রোহিঙ্গা সমস্যাটি দীর্ঘমেয়াদি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে
রোহিঙ্গা সমস্যা আমাদের দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একইসঙ্গে আমি বলব অনাকাঙ্ক্ষিত একটি সমস্যা। বাংলাদেশ বহুদিন থেকেই সমস্যাটি নিজের ঘাড়ে নিয়ে চলছে। তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যাচ্ছে না। অন্যদিকে মানবিক দিক বিচার বিশ্লেষণ করেই আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ বাসযোগ্য একটি ব্যবস্থা না করে তাদের দেশে পাঠানোর মত সিদ্ধান্ত নিতেও পারছি না।
মিয়ানমারের ভেতরে যে সমস্যা বিরাজমান সেটি আমাদের বুঝতে হবে। এখন নতুন করে যে সমস্যাটি উদ্ভূত হয়েছে, সেটি হচ্ছে রাখাইনে এখন যুদ্ধ চলছে। আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ চলছে। আরাকান আর্মি কিন্তু মিয়ানমার সীমান্ত দখল করে নিয়েছে। ফলে মিয়ানমার আর্মি পাল্টা আক্রমণ করছে। সেই আক্রমণেরই অংশ হিসেবে গোলাগুলির কারণে সেসব আমাদের এখানে এসে পড়ছে। এখানে যে উদ্দেশে কথাটি বলছি, তারা আসলে যে কাজটি করতে চাচ্ছে, সেটিই পথভ্রষ্ট হয়ে এখানে এসে পড়ছে। কিন্তু এটি মনে রাখার পরেও আমার সীমান্ত অতিক্রম করলে সেটি যে যুক্তিতেই হোক না কেন, সেটি নিশ্চয়ই অন্যায় কাজ এবং আমরা প্রতিবাদ করছি। আমরা শুধু প্রতিবাদই করছি তা না, আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি, আমাদের পররাষ্ট্র মহোদয় বলেছেন যে, আমাদের বিজিবিকে বলা হয়েছে সতর্ক থাকতে। সীমান্তে আমাদের অন্যান্য সংস্থা যারা আছে, গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন, সবাই সজাগ। কাজেই এই বিষয়ে আমাদের দিক থেকে আমরা চেষ্টা করছি, যতটা সজাগ এবং সক্রিয় থাকা যায়। তবে আমরা মিয়ানমারকে সতর্ক করছি যাতে তারা সতর্ক হয়, যেকোনো যুক্তিতেই তারা এ কাজটি করতে পারে না। এতে জানমালের ক্ষতি হলেতো বিরাট একটি অসুবিধার সৃষ্টি করবে। কারণ আমরা তখন জবাব দিতে বাধ্য হব। তখন কিন্তু একটি যুদ্ধ অবস্থা তৈরি হবে যেটি বাংলাদেশ চায় না। কাজেই আমি মনে করব যে, এক্ষেত্রে এক ধরনের বাড়তি সতর্কতা দরকার। আমাদের জন্য চিন্তার কারণ হিসেবে রয়েই যাচ্ছে, তার কারণ হলো যে, রোহিঙ্গারা আসলে যাবে কোথায়?
কাজেই রোহিঙ্গাদের থাকার প্রক্রিয়াটা অনেকটা দুর্ভাগ্যজনকভাবে দীর্ঘায়িত হচ্ছে আরাকান আর্মি এবং মিয়ানমার আর্মির কারণে। সেদিক থেকে আমরা পরোক্ষভাবে চিন্তিত যে, এরকম একটি পরিবেশ হলে রোহিঙ্গারা আসলে যাবে কোথায় বা কী হবে? তাদেরতো স্বেচ্ছায় যেতে হবে, আমরা তো সে বিষয়টি মেনে নিয়েছি। কাজেই তারা যদি স্বস্তিতে না থাকে আপনিতো তাদের জোর করে পাঠাতে পারবেন না। তাদের জন্য অনুকূল পরিবেশ চাই। কাজেই সেই বিবেচনায় দুটি বিষয় এখানে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর গোলাগুলির বিষয়টি, সেই সঙ্গে আগের যে পুরোনো সমস্যা, তার সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যার একটি পরোক্ষ যোগাযোগ আছে। কাজেই তাদের স্বস্তিতে দেশে পাঠানো এবং এত বছর ধরে বয়ে বেড়ানো রোহিঙ্গা সমস্যাটি আমাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
লেখক: সাবেক রাষ্ট্রদূত
আরএ/