বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫ | ২৭ ফাল্গুন ১৪৩১
Dhaka Prokash

শিক্ষায় কতটা এগোলাম, কতটা এগোতে পারতাম

স্বাধীনতার পর থেকে এ র্পযন্ত আমাদের শিক্ষা কতটা এগোলো, কতটা এগোতে পারত,সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে এই দীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশ যেসব রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক বাস্তবতা মোকাবেলা করে এগিয়েছে, তার একটা খতিয়ান নেওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজন এজন্য যে অন্যান্য অনেক ক্ষেত্র থেকেও শিক্ষায় এর অভিঘাতটা বহুমুখী এবং শক্তিশালী। যে সরকারই ক্ষমতায় এসেছে, ব্যবসা-বাণিজ্যকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, ব্যবসায়ীরাও একটা সময়ে এসে রাজনীতিতে তাদের আসন পাকা করেছেন। যোগাযোগ, স্বরাষ্ট্র, কৃষি ও প্রতিরক্ষাতেও বিনিয়োগের ধারাবাহিকতা দেখা গেছে,নানাভাবে তা বেড়েছেও। কিন্তু শিক্ষার ক্ষেত্রে সেই উদ্যম বা আগ্রহ চোখে পড়েছে কম।

মোটা দাগে শিক্ষা ক্ষেত্রে বাস্তবতাগুলোর একটি প্রেক্ষাপট তৈরি করলে কয়েকটি বিষয় গুরুত্ব পায়। যেমন, পঞ্চাশ বছরের রাজনীতি। স্বাধীনতার পর থেকে অনেক ধরণের মানসিকতার, রাজনৈতিক মত ও চিন্তার সরকার এদেশ পরিচালনা করেছে। ১৯৭৫ সালের আগস্টের ১৫ তারিখ পর্যন্ত ছিল সংসদীয় গণতন্ত্র, ওই দিনের পর থেকে এলো সামরিক শাসন, যা মাঝে মাঝে ছদ্মবেশী গণতন্ত্রের মোড়কেও ১৯৯০ এর গণ-অভ্যুত্থান পর্যন্ত চলেছে। এরপর বাংলাদেশ গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তন করল, কিন্তু ২০০৬ সালের ১ নভেম্বর আবার সামরিক শাসনে ফিরে গেল। গণতন্ত্র আবার ফিরে এল ২০০৯ এর শুরুতে। তবে গণতন্ত্র বলতে বহুদলের অংশগ্রহণে একটি কার্যকর ও প্রাণবন্ত জাতীয় সংসদ খুব অল্প সময়ের জন্যই এদেশের মানুষ পেয়েছিল। এর ফলে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা, নানা বিষয়ে জাতীয় কথোপকথন ও গঠনমূলক আলোচনার অভাবটা প্রকটভাবেই থেকে গেছে। অর্থনৈতিক অগ্রগতি। এই অগ্রগতির একটি প্রতিফলন অবশ্য পড়েছে পুঁজির অধিষ্ঠানে, নানান ক্ষেত্রে বাজার সৃষ্টিতে,পণ্যায়নের একটা সার্বিক আবহ তৈরিতে এবং সামাজিক বৈষম্যের প্রকট আকার ধারণের ক্ষেত্রে। তবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়িয়েছে, যার ফলে সামাজিক গতিশীলতা বেড়েছে।

কৃষি উন্নয়ন। যার ফলে প্রান্তিক কৃষকও অনেক ক্ষেত্রে তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে উৎসাহী হয়েছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে সমাজের আগ্রহ বাড়া ও অঙ্গীকার সুদৃঢ় হওয়া। এর ফলে শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে অগ্রগতি। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি ও পর্যটন সেবা খাতসহ অনেক অঞ্চলেই ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। সমাজ আরও গতিশীল হয়েছে, মানুষে মানুষে, অঞ্চলে অঞ্চলে দূরত্ব কমেছে। শিক্ষার সম্প্রসারণের জন্য এর প্রয়োজন ছিল। সাম্প্রদায়িকতার উত্থান, যা শিক্ষা ও সংস্কৃতিসহ নানা ক্ষেত্রে নেতিবাচক, দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রাখছে।

