত্যিকারভাবে সাহায্য করেছেন তারা।’
‘দ্যা নথ ওয়েস্ট অ্যাডাপশন প্রোগ্রাম’র পরিচালক ডোনা এডওয়ার্ডস ‘পিনোকিও’র অস্কার জয়ের পর বলেছেন, ‘আমি পিনোকিওকে এমন একটি সাফল্যের জন্য তৈরি করতে নিজেদের ভূমিকার জন্য ম্যাককিনন অ্যান্ড স্যান্ডার্সকে অভিনন্দন জানাই। তাদের কোম্পানিটির প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে আত্মীকরণের জন্য আচরণ ও কর্মপ্রক্রিয়া মেইড স্মার্টারের মূল্যাবোধের সঙ্গে পুরোপুরিভাবে উপযোগী ছিল ও গতিবেগ সম্পন্ন ছিল। আমি আরো খুশি যে, তারা আমাদের দক্ষতা ও বিনিয়োগকে পুরোপুরি গ্রহণ করতে পেরেছেন ও এগুলোর মাধ্যমে নিজেদের তারা বিশ্বমঞ্চে নিয়ে গিয়েছেন। আমি যেকোনো নর্থ ওয়েস্ট পাপেট প্রস্তুতকারকে উৎসাহিত করছি, যারা প্রযুক্তিকে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে ভয় পাচ্ছেন। এভাবে তারা প্রযুক্তির মাধ্যমে তাদের ব্যবসাগুলোকে আরো কার্যকরভাবে করতে পারবেন ও সামনের দিকে এগিয়ে যাবেন। নিজেদের ব্যবসাকে তারা প্রযুক্তির মাধ্যমে টেকসইও করতে পারবেন। এজন্য তাদের মেইড স্মার্টার দলের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে।’
ওএসএফ/ ডিএসএস