ঢাকাপ্রকাশ এগিয়ে যাবে স্বমহিমায় এটিই প্রার্থনা
দেখতে দেখতে একটি বছর পূর্ণ হলো। নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে ঢাকাপ্রকাশ পাঠকদের আকৃষ্ট করেছে। ঢাকাপ্রকাশ এই নামটি একবিংশ শতাব্দীর নয়। এই নামে একটি সাপ্তাহিক সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৬১ সালে ঢাকা থেকে। ঢাকাপ্রকাশ-এর প্রথম সম্পাদক ছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার। সিপাহি বিদ্রোহের পর উৎস বাংলায় অনেক পত্র পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ১৮৫৭ সালে কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত ধূমকেতু প্রকাশিত হয়। ডিসেম্বর নামটি বাংলাদেশের পক্ষে খুবই উল্লেখযোগ্য এবং আনন্দের মাস।
ডিসেম্বর মাসের ১৬ তারিখ বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। এই দিনটিকে বলা হয় ,বিজয় দিবস। তাই এক বছর পূর্বে এই মাসটি বেছে নিয়েছিলেন বর্তমান সম্পাদক মোস্তফা কামাল। এক বছর ধরে সহযোগিদের নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে বাঙালির কাছে একটি নতুন সংবাদ মাধ্যম তুলে ধরেছেন। এই এক বছরে বাংলার, শিল্পী, সাহিত্যিক এবং প্রকাশক মহলে এই কাজের সততা ও স্বচ্ছতা সম্পর্কে অনেকের মুখে শুনেছি। তার মানে এই যে কাজটি ধীরে ধীরে জনমনে ছায়া ফেলতে পেরেছে। একটি কাগজ চালানো যে কত কষ্টকর সে অভিজ্ঞতা আমাদেরও আছে।
আমার মনে পড়ে, ৫৬ বছর আগে যখন আনন্দবাজার পত্রিকায় ঢুকেছিলাম সম্পাদক অশোক সরকার আমাকে ডেকে বলেছিলেন, সংবাদপত্রের দায়বদ্ধতা কার কাছে? আমি উত্তরে বলেছিলাম পাঠকের কাছে। তিনি একটু মুচকি হেসে ঘাড় নেড়ে বলেছিলেন, ঠিক ধরেছ। আমি এই কথাটিই বলতে যাচ্ছিলাম। আমি দুষ্টুমি করে বলেছিলাম,দায়বদ্ধতা সম্পাদকের কাছেও। তিনি বলেছিলেন, আপনি যদি সম্পাদককে দায়বদ্ধতা দিতে চান তাহলে আমাকে ১০ শতাংশ দিন। বাকি ৯০ শতাংশ অবশ্যই পাঠকদের কাছে।
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, যে সময় আমরা ঢুকেছি, সেসময়ও একই অবস্থা ছিল। সংবাদপত্রের অবক্ষয় দেখেছি। সাংবাদিকরা ঘুষ নিয়ে জেলও খেটেছে। ব্যবসায়ীদের ব্ল্যাকমেইল করে টাকা নিচ্ছে। এসব দেখে আমাদের পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ছে। যে পেশা আমাদের নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তা টাকার নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের স্বার্থে সাংবাদিকদের টাকার বিনিময়ে ব্যবহার করছেন তা কল্পনার বাইরে।
মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের পুজোর সময় উপঢৌকন দেন। সাংবাদিকেরা নেন এবং তা স্বীকার করেন। একজন সাংবাদিক খুব গর্ব করেই বলেছিলেন,আমরা তিন জায়গা থেকে উপহার পাই। তিন জায়গা বলতে মুখ্যমন্ত্রী,সাংসদ, বিধায়ক। তাহলে দায়বদ্ধতা কার কাছে?
কোনো কোনো সংবাদপত্র এমনকি একদা নামকরা সংবাদ মাধ্যম দ্যা ডেইলি স্টেটসম্যান সাংবাদিকদের নিয়মিত বেতন দেন না। বেতনের জন্য চাপ দিলে এক নোটিশে ছাঁটাই করে দেওয়া হয়। স্বাধীনতার পর যে দুটি সংবাদপত্র ব্রিটিশ সরকারকে সমর্থন করেছিল তার একটি হল কলকাতার দ্য স্টেটসম্যান অন্যটি দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া। ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরা এই দুটি কাগজ তাদের অধীনে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু একটি কথা বলেছিলেন,সাতদিনের মধ্যে দেশ ছাড়ুন।
সংবাদপত্রের হাড়ির হাল কারও অজানা নাই। খুবই লজ্জার ব্যাপার হলো সাংবাদিক ঘুষ নেওয়ার দায়ে গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছেন। কারণ, তার বাড়িতে পাওয়া গেছে ৩৫০ কোটি টাকা একইসাথে স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি। তিনি একজন অধ্যাপকের ছেলে। মাঝারি দলের ব্যবসায়ীদের কাছে তাদের দূত গিয়ে বলতেন আপনাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। আমরা বড় আকারে প্রকাশ করছি। আমরা সেটি করব না যদি আপনারা মোটা অংকের টাকা দেন।
১৮৬১ সালে যে আদর্শ নিয়ে যাত্রা করেছিল ঢাকাপ্রকাশ সেই আদর্শ নিয়ে শুরু হয়েছে নতুনরূপে ঢাকাপ্রকাশ। আগামী দিনেও ঢাকাপ্রকাশ সাংবাদিকদের সহযোগিতায় সে পথে হাটছে সেদিকে আমাদের দ্বিমত নেই। এক বছরের মধ্যে ত্যাগ ও তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে সংবাদপত্রের মূল ভূমিকা তুলে ধরেছে তা তারা অব্যাহত রাখবে ভবিষ্যতেও। তাদেরও দায়বদ্ধতা আছে পাঠকের কাছে। আশা করি ঢাকাপ্রকাশ এগিয়ে যাবে স্বমহিমায়। এটিই আমার প্রার্থনা।
লেখক: ভারতের সিনিয়র সাংবাদিক