শিক্ষার ক্ষেত্রে এসব প্রতিটি বিষয় দৃশ্যমান এবং অদৃশ্য-দু’ধরণের অভিঘাত রেখেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে এবং আগ্রহে প্রস্তুত করা কুদরত-এ-খোদা শিক্ষা কমিশন প্রতিবেদন বাস্তবায়িত হলে আমাদের শিক্ষাচিত্র উজ্জ্বল হত, আমাদের আকাঙ্ক্ষা অনেকটাই মিটতো, কিন্তু ১৯৭৫ পরবর্তী সরকারগুলি সেই প্রতিবেদন হিমাগারেই রেখে দিল শিক্ষা চলল গতানুগতিক পথে। ভাগ হয়ে গেলে তিনি ধারায়, এবং ফেরার কোনো পথ না রাখায় দেশ একটা বড় বিপর্যয়ের সামনে পড়ল। পৃথিবীর আর কোনো দেশের শিক্ষা এভাবে তিন পায়ের ওপর ভর দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে কিনা, কে জানে। সামরকি এবং আধা সামরকি সরকারগুলির আমলে সাম্প্রদায়িকতা তীব্র রূপ ধারণ করে, যা উদারনৈতিক, ভবিষ্যৎমুখী শিক্ষাকে বাধাগ্রস্ত করে একে অনেকটাই পেছনে নিয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা চলেছে কোনো শিক্ষা নীতি ছাড়াই। আওয়ামী লীগ সরকার অনেক আগ্রহে-আয়োজনে একটি শিক্ষানীতি তৈরি করে, যা ২০১০ সালে জাতীয় সংসদে গৃহীতও হয়। কিন্তু এটি অনেকটা কাগজে-কলমেই থেকে গেছে।

অর্থনীতিতে উল্লম্ফন ঘটলেও শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দ এই পঞ্চাশ বছরে আমাদের জিডিপির ২ শতাংশের বেশি বাড়েনি। বড় বিনিয়োগ না হলে শিক্ষাক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন হবে না এবং বড় পরিবর্তন না হলে ২০৪১ সাল, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব--এসব কিছুর জন্য আমরা প্রস্তুত হতে পারব না। তবে শিক্ষার ক্ষেত্রে সরকারি বিনিয়োগ না বাড়লেও সামাজিক বিনিয়োগ বেড়েছে। কোনো পরিবারই এখন একেবারে নি:স্ব, দরিদ্র পরিবারও সন্তানদের শিক্ষাহীন রাখতে চায় না। শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়লে এই সন্তানরা নিজেদের ভবিষ্যৎতা দাবী করে নিতে পারবে। কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণও শিক্ষায় বড় অবদান রেখেছে, কারণ কর্মজীবী নারী শিশুদের শিক্ষিত করতে প্রত্যয়ী হন। দেশে পণ্যায়ন সংস্কৃতির প্রচলন হলে শিক্ষাতেও তার প্রভাব পড়েছে। শিক্ষা এখন বাজারমুখি, শিক্ষার সনদগুলির মূল্য এখন পণ্যের বাজার নির্ধারণ করে। এটি ভবিষ্যতের জন্য সুসংবাদ নয়।

এসব প্রভাব ও প্রতিবন্ধকতা সত্তেও পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশে শিক্ষা এগিয়েছে যতটা না মানের দিক থেকে, তার থেকে বেশি পরিমাণ ও বিস্তারের দিক থেকে। এই বৃদ্ধির একটি বিস্তারিত পরিসংখ্যানচিত্র দেয়া গেলে বিষয়টি পরিস্কার হত, কিন্তু স্থানাভাবে তা দেয়া সম্ভব নয়। তারপরও বলা যায়, প্রাথমিক পর্যায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এই বৃদ্ধি বা বিস্তার ১৯৭১ সালের বিজয়ের মাস থেকে এখন পর্যন্ত বিস্ময়কর। ১৯৭১ সালে সকল ধরণের প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা ছিল ২৭,১৩৪; এখন তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪০,০০০ এর ধারে কাছ। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে বিশবিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল মাত্র ৬; ২০২২ সালে সেই সংখ্যা ১৬০ বা তারও বেশি। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সংখ্যাও বেড়েছে, তবে অনুপাতের হিসাবে অনেক বেশি। পাঠ্য বিষয়, শিক্ষাসূচি, ও বিশেষায়িত পাঠক্রমের ক্ষেত্রেও বৃদ্ধির চিত্রটি উর্দ্ধমুখী। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যশিক্ষা, প্রকৌশল ও স্থাপত্য, কৃষি ও ব্যবসা-বাণিজ্য সকল ক্ষেত্রেই এখন শিক্ষার প্রচুর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। চামড়া প্রযুক্তি, সিরামিক, গ্রাফিক শিল্প অথবা টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের মতো বিষয়েও এখন বাংলাদেশে উচ্চতর পর্যায়ে পাঠ দেয়া হয়। তথ্য প্রযুক্তি, বিশেষ করে কম্প্যুটার ও ইলেকট্রনিক ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উন্নতিটা হয়েছে প্রকৃতই আশাব্যঞ্জক। সরকার সারা দেশের স্কুলগুলিকে তথ্য-প্রযুক্তিসক্ষম করতে, সেগুলিতে ইন্টারনেট সংযোগ ও সেবা দেয়ার জন্য একটি উচ্চাভিলাশী প্রকল্প হাতে নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের--বিশেষ করে মেয়েদের--বৃত্তি ও উপবৃত্তি বাড়ানো হয়েছে, দশম শ্রেণী পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করা হচ্ছে, এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে, শিক্ষক প্রশিক্ষণ আরো কার্যকর ও নিবিড় করা হচ্ছে।

অর্জনের তালিকাটা যথেষ্ট দীর্ঘ। পঞ্চাশ বছরে অনেক দেশ হয়তো আমাদের থেকে অনেক বেশি এগিয়েছে। এই এশিয়ারই অনেক দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রগতি ঈর্ষনীয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল একটা ভগ্নাংশ থেকে, পূর্ণ সংখ্যা থেকেও নয়। দারিদ্র, ক্ষুধা এবং কর্মহীনতা এমনই প্রবল ছিল যে এক বিশাল সংখ্যক পরিবার পড়াশোনাকে বিলাসিতা হিসেবেই দেখত। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে এতদূর আসতে পারাটা সামান্য কথা নয়। সব চাইতে আশ্চর্যজনক যা, সেই কঠিন, ভাঙ্গা-পা নিয়ে উঠে দাঁড়াবার সময়ে বঙ্গবন্ধু এক দূরদর্শী পরিকল্পনা করে ফেলেছিলেন। কুদরত-এ-খোদা শিক্ষা কমিশন গঠন ছিল তার প্রথম পর্যায়। তিনি শিক্ষায় যে বড় বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, কমিশনের প্রতিবেদনে তা-ই লিপিবদ্ধ হয়েছিল জিডিপির ৫-৭ ভাগ! অবাক, বঙ্গবন্ধুর সেই সাহসী এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন আওয়ামী লীগ সরকার এই এতগুলো বছরও করতে পারেনি। পারলে আমাদের শিক্ষার মান আকাশমুখী হতে পারত।

আমরা সবাই স্বীকার করি, শিক্ষার বিস্তার ঘটেছে। এখন অর্জন ঘটাতে হবে মানের ঘরে। মানহীন শিক্ষা নিয়ে আমরা এই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে নিজেদের জায়গাটা ধরে রাখতে পারব না, এগিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা। মানের উন্নতিতে একটা উল্লম্ফন ঘটাতে হবে পাঠ্যক্রম, পাঠ্যবই, শিখন, শিক্ষাদানসহ শিক্ষাক্রমের সকল ঘওে; মানের উন্নতি ঘটাতে হবে ভাষাশিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, গণিত ও অন্যান্য সকল বিশেষায়িত শিক্ষায়; শ্রেণীকক্ষ, পাঠাগার, গবেষণাগারসহ সকল ভৌত কাঠামো ও সুযোগ সুবিধায়। এ কথাটি সারা বিশ্বে স্বীকৃত যে ভাল শিক্ষক ছাড়া ভাল শিক্ষা দেয়া, ভাল শিক্ষার্থী তৈরি করা সম্ভব নয়। আর ভাল শিক্ষক পেতে হলে শিক্ষকদের বেতন ভাতা, সুযোগ সুবিধা প্রচুর বাড়াতে হবে। যদি একদিন দেখা যায়, পেশার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা ও গবেষণা এবং শিক্ষকতাকে এক নম্বরে রাখছেন, তাহলে বুঝতে হবে আমরা সত্যিকারভাবে উল্লম্ফনটা ঘটাতে পারছি।

মানের উন্নতির জন্য প্রথমেই প্রয়োজন হবে রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় সদিচ্ছা। সেটি আমাদের না থাকার কথা নয়। কিন্তু এর প্রতিফলন ঘটাতে হবে শিক্ষার ক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়িয়ে যাতে সকল ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় খরচের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ সংকুলান হয়। সেই সঙ্গে মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ এবং আর্থিক স্বচ্ছতা ও বাস্তবায়নদক্ষতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বর্তমানে যেভাবে আমরা শিক্ষা দিচ্ছি, যা মুখস্থ-নির্ভর, পরীক্ষাসর্বস্ব, নিরানন্দ এবং অসৃজনশীলই রয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন, তা আমূল বদলাতে হবে।

কোচিং বাণিজ্য এবং নোট-বই, গাইড বই এ দেশে কোনোদিনই নিষিদ্ধ করা যাবে না, যদি না আমরা শিক্ষার পদ্ধতিতে এই পরিবর্তন আনতে পারি। আমাদের এমন শিক্ষা পদ্ধতির প্রয়োজন, যাতে শ্রেণীকক্ষেই সব শিক্ষা দেয়া হয়ে যাবে। তখন কোচিং বাণিজ্য এমনিতেই তার দোকানে ঝাঁপি ফেলবে। সম্ভব, এ সবই সম্ভব। এবং তিনটি ধারাকে একটি মূল ধারাতে সন্নিবেশিত করাও সম্ভব। কিন্তু তার জন্য বঙ্গবন্ধুর সাহস, নিষ্ঠা, এবং দূরদৃষ্টির প্রয়োজন। সেই সম্ভাবনাও এদেশের আছে। আরও পঞ্চাশ বছর পর কেউ যখন বাংলাদেশের শিক্ষা নিয়ে লিখবেন, তিনি হয়তো ওই সম্ভাবনার বাস্তবায়ন দিয়েই শুরু করবেন।

লেখক: কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ

Header Ad
Header Ad

শুক্রবার এক লাখ রোহিঙ্গার সাথে ইফতার করবেন ড. ইউনূস ও গুতেরেস

শুক্রবার এক লাখ রোহিঙ্গার সাথে ইফতারে করবেন ড. ইউনূস ও গুতেরেস। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ সফরে আসছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বিকেল ৫টায় তিনি বাংলাদেশে পৌঁছাবেন। শুক্রবার (১৪ মার্চ) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে তিনি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন এবং সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গার সাথে ইফতারে অংশ নেবেন।

বুধবার রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান। তার বক্তব্য অনুযায়ী, জাতিসংঘ মহাসচিব তিন দিনের এই সফরে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ও কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।

১৪ মার্চ সকালে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও উচ্চ প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করবেন গুতেরেস। পরে তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করবেন। উভয়ে একসঙ্গে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হবেন এবং সন্ধ্যায় ঢাকায় ফিরে আসবেন।

কক্সবাজার সফরের সময় ড. মুহাম্মদ ইউনূস মডেল মসজিদ উদ্বোধন করবেন। এছাড়া রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার বিষয়টি আলোচনা করবেন গুতেরেস ও ইউনূস।

প্রেস সচিব জানান, রোহিঙ্গা সংকটকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও গুরুত্বের সাথে তুলে ধরতে কাজ করছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। গুতেরেসের সফরের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা বৃদ্ধির আশা প্রকাশ করেন তিনি।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা সংকটের সময়ও বাংলাদেশ সফর করেছিলেন আন্তোনিও গুতেরেস। এটি তার দ্বিতীয় সফর। সফরের অংশ হিসেবে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সাথে বৈঠক ও একটি প্রেস ব্রিফিংয়ের পরিকল্পনা রয়েছে।

Header Ad
Header Ad

কুবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ, পরীক্ষা স্থগিত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (ইনসটে অধ্যাপক কাজী এম. আনিছুল ইসলাম)। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের ৩য় বর্ষ ২য় সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার উত্তরসহ প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠেছে বিভাগটির সহকারী অধ্যাপক কাজী এম. আনিছুল ইসলামের বিরুদ্ধে। অভিযোগের ভিত্তিতে আগামীকাল (১৩ মার্চ) অনুষ্ঠিতব্য উক্ত শিক্ষাবর্ষের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।

বুধবার (১২ মার্চ) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান মাহমুদুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে মঙ্গলবার (১২ মার্চ) রাতে একটি বেনামি মেইল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টর, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে মেইলটি করা হয়।

মেইলে উল্লেখ করা হয়, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১৫ ব্যাচের সেমিস্টার পরীক্ষা চলছে। এই সেমিস্টারের প্রতিটি কোর্সের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। এই কোর্স না শুধু প্রতিটি কোর্সের পরীক্ষারই প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। বিভাগের শিক্ষক কাজী আনিছ এক নারী শিক্ষার্থীকে এগুলো দিয়েছেন। মেইলের সঙ্গে বিগত পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর সম্বলিত কিছু পিডিএফ সংযোজন করা হয়েছে। পাশাপাশি কয়েকটি পিডিএফের মেটাডাটা উল্লেখ করা হয়।

মেটাডেটা বিশ্লেষণে শিক্ষক কতৃক সরবরাহ করা পিডিএফ ফাইল তৈরির ডিভাইস, তারিখ উল্লেখ রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শিক্ষক কাজী এম. আনিছুল ইসলাম বলেন, 'এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।'

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান (ভারপ্রাপ্ত) মাহমুদুল হাসান বলেন, 'আমরা উদ্ভুত পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছি। তবে এই বিষয়টি যেহেতু বেনামি মেইল থেকে আসা তাই আমরা সরাসরি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না যদি শিক্ষার্থীরা লিখিত অভিযোগ না দেয়।'

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ও প্রভাষক জাকিয়া জাহান মুক্তা বলেন, 'প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠেছে, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। আমরা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করবো। অভিযোগটি ভিত্তিহীন নাকি সত্য, তা তদন্তের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।'

পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়ে তিনি বলেন, 'প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠার পর আমরা শিক্ষকরা মিলে এই ব্যাচের পরীক্ষা আপাতত স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ নূরুল করিম চৌধুরী বলেন, 'প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে এ সংক্রান্ত একটি মেইল পেয়েছি। আমরা ঐ বিভাগের চেয়ারম্যানসহ কথা বলেছি। আগে বিভাগের একাডেমিক কমিটি বিষয়টি দেখবে। তারপর এই বিষয়ে তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল বলেন, 'আমাদের কাছে এখনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। বিভাগ বা শিক্ষার্থীরা আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়ে সেই অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিব।'

Header Ad
Header Ad

লাকিকে গ্রেফতারসহ পাঁচ দাবিতে শাহবাগে ইনকিলাব মঞ্চের মানববন্ধন

ছবি: সংগৃহীত

গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক লাকি আক্তার ও তার সহযোগীদের গ্রেফতারসহ পাঁচ দফা দাবিতে শাহবাগে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে ইনকিলাব মঞ্চ। বুধবার (১২ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে মানববন্ধন করে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদী এ ঘোষণা দেন।

শরিফ ওসমান হাদী অভিযোগ করেন, গত ১৪ বছরে দেশে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আলেমদের উপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। তার মতে, লাকি আক্তারসহ সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতার করা না হলে এই আন্দোলন চলবে।

ইনকিলাব মঞ্চের ঘোষিত পাঁচটি দাবি হলো:

১. ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ৯০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করা এবং মিথ্যা মামলাকারীর বিচার করা।

২. পুলিশের উপর হামলাকারী ও দেশকে অস্থিতিশীল করতে মব তৈরি করা ব্যক্তিদের গ্রেফতার করা।

৩. শাহবাগের কসাই লাকী আক্তারসহ সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতার করে ২০১৩ সালের সব ষড়যন্ত্র উন্মোচিত করা।

৪. জাতিসংঘকে অন্তর্ভুক্ত করে শাপলা চত্বরে ও অন্যান্য গণহত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করা।

৫. জুলাই গণহত্যার দৃশ্যমান বিচার শুরু করে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন ইনকিলাব মঞ্চের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবেদ, ঢাবি শাখার সদস্য সচিব ফাতিমা আক্তার ঝুমা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবি জুবায়ের। তারা দাবি করেন, শাহবাগের আন্দোলনকারীরা নতুন করে সংঘবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে এবং এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে তারা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

আন্দোলনকারীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, দাবি পূরণ না হলে তারা এই আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

শুক্রবার এক লাখ রোহিঙ্গার সাথে ইফতার করবেন ড. ইউনূস ও গুতেরেস
কুবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ, পরীক্ষা স্থগিত
লাকিকে গ্রেফতারসহ পাঁচ দাবিতে শাহবাগে ইনকিলাব মঞ্চের মানববন্ধন
দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল
সারাদেশে বৃহস্পতিবার ২ ঘণ্টা বন্ধ থাকবে এনআইডি সেবা
আম্মার ভয়ে প্রেম করিনি, এখন আম্মাই বলে, তুমি খুঁজে আনো
টাঙ্গাইলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কিশোরী ধর্ষণ: ১ লাখ টাকায় সালিশের রায়, অভিযুক্ত গ্রেফতার
শেখ হাসিনা-ইমরান এইচ সরকারসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
১৯ দেশের মিশন প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে নির্বাচন কমিশন
ধর্ষণচেষ্টার কারণে হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের উপাধ্যক্ষকে খুন: পুলিশ
বাম্পার ফলনেও লোকসানের মুখে আলুচাষীরা
জাতীয় নাগরিক পার্টি নির্বাচন বিলম্ব করতে গোলমাল করছে: জয়নুল আবদিন ফারুক
যমুনায় যাওয়ার চেষ্টা, শিক্ষকদের ওপর পুলিশের জলকামান-লাঠিচার্জ
পাঁচ দফা দাবিতে দেশজুড়ে ধর্মঘটে চিকিৎসকরা, রোগীদের ভোগান্তি
৩ দিন পর গুলিতে নিহত যুবকের মরদেহ ফেরত দিলো বিএসএফ
নতুন মামলায় গ্রেপ্তার সালমান-আতিকুল-মহিবুল
আজ ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না রাজধানীর অনেক এলাকায়
এমবিবিএস-বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া নামের আগে 'ডাক্তার' লেখা যাবে না: হাইকোর্ট
মাগুরার শিশুটির অবস্থার আবারও অবনতি, দুবার বন্ধ হয়েছে হৃৎস্পন্দন
খাদ্য অধিদপ্তরে ১৭৯১ জনের বিশাল নিয়োগ, এসএসসি পাসেও আবেদনের সুযোগ