অযৌক্তিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা অনুচিত
আমি মনে করি শেয়ার বাজার ভালো হবে। তবে এটি নির্ভর করছে মূলত আমাদের ম্যাক্রো ইকোনোমিকে ফান্ডামেন্টাল নিয়ন্ত্রণে থাকার মধ্য দিয়ে। এক্সচেঞ্জ রেট যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে আমাদের সমস্যা হবে। নানা কারণে কিছু অস্থিরতা অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় থাকবে। কিন্তু অযৌক্তিকভাবে অস্থিরতা বৃদ্ধি করা অনুচিত বলে আমি মনে করি।
তা ছাড়া, এই সময়ে শিল্প কারখানাগুলো বড় ধরনের কোনো বিনিয়োগে যাবে না। তা ছাড়া, বিদেশি বিনিয়োগও আমরা খুব বেশি আশা করতে পারছি না। কারণ, বিনিয়োগকারীরা গত ছয় মাসে শেয়ার বাজার থেকে বহু টাকা নিয়ে গেছে। সেটি যে ফেরত আসবে এটি আশা করা যায় না। ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ এখনো চলমান। পৃথিবী কখন শান্তিময় হয় সেটি অনিশ্চিত। এর মধ্য দিয়েই আমাদের এগোতে হবে।
সরকারের নানা খাতে দুর্নীতি হচ্ছে, অপচয় হচ্ছে, তার মূল্য জনগণকেই দিতে হচ্ছে। আইএমএফের প্রধান এসেছেন। তাদের সবকিছু যে সাধারণ জনগণের পক্ষে যাচ্ছে তা নয়, কিছু শর্ত হয়ত দরকারও আছে। আমরা নিজেরা কিছু বলি না বলে এরা সেগুলো দিচ্ছে। কিন্তু ভর্তুকির ক্ষেত্রে যেসকল শর্ত আইএমএফ দেয় সেগুলো হজম করা আমাদের জন্যও কঠিন বটে।
আমাদের কথা, যেসকল খাতে ভর্তুকি দেওয়া উচিতই না, সরকার এগুলোই দিয়ে যাচ্ছে। সেগুলো সরকারের বিবেচনা করা উচিত। যেমন ক্ষতি গুণছে এ রকম কিছু কারখানা আছে সরকারের। এগুলোতে বছরের পর বছর ভর্তুকি চালানো কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।
আমার মতে শেয়ায় বাজারে উত্থান পতনের মতো টানাপোড়েন থাকবে। শেয়ার বাজার অর্থনীতিকে যেমন টেনে উপরে তোলে, আবার শেয়ার বাজারে অস্থিরতা দেখা দিলে তখন হতাশাকে চারিদিকে ছড়িয়ে দেয়। শেয়ার বাজার ২০২২ এর শেষ অংশে ভালো যায়নি। বেচাকেনা না হলে শেয়ার বাজারে প্রাণ সঞ্চালিত হবে না। শেয়ার বাজারে আসা সহজ কিন্তু এখান থেকে বের হওয়া কঠিন। অস্থিরতা অর্থনীতিতে থাকবে।
এখন আসলে সবকিছু নির্ভর করছে, আমরা যদি একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের দিকে যেতে পারি। সেখানে সমস্যা হলে সেটি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। অর্থ সহজলভ্য কিছু লোকের জন্য, তারাই পাচার করছে। কিছু ব্যবসায়ী সরকারের আনুকূল্যে থেকে, যে ব্যবসাতে অতিরিক্ত লাভ করেছে। অর্থ পাচারও তারাই করেছে। এ ছাড়া, সাধারণ মধ্যবিত্তরা কেউ অর্থ পাচার করতে পারেও না। এরা যদি জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকত তাহলে এসব হত না। সরকারের যদি মদদ না থাকে, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের মাধ্যমে যে কণ্ঠরোধ, মতামত দেওয়া এগুলো যে সীমিত হয়ে গেছে, এটি হয়েছে যেখানে গণতন্ত্র অনুপস্থিত, যদি গণতন্ত্র থাকত তাহলে এতসব কিছু দরকার হত না।
কাজেই আমাদের আশা যেমন আছে, হতাশাও আছে। খুব বেশি আশা করাও ঠিক না আমাদের। সামাজিক অস্থিরতা থাকবেই। সেটি নিবারণ করতে হলে একটি ভালো নির্বাচনের দিকে আমাদের যেতে হবে। এদেশে ভালো একটি নির্বাচন কীভাবে করা যায়, সরকার সেটি ভেবে দেখতে পারে।
বিদেশিদের সঙ্গে কথা বলতে পারে। বাংলাদেশের যারা বন্ধু রাষ্ট্র তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারে তাদের মতামত উপদেশ শুনতে পারে। সবশেষে দেশটির যেন মংগল হয়, দেশের অর্থনীতির ভিত্তিটুকু যেন মজবুত হয় সেদিকটি সবার আগে সবাইকে ভাবতে হবে।
আবু আহমেদ: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়