শিশুরা খেতে চায় না, কী করবেন?
ছবি সংগৃহিত
শিশুদের খাওয়ার পরিমাণ কম বা খাবারের প্রতি অনীহা নিয়ে মায়েরা সব সময় চিন্তিত থাকে। বিশেষত ছয় মাস বয়সী থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে খেতে না চাওয়ার প্রবণতা বেশি লক্ষ করা যায়। দেখা যায় যে, মায়েরা সারাদিন শিশুকে খাওয়াতেই ব্যস্ত থাকছেন। বিশেষ করে দুই-তিন বছরের শিশুর মধ্যে এই কম খাওয়ার প্রবণতা খুব বেশি দেখা যায়।
জন্মের পর প্রথম ৬ মাস শিশু শুধু বুকের দুধ খায়। তারপর ধীরে ধীরে বাড়তি খাবার শুরু করা হয়। এ সময় সঠিক নিয়মে খাবার না দিলে খাবারের প্রতি শিশুরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে বা অনীহা প্রকাশ করতে থাকে। যেমন—একই খাবার প্রতিদিন দেওয়া, এতে শিশু একঘেয়েমিতে ভোগে।
খাবারের ঘনত্ব ঠিক না থাকা। খুব বেশি তরল বা একদম ব্লেন্ড করা খাবার দিলে শিশু খাবারের স্বাদ পায় না। আবার বেশি শক্ত বা থকথকে দিলে গিলতে পারে না।
বুকের দুধের পরপর বাড়তি খাবার দেওয়া। শিশুদের পাকস্থলী আকারে বেশ ছোট, দুধই তাদের পেটের অনেকখানি ভরিয়ে ফেলে। তাই এ সময় বাড়তি খাবারটা খেতে পারে না। ঘন ঘন এক–দুই ঘণ্টা পরপরই খাবার দেওয়া। এতে শিশু খাবারটুকু হজমের সময় পায় না, অনেক সময় বমিও করে দেয়।
১ থেকে ২ বছরের শিশুরা সাধারণত দুরন্ত প্রকৃতির হয়। খাবারের চেয়ে খেলাধুলা ও চঞ্চলতা বেশি করে। তাই বসিয়ে খাবার খাওয়ানো মুশকিল হয়ে যায়। তা ছাড়া এ বয়সে শিশুরা যদি চকলেট, চিপস, জুস—এ ধরনের বাইরের খাবারের অভ্যস্ত হয়ে যায়, তাহলে ঘরে তৈরি খাবার খেতে চায় না।
কী করবেন
১. শিশুদের খাবারের একটি রুটিন তৈরি করুন
৬ থেকে ৯ মাসের শিশুরা বুকের দুধের পাশাপাশি দিনে দুবার আধা বাটি পরিমাণ বাড়তি খাবার খেলেই যথেষ্ট। বুকের দুধের পাশাপাশি ধীরে ধীরে ১-২ চামচ করে বাড়তি খাবার খাওয়াতে হবে। ১০ মাস থেকে ১ বছরের শিশুকে আধা বাটি করে তিন বেলা, মাঝে ১–২ বার নাশতা দেওয়া যেতে পারে। এক বছর পর এক বাটি করে তিন বেলা খাবারের সঙ্গে নাশতা দিন। ২ বছরের পর থেকে ঘরের অন্য সদস্যদের সঙ্গে একই নিয়মে খাবে।
২. ঘরের পরিবেশ সুস্থ ও শিশুবান্ধব রাখুন
শিশুকে ধৈর্য ধরে যত্ন ও স্নেহ–মমতার সঙ্গে খাওয়ান। সম্ভব হলে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে বসিয়ে খাবার দিন। একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসিয়ে বিভিন্ন সুন্দর ও রংবেরঙের পাত্রে পরিবেশন করলে খাবারের প্রতি আগ্রহ বোধ করবে।
৩. খাবারের ঘনত্ব ঠিক রাখতে হবে
খাবার পুরোপুরি ব্লেন্ড করে বা তরল করে দেওয়া যাবে না। আধা শক্ত খাবার শিশু কিছুটা চিবিয়ে খাবে। এতে খাবারের স্বাদ বুঝবে। চিবিয়ে খাওয়া পরে দ্রুত কথা বলার ক্ষেত্রেও সাহায্য করবে।
৪. খাবারের বৈচিত্র্য আনুন
প্রতিদিন একই উপাদান দিয়ে রান্না করা খিচুড়ি না দিয়ে ভিন্নভাবে দিন। ডিমও প্রতিদিন সেদ্ধ না দিয়ে কখনো ভাজা বা পুডিং হিসেবে দিন। মাছ-মাংস খেতে না চাইলে অন্য যে খাবারটি পছন্দ করছে, তার মধ্যে মাছ মাংস ব্লেন্ড করে দিতে পারেন।
৫. শিশুকেও খাবার আয়োজনে যুক্ত করুন
খাবার রান্না ও পরিবেশনের সময় শিশুকে সঙ্গে রাখুন। একটু বড় হলে আঙুল দিয়ে ধরে খেতে পারে, এ ধরনের খাবারগুলো নিজের হাতে খেতে উৎসাহ দিন।
৬.পর্যবেক্ষণ করুন
আপনার শিশু ঘরে তৈরি কোন খাবারটি আগ্রহ নিয়ে খাচ্ছে এটি লক্ষ করুন। কিন্তু প্রতিদিন দেবেন না। এতে সেই খাবারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। ২/৩ দিন পর পর বানিয়ে দিন। আগ্রহের সঙ্গে খাবে।
৭. ক্ষুধা তৈরি করা
শিশুর মধ্যে ক্ষুধা তৈরি হওয়ার সময় দিতে হবে। এতে সে নিজেই খাবার খেতে আগ্রহী হবে। আপনার বাচ্চার যদি কথা বলার বয়স হয়, সেক্ষেত্রে মাঝে মাঝে তাকে জিজ্ঞেস করবেন, তার কী খেতে ইচ্ছা করছে। এতে ওই খাবারের প্রতি আগ্রহ জন্ম নিতে পারে।
৮. আনন্দিত রাখা
শিশুরা সাধারণত চঞ্চল ও দুরন্ত প্রকৃতির হয়। খাবারের চেয়ে খেলাধুলার প্রতি তাদের আগ্রহ বেশি থাকে। খেলাধুলা করলে শিশুর মন যেমন ভালো থাকবে, তেমনি ক্ষুধাও পাবে। খেলতে খেলতে খেতে চাইলে তাতে বাধা দেওয়া ঠিক নয়।
৯. সব শিশু সমান নয়
একজনের বাচ্চা বেশি খেতে পারছে বলে তার দেখাদেখি আপনার বাচ্চাকে একই পরিমাণ খাওয়াতে হবে, এই ভাবনা অমূলক। বড়দের মধ্যে যেমন ভিন্নতা আছে, ছোটদের মধ্যেও আছে। যদি বাচ্চা একেবারেই কম খায়, সেক্ষেত্রে কিছুক্ষণ পর পর পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন।
শিশুকে নাদুসনুদুস বানানোর চেয়ে সুস্থ রাখা বেশি জরুরি। তাই যদি মনে হয়, শিশুর শরীরে পুষ্টির অভাব হচ্ছে বা খাওয়ার অভাবে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।