নববর্ষে মানবতা ও সাম্যতার জয় হোক
সময় একটি বহমান প্রক্রিয়া। আমাদের প্রয়োজনে আমরা সময়কে নিজেদের মতো বিভাজন করে নিই। ব্যক্তি থেকে শুরু করে সমাজ, বিশেষ করে সভ্যতার বিশেষ মোড়ে মোড়ে আমরা মানবগোষ্ঠী নিজেদের সময়কে বিভাজন করে নিয়েছি। তখন থেকেই সময় গণনার শুরু হয়েছে।
সময়ের সঙ্গে সুর্যের একটি সম্পর্ক আছে। এক্ষেত্রে সুর্যোদয় ও সুর্যাস্ত একটি বিষয়। সুর্যোদয় মানে যখন দিনের শুরু হবে এবং সূর্যাস্ত মানে যখন রাতের আবির্ভাব ঘটবে। সেই উপায়ে যেভাবে দিনরাত সপ্তাহ মাস গণনা করা হয় সেটি মূলত পাশ্চাত্যরীতি। পাশ্চাত্যরীতিতে মধ্যরাত থেকেই সময় গণনার একটি প্রচলন রয়েছে। আমরা যে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন করি যা পাশ্চাত্যে বিশেষভাবে উদযাপন করা হয়, যেটির সম্প্রসারণ ঘটে গেছে পৃথিবীময়। সারা পৃথিবী পাশ্চাত্যের সঙ্গে একটি সামগ্রিক মানবিক পর্যায় লাভ করেছে।
১লা জানুয়ারি থেকেই ইংরেজি নববর্ষ অথবা নববর্ষ চালু হয়েছে। এখন আমরা সরকারিভাবে আমাদের বর্ষপুঞ্জি ইংরেজি হিসেবেই অনুসরণ করে থাকি। যদিও বাংলা নববর্ষ অর্থাৎ উৎসবের আনন্দ আমরা অনুভব ও উপভোগ করি বাংলা নববর্ষের দিনেই। পহেলা বৈশাখ শুরু হয় সূর্যোদয় থেকে এবং ইংরেজি নববর্ষ শুরু হয় মধ্যরাত থেকেই।
আমরা জানি যে, বহমান সময়কে বিচ্ছিন্ন করা যায় না। যেভাবে নদীর পানিকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না। মানুষের প্রয়োজনেই মানুষকে কাজ করতে হয়। সময় অনন্ত কিন্তু মানুষ জীবন সময়ের বাধা ধরা নিয়মে চলে। যেমন কারও জীবন একশ বছর কারও পঞ্চাশ বছর কারও ষাট বছর । তাহলে জীবনটি আসলে কী? এটি একটি বহমান মানব চক্র।
নববর্ষ এসেছে। আমরা এই নববর্ষকে মানবতা ও সাম্যতা দুটিকে একসঙ্গে মিলিয়েই উদযাপন করছি। নববর্ষ ব্যক্তি থেকে পরিবার, পরিবার থেকে সমাজ্, সমাজ থেকে জাতিসহ সারা পৃথিবী এই পহেলা জানুয়ারিতে নববর্ষ উদযাপন করছি। এর মাধ্যমেই মানব জাতির যে অগ্রগমন সেটি আরও প্রসারিত হবে এবং পৃথিবীতে শান্তি আসবে এটিই কামনা করি। কিন্তু এই মুহূর্তে পৃথিবীতে শান্তি আছে এটি বলা যাবে না। প্রতিবেশি রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে যুদ্ধ হচ্ছে, মানুষের ভেতর প্রাধান্য বিস্তারের অহমিকা অনেকগুণ বেড়ে গেছে।
একইসঙ্গে যে কোভিডসময় আমরা পার হয়েছিলাম, সেই কোভিডের প্রকোপ আবারও বেড়ে গেছে। আমরা তারই পদচারণা আবার দেখতে পাচ্ছি। তা সত্ত্বেও আমরা সবকিছুকে জয় করে মানবজাতির জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও মানবজাতির জন্য একটি উন্নত পথরেখা অর্থাৎ সোনার বাংলা বাস্তবায়নের যে স্বপ্ন সেটিই বাস্তবায়িত হবে, সেটিই আমরা কামনা করি। মানুষের জয় হোক। জয় বাংলা, জয় নববর্ষ। মানুষের সৃষ্টিশীলতা অমর হোক ।
মুহম্মদ নূরুল হুদা: বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক