সংকট যেন গভীর থেকে গভীরতর না হয়
আমাদের প্রথম করণীয় হলো, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা। আরেকটি ব্যাপার যেটি আমি মনে করি যে, রোহিঙ্গারা এমনিতেই আশাহত মানুষ। তাদের আশাহত অবস্থাকে আরও গভীর করার জন্য আমরা যেন এমন কিছু না করি, যাতে সেটি গভীর থেকে গভীরতর হয়।
মানুষ যখন আশাহত হয়ে যায়, মানুষ যখন সামনে কিছু দেখে না, তখন কিন্তু সে যেকোনো কাজ করতে পারে। খারাপ ভাল দুটিই। কাজেই সেই জায়গাটিতে তাদের জন্য ফেলে দেওয়া না হয় এবং আমরা কিন্তু সেটি চাই না। তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ চেস্টা করছে, আমাদের আন্তর্জাতিক বন্ধুরা চেষ্টা করছেন।
বিভিন্নভাবে সেটি হচ্ছে। আইনগতভাবে হচ্ছে, কুটনৈতিকভাবে হচ্ছে এমনকি জাতিসংঘ বলেন, আশিয়ানরা বলেন, মোট কথা হলো, আমরা যেহেতু মনে করি আন্তর্জাতিকভাবেই এই সমস্যাটির সমাধান আমাদের করতে হবে। তবে এখনো পর্যন্ত আমরা যেভাবে চাচ্ছি, আমরা সেভাবে সমাধানটা করতে পারছি না।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমাদের প্রতিবেশি রাষ্ট্র এখন পর্যন্ত আমরা যেভাবে তাদেরকে চাচ্ছি, সেভাবে পাচ্ছি না। যেমন ভারত, চীন, রাশা ইত্যাদি প্রতিবেশি রাষ্ট্রগুলোকে যদি কূটনৈতিকভাবে আরও একটু সবল এবং শক্তিশালী করতে পারি, তাহলে হয়তো রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের উপর চাপ বাড়বে। মিয়ানমার এমনিতেই চাপে আছে। আশিয়ানদের সঙ্গে সাম্প্রতিকালে আমরা যোগাযোগ বাড়িয়েছি। এক্ষেত্রে আশিয়ান কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে আমি মনে করি।
সেই জায়গায় সর্বমুখী একটি কূটনৈতিক সম্পর্ক আমাদের বজায় রাখতে হবে। যত দ্রুত আমরা সমস্যাটি সমাধান করতে পারি, সেটি আমাদের জন্য যেমন মঙ্গল তেমনি ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রাখার জন্যও এটি প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
অবশেষে আমি শুধু এটুকুই বলব যে, আমরা ৫ বছর ধরে সমস্যাটি সমাধানের জন্য চেষ্টা করছি। এখনো পর্যন্ত আমরা সফল হইনি। আমাদের চিন্তায় এবং কাজে কী করলে এটি সমাধান করা যায়, সেটি নিয়েও আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। সেই ভাবনাটি শুধু সরকারের মধ্যে না ভেবে যারা সংশ্লিষ্ট আছে তাদের সকলকে নিয়েই আমাদের ভাবতে হবে। এ ধরণের সমস্যাগুলো জটিল।
এক্ষেত্রে আমি মনে করি সৃজনশীলতার প্রয়োজন আছে। প্রথাগত নীতি অথবা প্রথাগত ব্যবস্থার বাইরে গিয়েও আমাদেরকে ভাবতে হবে অর্থাৎ কী করলে আমরা এই সমস্যাটির একটি সম্মানজনক নিরাপদ এবং টেকসই সমাধান করতে পারি। যাতে করে রোহিঙ্গারা তাদের অধিকার নিয়ে নিরাপদে সম্মানের সঙ্গে মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারে। এটিই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।
প্রকৃতপক্ষে আমাদের সৃজনশীলতার দরকার আছে। পাঁচ বছর ধরে চেষ্টা করে আমরা পারিনি। আমাদের প্রথাগত ব্যবস্থা কাজ করেনি। কি করা যায় সেটি নিয়ে আরেকটু গভীরভাবে, আরেকটু ভিন্নভাবে চিন্তা করার সুযোগ আমাদের আছে। সেটি আমরা ভেবে দেখতে পারি। আমার ধারণা, তাহলে হয়তোবা আমরা এই সমস্যাটির একটি দ্রুত সমাধান দিতে পারব।
মনে রাখতে হবে, রোহিঙ্গা সমস্যা আজ নতুন কোনো সমস্যা নয়। কিন্তু দিনের পর দিন বয়ে চলা সমস্যাটি নতুন নতুন সমস্যার জন্ম দিচ্ছে। যেটি শুধুমাত্র কক্সবাজার অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ নয় বরং রাস্ট্রের জন্য এক্টি বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কাজেই রোহিঙ্গা ইস্যুকে খুবই জটিল সেইসঙ্গে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।
লেখক: সাবেক রাস্ট্রদূত