অর্থনৈতিক মন্দা নিরসনে গঠনমূলক চিন্তাভাবনা জরুরি
এ বছর দেশের অর্থনীতিতে বিভিন্ন ধরনের ঘাত-প্রতিঘাত দেখেছি। দেশে বিনিময় হারের বড় ধরনের পতন হয়েছে। যার ফলে আমাদের আমদানিকৃত দ্রব্যে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। অভ্যন্তরীণ যেসব পণ্য উৎপাদন করা হয়, সেটি সরবরাহ ও চাহিদার ক্ষেত্রে পার্থক্যের কারণে সেগুলোর মূল্যবৃদ্ধিও আমরা দেখছি। মূল বিষয় হচ্ছে যে, মূল্যস্ফীতির চাপ। সেটি আপাতত কমানো সম্ভব হবে না বলেই মনে হচ্ছে।
পৃথিবীর সব দেশেই নৈরাশ প্রীতি বেড়ে গেছে। যে কারণে আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বাড়াতে হবে। বরাদ্দ বাড়াতে হবে এবং সুষ্ঠু বিতরণের ব্যবস্থা করতে হবে। এটি হচ্ছে, একটি চ্যালেঞ্জ। মূল্যস্ফীতির চাপে বিশেষ করে যারা স্থির আয়ের মানুষ আছে, তাদের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। কেবলমাত্র স্বল্প আয়ের মানুষ নয়, মধ্যবিত্ত মানুষের ক্রয় ক্ষমতার উপরেও চাপ পড়েছে। বিভিন্ন পেশার কম আয়ের মানুষ যাদের সামাজিক নিরাপত্তার আওতাধীন নিয়ে স্বল্প মূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। যেটি ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এগুলো আমাদের শক্তিশালী করতে হবে।
বৈশ্বিক যুদ্ধের কারণে রাশিয়া নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে তাদের চুক্তিগুলো থেকে। ফলে ইউক্রেন থেকে যে গম সরবরাহ হত সেক্ষেত্রে সমস্যা হবে। যার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারেও এর প্রভাব বাড়ছে। এ সব কিছু মিলিয়ে ২০২২ শেষ হচ্ছে অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে। এটি ২০২৩ সালেও থাকবে। সেটি আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার দিক থেকেও থাকবে। কারণ আমদানি করার ক্ষেত্রে শুধু মূল্য নয়, প্রাপ্যতারও সমস্যা হতে পারে। রিজার্ভের ক্ষেত্রে আমদানি করার যে সক্ষমতা সেটিও যথেষ্ট ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এখন আমরা আইএমএফের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছি। সেখানে আমাদের ভর্তুকি প্রত্যাহার করা্, প্রণোদনা পুনর্বিন্যাস করা, এগুলোর চাপ থাকবে।
আরও একটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, খাদ্য উৎপাদন। এখানে একটি সুখবর হচ্ছে, বিশ্ববাজারে খাদ্যের দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। আমরা যদিও এখন পর্যন্ত খাদ্য আমদানি করে থাকি। কাজেই আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমরা এখনো খাদ্য আমদানি করি। কাজেই আমাদের চেষ্টা করতে হবে কীভাবে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানো যায়। অনাবাদি জমিগুলো কাজে লাগাতে হবে। অভ্যন্তরীণভাবে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আমাদের চেষ্টা করা লাগবে। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন কীভাবে বাড়ানো যায়, সেজন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে।
সরকার খাদ্য আমদানির ক্ষেত্রে যে আমদানি নীতি নির্ধারণ কমিয়ে দিয়েছে, এখন দেখা যাক সেক্ষেত্রে আমদানি কি রকম হয়। এখন পর্যন্ত বেসরকারিখাতে আমদানি খুব একটা বাড়ছে না। অন্যদিকে আমদানিকৃত পণ্যের দাম অভ্যন্তরীণ বাজারে বেড়ে যায়। এ সব কিছুর সঙ্গে আমাদের চেষ্টা করতে হবে খাদ্য উৎপাদন আরও বাড়ানোর জন্য।
বিনিময় হার কীভাবে অনুকূলে নিয়ে আসা যায় সেজন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে। আমাদের রেমিট্যান্স বাড়ানোর প্রক্রিয়া আরও ফলপ্রসূ করার চেষ্টা করা লাগবে। বাজার বিচিত্রকরণ করার প্রয়োজন আছে। রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আরও দক্ষ লোক নিয়োগের প্রয়োজন আছে। যাতে করে তারা দেশীয় উপার্জন বৃদ্ধি করতে পারে। মোট কথা অর্থনৈতিক মন্দা নিরসনে আমাদের আরও গঠনমূলক চিন্তাভাবনা করতে হবে।
লেখক: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা
আরএ/