‘হেফাজতে মৃত্যু’ মানবাধিকারের জন্য চরম হুমকি
‘কাস্টোডি ডেথ’ সবসময় একটি উদ্বেগজনক ব্যাপার। এটি নিঃসন্দেহে দুশ্চিন্তার একটি কারণ। যা মানবাধিকারের জন্য দারুণ রকম হুমকির সৃষ্টি করে। কেননা যখন কোনো ব্যক্তি, তিনি যদি জঘন্যতম অপরাধীও হন, তিনি যখন রাষ্ট্রের হেফাজতে থাকেন, সেখানে তার সবচেয়ে বেশি নিশ্চিন্তে থাকার কথা।
অন্য কোনোভাবে অথবা অস্বাভাবিকভাবে তার মৃত্যু ঘটবে না অথবা তিনি নির্যাতনের শিকার হবেন না। কিন্তু আমাদের এখানে এই ঘটনাগুলো ক্রমশই বেড়ে যাচ্ছে, এটি অবশ্যই আমাদের জন্য দারুণ একটি দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে একটি জিনিস এখানে বোধয় চিন্তা করার অবকাশ আছে। দেখা গেল আগে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড যতটা ঘটত, ইদানিং দেখা যাচ্ছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড প্রায়ই ঘটছে না এবং গণমাধ্যমে আমরা কিন্তু এরকম কোনো তথ্য পাচ্ছি না। এমনকি সামাজিক মাধ্যমেও এরকম কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে কি আমরা ধরে নেব যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন নিষেধাজ্ঞা জারি করল, এরপরে এটি প্রতিক্রিয়া হিসেবে অথবা একটি ফলাফল হিসেবে যারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকণ্ডে লিপ্ত হত তারা সেকাজটি বন্ধ করে দিয়েছেন। তাই আমরা সেরকম ঘটনা প্রত্যক্ষ করি না। এটি বন্ধ হওয়া আমাদের জন্য একটি সুসংবাদ। কিন্তু এখন তারা ভিন্নভাবে হেফাজতে নিয়ে অর্থাৎ কাস্টডিতে নিয়ে অত্যাচার করছে, সেখানে একজন মানুষের মৃত্যু অস্বাভাবিক। এটি যদি তারই স্থলাভিষিক্ত করা হয়, তাহলে চরম উদ্যোগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সমস্যা হচ্ছে যে, যখনই হেফাজতে মৃত্যু হয়, সেগুলো নিয়ে সঠিক তদন্ত হয় বলে আমাদের কাছে দৃশ্যমান নয় এবং জনগণ আমরা কোনোভাবেই স্বস্তিতে থাকতে পারছি না। রাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতি এত অবনতি হচ্ছে যে, দেশের মানবাধিকার হুমকির সম্মুখীন হয়েছে, এগুলো কিন্তু সেসবেরই প্রমাণ রাখে। এখানে রাষ্ট্র ও সরকার তারা যদি বলেন, যে এ ধরনের মৃত্যুর অন্য কোনো কারণ আছে, কিন্তু রাষ্ট্র নির্যাতনের অন্য কোনো কারণ নেই, সেটি কিন্তু প্রমাণ সাপেক্ষে জনসাধারণের জন্য উপস্থাপন করতে হবে এবং আমাদের কাছে সেটির যেন গ্রহণযোগ্য একটি ব্যাখ্যা হয়। তা না হলে আমরা অবশ্যই রাষ্ট্রকে দায়ী করব মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের হাইকমিশনার বলে গেছেন যে, স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে। স্বাধীন তদন্ত কমিশন যদি হয়, আমাদের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন যেটি রয়েছে, তাকে যদি আরও বেশি শক্তিশালী করা হয়, তাকে যদি আপনি স্বাধীনতা দেন, তাকে যদি তদন্ত করার অনুমতি প্রদান করেন, কেন তারা পারবে না?
ব্যাপারটা হচ্ছে রাষ্ট্রের সেই ইচ্ছাটুকু আছে কি না। সেই ইচ্ছা যদি থেকে থাকে সেটি রাষ্ট্রকে প্রদর্শন করতে হবে যে, রাষ্ট্রের অবশ্যই সেই সদিচ্ছা রয়েছে এবং রাষ্ট্র দেখতে চায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো অধিকার রাষ্ট্র সহ্য করবে না। এখানে রাষ্ট্রের অনেক বড় ভূমিকা আছে।
লেখক: সাবেক চেয়ারম্যান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আরএ/