শহীদ শেখ রাসেল হলে হামলা করেছে সন্ত্রাসীরা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শহীদ শেখ রাসেল’, ‘স্বাধীনতা দিবস’, ‘বিজয় দিবস’ হলে ব্যাপক ভাঙচুর করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্রলীগের নেতা জাহাঙ্গীর আলম ও তার দলবল।
৬ এপ্রিল তিনি তার দলবল নিয়ে শেখ রাসেল হলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে অবৈধভাবে সিট দখল করতে যান। তবে সাধারণ ছাত্ররা তাদের বাধা দেন। এরপর শেখ রাসেল হলের প্রভোস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমসের অধ্যাপক ড. ফায়েকুজ্জামান সেখানে এসে হাজির হন। তাকেও এই বখাটে ছাত্রনেতা লাঞ্চিত করেন দল নিয়ে।
এরপরও না পেরে তারা শেখ রাসেল, স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস হলে ভাঙচুর শুরু করেন। ব্যাপক ভাঙচুরের সময় তাদের সঙ্গে বহিরাগতদেরও দেখা গিয়েছে। তবে তাদেরও বাধা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির আবাসিক ছাত্ররা।
তাদের সঙ্গে দফায়, দফায় ঝামেলা হয়েছে সাধারণ ছাত্রদের।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী এবং সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করেছেন।
আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি সফিকুল আহসান ইমন বলেছেন, ‘হলে সিট দখল করতে গিয়ে জাহাঙ্গীর আলম ও তার দলবলের সঙ্গে সাধারণ আবাসিক ছাত্রদের বাদানুবাদ হয়েছে। এরপর প্রভোস্ট স্যারের সঙ্গেও তারা বেয়াদপি করেছে।’
এই বিষয়ে শহীদ শেখ রাসেল হলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ছাত্র বলেছেন, ‘আমরা পরিবার-পরিজন রেখে অনেক দূরে গোপালগঞ্জের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকি। আমাদের আবাসন ব্যবস্থার সংকট আছে। এর মধ্যে নানা ধরণের অছাত্ররা দলবদ্ধ হয়ে উৎপাত ও ঝামেলা এবং মারধর করে। তাদের এই দৈনন্দিন সন্ত্রাসে আমরা সবাই অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছি। ফলে এই জাহাঙ্গীর ও তার গ্রুপসহ অন্য সবার বিষয়ে উপাচার্য স্যার দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন বলে আমরা আশাবাদী এবং জোর দাবী জানাই।’
তারা জাহাঙ্গীর আলম ও তার দলবলের বিরুদ্ধে হলে সিট দখল ও সাধারণ ছাত্রদের ওপর হামলার অভিযোগ করেছেন।
অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলম ইইই (ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং) বিভাগের ২০১১-’১২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। ক্যাম্পাসে আছেন অন্তত ১০ বছর ধরে। এতদিনে অত্যন্ত দামী এই বিভাগ থেকে তার দুবার পাশ করে যাবার কথা। তিনি এখন সাবেক। তবে এই প্রতিবেদক তাকে ঘটনার বিষয়ে জানতে মোবাইলে ফোন করেছেন। তিনি তখন মোবাইল বন্ধ রেখেছেন।
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও গণধর্ষণ মামলার বাদী অধ্যাপক ড. রাজিউর রহমানকে ফোন করলে তিনি ব্যস্ত বলেছেন। তবে ঘটনার সময় ছাত্রদের পাশে দাঁড়ানো ও শহীদ শেখ রাসেল হলের প্রভোষ্ট অধ্যাপক মো. ফায়েকুজ্জামান মিয়া বলেছেন, ‘আমাদের কাছে ছাত্র, ছাত্রীরা সন্তানের মতো। এই হলের প্রভোস্ট হিসেবে তাদের সবার প্রয়োজনে স্বর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমার দায়িত্ব বলে আমি এগিয়ে গিয়েছি। তবে কাল রাতের ঘটনাটি আমার কাছে দুঃখের। তারা মানে জাহাঙ্গীর আলম ও তার দলবল সাধারণ ছাত্রদের সামনে আমাকে অপমানসূচক কথা বলে লাঞ্চিত করছে। আশা করি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’
এই প্রতিবেদক ও বিশ্ববিদ্যালয়টির অন্যতম সাংবাদিক আরো জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে বর্ধিতকরণ চলছে। নির্মাণ কাজ শেষ হলে অবাসন সংকটের সমাধান হবে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপকরা। এর মধ্যেই ভিন্ন, ভিন্ন ছাত্রনেতারা সিট দখল ও আধিপত্য বিস্তারের জন্য প্রায়ই এগিয়ে আসেন।
ওএস।