অনলাইন জুয়া বন্ধে আইন যুগোপযোগী করা জরুরি
অনলাইনে জুয়া খেলতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের কার্ড ব্যবহার করা হয়। মাসিক চুক্তিতে বিকাশ, নগদ, উপায়-এর এজেন্ট নম্বর ভাড়া নিয়ে দেশি এজেন্টরা এসব লেনদেন করে থাকে। সুপার এজেন্টদের কাছে সব কোম্পানিরই সিমকার্ড থাকে। যদি দেশের এমএসএফ প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের নজরদারি ঠিক রাখত, তাহলে অনলাইন জুয়া মোকাবিলা করা সহজ হতো।
অ্যাপের নিয়ম অনুযায়ী অনলাইন গেমের চিপস কিনতে প্রয়োজন পড়ে নগদ অর্থ, ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড। এসব কার্ড সহজলভ্য হওয়ায় অনেকেই ঝুঁকে পড়েছে অনলাইন জুয়ার দিকে।
কয়েকটি অপরাধী চক্র এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার করছে। এ ছাড়া, অপরাধীরা বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইন জুয়ায় অংশ নিয়ে থাকে। বিকাশ, রকেট, নগদসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা লেনদেন করে থাকে জুয়াড়িরা। এরা টাকা পাচারে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করছে। এরা ফার্স্ট ক্লাস এক্সিকিউটিভ ক্লাসের টিকেট কাটছে। আরেক ধরনের কারেন্সি নিচ্ছে স্বর্ণমুদ্রার মাধ্যমে।
বাংলাদেশের ধনী লোকেরা অধিকাংশই ঋণখেলাপি। এদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কিছু কনট্রাক্টর। এরা বিত্তশালি, ধনী। এইসব ‘সুপার রিচ’ লোকেরা এগুেলোর মদদ দিয়ে চলেছে। যে কারণে বিভিন্নভাবে ডলার চলে যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। আমরা বলে থাকি যে, টাকার কোনো বাউন্ডারি নাই।
এখন আমাদের জানা দরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের রেগুলেশনটি আসলে কী? সেটি আগে জানতে হবে আমাদের। তারা টাকাগুলো কীভাবে পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন কার্ড ব্যবহৃত হচ্ছে কি না।
বিদেশিদের সঙ্গে জুয়া খেলতে গেলে বাংলাদেশি টাকা নিশ্চয়ই নেবে না। যারা আইটি বিশেষজ্ঞ তারা বিষয়গুলো ভালো বলতে পারবে। যেসব অ্যাকাউন্টের লেনদেন সন্দেহজনক মনে হয়, অনলাইন জুয়া, হুন্ডি, অর্থপাচার, জঙ্গি অর্থায়ন সংশ্লিষ্ট সব অবৈধ লেনদেন প্রতিরোধে নিয়মিত তদারকি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পদক্ষেপ জরুরি।পাশাপাশি অবৈধ লেনদেন প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগের অংশ হিসেবে রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যেকোনো তদন্তে প্রয়োজনীয় সব সহায়তাও দিতে হবে। কোনো অপরাধমূলক লেনদেন যাতে না হয় তার জন্যও সর্বদা সচেষ্ট। পুরো প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ রাখতে সব সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় এবং তাদের নির্দেশনা মেনে একসঙ্গে কাজ করলে কিছুটা উপকার পেতে পারি।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে পুঁজি করে অনেক সুযোগ নিচ্ছে জুয়াড়িরা। বন্ধ করা সাইট ভিপিএন ব্যবহারে চালানো হচ্ছে। তাদের প্রতিরোধে অনলাইন জুয়া বন্ধ করার জন্য নতুন আইন প্রয়োজন। কারণ, জুয়ার আয়ের টাকা তো দেশে থাকছে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কোনো ধারায় যদি অনলাইন জুয়া যোগ করা যায়, তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে।
অনলাইন ক্যাসিনো ব্যাপক হারে চলছে। এগুলো সমাজ-জাতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। যে আইন আছে তা অনেক পুরোনো এবং সেখানে সাজা খুবই অপ্রতুল। আর সেখানে ক্যাসিনো সম্পর্কে কোনো কিছু বলা নাই। তাই অনলাইন জুয়া বন্ধে যুগোপযোগী আইন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়