শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

কারাগারের রোজনামচা: বাংলাদেশকে ভালোবাসার দলিল

বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘কারাগারের রোজনামচা’ এক নাগাড়েই পড়ে ফেলার মতো একটি বই। তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ও একই ধাঁচের আরেকটি বই। অতি সহজে মনের কথা বলার ও লিখার এক অভাবনীয় ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন তিনি। এ বই দুটো পড়েই আমার মনে হয়েছে রাজনৈতিক সাহিত্যিক হিসেবে বিশ্বজুড়ে তার সুনাম চিরদিনই বহাল থাকবে।

এই দুটো বইয়ের সম্পাদক তারই সুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন যে তার আরও কয়েকটি বই অচিরেই বের হবে। আরও সন্তুষ্টির কথা যে বইগুলোর ইংরেজি অনুবাদও বের হবে। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র ইংরেজি অনুবাদ এরই মধ্যে বের হয়েছে। সবগুলো বই যখন বের হবে তখন বিশ্বমানের এক সাহিত্যিক হিসেবেও আমরা আমাদের জাতিসত্তার জনকের পরিচয় সর্বত্র গর্বের সঙ্গে তুলে ধরতে সক্ষম হব।

তার লেখায় মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও স্বদেশ প্রেম যেভাবে এসেছে তা তার মাটি ঘেঁষা রাজনীতিরই স্পষ্ট প্রতিফলন। আর সে কারণেই তিনি হতে পেরেছিলেন বাংলার বন্ধু-বঙ্গবন্ধু। জীবনের প্রধান অংশই তিনি যাপন করেছেন জেলে। প্রথম জেলে গিয়েছিলেন ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চ। রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে বাংলা চাওয়ার অপরাধে। এরপর থেকে নিত্য তার যাওয়া আসা। জেলের বাসিন্দাদের কাছে তিনি এক প্রিয় মুখ। কয়েদি, পাহারাদার, বন্দি, পাগল, গাছ, পাখি, বিড়াল সবাই তার পরিচিত ও প্রিয়ভাজন।

আলোচ্য বইটির ২৭ থেকে ৫৪ পাতা ‘জেলের ভেতর অনেক ছোট ছোট জেল আছে’ শিরোনামে লেখা। ‘জেলে যারা যায় নাই, জেল যারা খাটে নাই- তারা জানে না জেল কী জিনিস’। এ শব্দগুচ্ছ দিয়ে শুরু করা জেলের ভেতরের ২৭ পৃষ্ঠার এই বিবরণই প্রমাণ করে তিনি কতোটা মানবিক ছিলেন। জেলের ভেতরে যে একসঙ্গে থাকা যায় না, এর ভেতরে যে আরও ছাট ছোট জেল আছে, জেল যে ‘আলাদা এক দুনিয়া’ তা এই বই না পড়লে আমার মতো অনেকের কাছে অজানাই থেকে যেত।

এই ‘রোজনামচা’ পড়েই জানতে পারি যে ১৯৬৬ সাল নাগাদ তিনি পাঁচবার জেলে গেছেন। এমন কী হাজতি হিসেবেও তাকে জেল খাটতে হয়েছে। কত রকম জেল, কত রকম বন্দি মানুষ, কী তাদের কষ্ট তা এই বই পড়লে জানা যায়। হাজতি, রাজবন্দিরা কীভাবে আলাদা আলাদাভাবে থাকেন, সেল এরিয়া কাকে বলে এসব কথা এই বই পড়েই জানতে পারলাম। বারে বারে কয়েদিদের গুণতে হয়, লাইন বেঁধে বসিয়ে তাদের গণনা করা হয়। এক সেলে একজন, তিনজন, চার, পাঁচ বা তারও বেশি জনকে বন্ধ করে রাখা হয়। কিন্তু দুজনকে এক সেলে রাখা হয় না। জেলের ভেতরে হাসপাতাল, ডাক্তার সবই আছে। জেলে কাজ করতে হয়। যারা লেখাপড়া জানে তাদের রাইটারের কাজ দেওয়া হয়। সন্ধ্যার পর কেউ বাইরে থাকতে পারে না। সাজার সময় ভেদে কয়েদিদের প্রমোশনও দেওয়া হয়। পাহারাদার, মেট হিসেবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। নাইট গার্ডদেরও রকম ফের আছে। তাদের ক্ষমতারও হেরফের আছে। কয়েদিদের একজন আরেকজনকে কাজ বুঝিয়ে দিতে হয়, কাজ বুঝে নিতে হয়। কয়েদির চিঠি জেলের কর্মকর্তারা পড়ে তবেই পাঠানো হয়। রাজনৈতিক বন্দিদের চিঠি কাটাকুটি করা হয়। কালি ঢেলে অস্পষ্ট করা হয়।

তা ছাড়া, জেলের ভেতরে রয়েছে নানা শব্দভাণ্ডার যা শুধু সেখানেই প্রচলিত। অনেকদিন জেলে থাকলেই কেবল এসব শব্দের মর্মার্থ বোঝা সম্ভব। কয়েদিরা তাদের মতো করে ইংরেজি শব্দের ভাণ্ডার গড়ে তুলেছে। ‘থালা বাটি কম্বল জেলাখানার সম্বল’ শিরোনামে এই লেখাটিতে অদ্ভুত সব শব্দভাণ্ডারের পরিচয় পাই। কেস ফাইল বা কেস টেবিল হয়ে যায় ‘কেসটাকোল, ‘রাইটার দফা’। ‘চৌকি দফা’, ‘জলভরি দফা’, ‘ঝাড়– দফা’, ‘বন্দুক দফা’, ‘পাগল দফা’, ‘শয়তানের কল’, ‘দরজি খাতা’, ‘মুচি খাতা’ - এমন সব শব্দকোষ ব্যাখ্যাসহ তিনি এই বইতে অত্যন্ত যত্নসহকারে লিখেছেন। জেলের ভেতরের এই অজানা কথাগুলো আমরা কোনোদিনই জানতে পারতাম না এই বইটি না বের হলে।

শুধু কী শব্দকোষ? এই শব্দকোষ তৈরি করেছে সেসব জেলের অধিবাসী তাদের কথাও রয়েছে এই বইতে। তিনি তাদের কথা লিখেছেন দরদ দিয়ে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তিনি তার সঙ্গে যুক্ত থাকা বা আশেপাশের কয়েদিদের দুঃখ-ভরা জীবনের কাহিনি শুনতেন। তাদের সেসব কথাও স্থান পেয়েছে এই বইতে। মনে হয় এরা তার কতই না আপনজন। উদাহরণ হিসেবে ‘লুদু’র কথা বলা যায়। ১৯৫০ সালে যখন জেলে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু তখন পরিচয় হয় লুদু ওরফে লুৎফর রহমানের সঙ্গে। ১৯৫৪ ও ১৯৫৮ সালেও তাকে তিনি দেখেছেন জেলে। ১৯৬৬তেও এসে পান তাকে। তার গল্প তিনি লিখেছেন অসীম মমতায়।

চুরি ও পকেটমারাকে কেন পেশা হিসেবে নিয়ছিল লুদু? তার বাবার সাত বিয়ে ও নানা বদভ্যাসের ফসল লুদু। নানার বাড়ির পাশের বাড়ির গোপাল নামে এক যুবকের কাছে তার চুরি বিদ্যায় হাতে খড়ি। এরপর একা চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ল লুদু। থানার পুলিশ ও দারোগার সঙ্গে ‘দেখা সাক্ষাৎ করে’ কী করে আরও বড় পকেটমার হয়ে উঠল, সে কাহিনি বঙ্গবন্ধুর বইতে ফুটে উঠেছে। এরপর জিআরপি, সিআইডিসহ পুলিশের নানা পর্যায়ে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ‘বন্দোবস্ত’ করতে পারেনি এমন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে ফের লুদু জেলে।

জেলের ভেতরেও রয়েছে অপরাধ জগত। সেই জগতেরও পাকা সদস্য লুদু। গলায় ‘খোকড়’ কেটে জেলখানা থেকে বের হয়ে নানা জায়গায় পকেটমারি করে। ফের ধরা পড়ে। মাঝখানে বের হয়ে বিয়েও করেছে লুদু। তার স্ত্রীকে খুব অনুভব করে লুদু। একটা ছেলে ছিল। সেও মারা গেছে। লুদুর চিন্তা কী করে বাঁচবে তার স্ত্রী। ‘জীবনের উপর একটা ধিক্কার এসেছে’ লুদুর। এইভাবে একেবারে সাধারণ এক অপরাধীর কষ্টের কথা সযত্নে তুলে এনেছেন বঙ্গবন্ধু তার লেখায়।

এরপর নিয়মিত ডায়েরি। ২ জুন ১৯৬৬। বৃহস্পতিবার। প্রায় প্রতিদিনই তিনি লিখেছেন জেলের জীবন নিয়ে। প্রায় সব দিনের লেখাতেই রাজনৈতিক সহকর্মী ও কর্মীদের জন্যে তার উৎকণ্ঠা, দরদ ও ভালোবাসা ফুটে উঠেছে। ৭ জুনের হরতালকে বানচাল করার জন্য তাদের যেভাবে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তাতে তিনি ভীষণ ক্ষুব্ধ। বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনেম খানের বাড়াবাড়ি বিষয়ে তিনি বিস্তর লিখেছেন। আর লিখেছেন সুবিধাবাদী রাজনীতিকদের আপসকামীতার কথা। তবে ছয় দফার প্রশ্নে তিনি যে আপসহীন সে কথা বলতে ভুলেননি। ‘এত জনপ্রিয় সরকার তাহলে গ্রেপ্তার শুরু করেছেন কেন!’- এমন বিস্ময় তার মুখেই সাজে। কাকে কাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এই খবর জানার জন্যে তিনি উতলা ছিলেন। সত্যি কথা বলতে তিনি কখনও দ্বিধা করতেন না।

মওলানা ভাসানীকে তিনি খুবই শ্রদ্ধা করতেন। কিন্তু ছয় দফা নিয়ে তার মন্তব্যে বঙ্গবন্ধু বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তিনি তাই লিখেছেন, “মওলানা সাহেব পশ্চিম পাকিস্তানে যেয়ে এক কথা বলেন, আর পূর্ব বাংলায় এসে অন্য কথা বলেন। যে লোকের যে মতবাদ সেই লোকের কাছে সেভাবেই কথা বলেন। আমার চেয়ে কেউ তাকে বেশি জানে না।” একথা বলেই তিনি রাজনীতির মূলনীতি বিষয়ে মুখ খুলেছেন।” তবে রাজনীতি করতে হলে নীতি থাকতে হয়। সত্য কথা বলার সাহস থাকতে হয়। বুকে আর মুখে আলাদা না হওয়াই উচিত।” বুকে মুখে এক কথা বলতেন বলেই পাকিস্তানি রাষ্ট্র তাকে একদণ্ডের জন্যেও স্বস্তি দেয়নি।

কারারক্ষীদের অনেকেই বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা করতেন। তাই তারা তার খোঁজ নিতেন। প্রয়োজনীয় তথ্য দিতেন। ওই সময়টায় যে প্রচুর ‘শেখ সাহেবের লোক’ জেলে ঢুকছে সে তথ্য তিনি এদের কাছ থেকেই পান। আর এ তথ্য পেয়ে তিনি অস্থির হয়ে যান।

‘আজ আর লেখাপড়ায় মন দিতে পারছি না। কী হবে বাইরে, কর্মীদের কী অবস্থা, অত্যাচার ও গ্রেপ্তার সমানে চলছে, আওয়ামী লীগ কর্মীদের উপর। দিন ভরই ছটফট করতে লাগলাম, কাগজ কখন পাব?’ এই ছটফটানি তার শেষ হবার নয়। তার সহকর্মীদের ডিভিশন দেওয়া হচ্ছে না, তার কর্মীদের ভালোভাবে খাবার দাবার দেওয়া হচ্ছে না। তাই তার উদ্বেগের কোনো শেষ নেই। যারা তার কথা ভাবেন, তার জন্য দোয়া করেন, তাদের সম্বন্ধে তিনি লিখেছেন, “দুঃখ হয়, এদের কোনো কাজেই বোধহয় আমি লাগব না। ... একথা সত্য, যখন আমি জেল অফিসে যাই তখন কয়েদিদের সাথে দেখা হলে, জেল অফিসারদের সামনেই আমাকে সালাম দিতে থাকে। যারা দূরে থাকে তারাও এগিয়ে আসে। বুড়া বুড়া দু’একজন বলেই ফেলে, বাবা আপনাকে আমরা দোয়া করি।” জেলের রান্না ভাত খেতে কষ্ট হয়। তবু খেতে হয়। শুধু বাঁচার জন্যে। তা সত্ত্বেও তার উদ্বেগ, “যারা এই দুদিনে জেলে এসেছে, তাদের ডিভিশন দেয় নাই, কীভাবে কোথায় রেখেছে- জানার উপায় নেই।”

এরই মধ্যে ঝাড়ুদার এক কয়েদি নাছোড়বান্দা। “আমাকে আপনি ছেড়ে দিন, আপনি বললেই জেল থেকে বের করে দিবে।” তার এ কথার উত্তরে বঙ্গবন্ধু বললেন, “আমি তো তোমার মতো একজন কয়েদি, আমার ক্ষমতা থাকলেই আমিও বা জেলে আসব কেন?” সে বলে, “আপনি কলম মাইরা দিলেই কাজ হয়ে যায়।” বঙ্গবন্ধু বললেন, “কলম আছে, কিন্তু মাইরা দিবার ক্ষমতা নাই।”

তাদের সবার বিশ্বাস তিনি বললেই হবে। এই যে মানুষের প্রতি তার ভালোবাসা এবং তার প্রতি মানুষের বিশ্বাস তা তো একদিনে হয়নি। আজীবন তিনি যে তাদের পাশেই ছিলেন। সব অর্থেই যে তিনি হতে পেরেছিলেন ‘তাদের লোক’। বাবুর্চির রান্না ভালো হয় না বলে নিজেই রান্না করতে নেমে যান। পাইলসের অসুখটা ফের দেখা দিয়েছে। জেলের খাবারে তার ওই অসুখ আরও বেড়েছে। কিন্তু পরিবার, বিশেষ করে, স্ত্রী রেনুকে জানানো যাবে না। তারা দুঃশ্চিন্তা করবেন।

ইত্তেফাক ও তার মালিক-সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে নিয়ে তার চিন্তার শেষ নেই। ইত্তেফাক তার ও তার দলের কথা বলত। মানিক মিয়া বঙ্গবন্ধুর বড় ভাইয়ের মতো। তাই ইত্তেফাকের ওপর সরকারের চাপাচাপিতে তিনি খুবই বিক্ষুব্ধ। বন্ধু শহীদুল্লাহ্ কায়সারের ‘সংশপ্তক’ বইটি পড়ে তার খুব ভালো লেগেছে। ওই বই পড়তে পড়তেই লিখেছেন, ‘বেপরোয়া গ্রেপ্তারের পরেও ভেঙে পড়ে নাই দেখে ভালোই লাগছে। রাজনৈতিক কর্মীদের জেল খাটতে কষ্ট হয় না, যদি বাইরে আন্দোলন থাকে।”

রাজনীতি আর জীবন এভাবেই এক ‘অর্গানিক’ সম্বন্ধে বাঁধা পড়ে যায়, সন্ধ্যে বেলা তার ঘর বন্ধ করে দেয়। পরের দিন পাশেই রাখা পাগলদের গোসল করানোর কথা লিখেছেন। পাগলদের সঙ্গে যে নিষ্ঠুর আচরণ করা হয় তাতে তিনি খুবই আহত। যদিও পাগলদের চিৎকারে প্রায়ই তিনি ঘুমুতে পারেন না, তবু তাদের জন্য রয়েছে তার দরদী মন। সুযোগ পেলেই তাদের সঙ্গে কথা বলেন, তাদের জন্যে কিছু করতে চেষ্টা করেন। খাবার পাঠান।

৬ জুনে ডায়েরির পাতায় তিনি লিখেছেন, “আগামীকাল ধর্মঘট। পূর্ব বাংলায় জনগণকে আমি জানি, হরতাল তারা করবে। রাজবন্দিদের মুক্তি তারা চাইবে। ছয় দফা সমর্থন করবে।” মানুষের সমর্থন তার প্রতি রয়েছে বলেই তিনি এই নিঃসঙ্গ জেলজীবন হাসিমুখেই বরণ করে নিয়েছিলেন। তিনি তার মনের অবস্থা বোঝাতে এভাবে লিখেছেন, “আমি একা থাকি, আমার সাথে কাওকে মিশতে দেওয়া হয় না। একাকী সময় কাটানো যে কত কষ্টকর তাহা যাহারা ভুক্তভোগী নন বুঝতে পারবেন না। আমার নিজের উপর বিশ্বাস আছে, সহ্য করার শক্তি খোদা আমাকে দিয়েছেন। ভাবি শুধু আমার সহকর্মীদের কথা। এক একজনকে আলাদা আলাদা জেলে নিয়ে কীভাবে রেখেছে? ত্যাগ বৃথা যাবে না, যায় নাই কোনো দিন। নিজে ভোগ নাও করতে পারি, দেখে নাও যেতে পারি, তবে ভবিষ্যৎ বংশধররা আজাদী ভোগ করতে পারবে। ... জয়ী আমরা হবই। ত্যাগের মাধ্যমে আদর্শের জয় হয়।” ভয়কে জয় করার জন্যেই কবিগুরুর কাছে ফিরে যেতেন। গুনগুনিয়ে উঠতেন, “বিপদে মোরে রক্ষা করো/ এ নহে মোর প্রার্থনা / বিপদে আমি না যেন করি ভয়।”

এর পরের দিন ৭ জুন। হরতালের দিন। বাইরে কী হচ্ছে কে জানে। সর্বক্ষণ ছটফট করছেন তিনি। লিখেছেন, “বন্দি আমি, জনগণের মঙ্গল কামনা ছাড়া আর কী করতে পারি! ... গুলি ও মৃত্যুর খবর পেয়ে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেছে। শুধু পাইপই টানছি। ... কী হবে? কী হতেছে? দেশকে এরা কোথায় নিয়ে যাবে, নানা ভাবনায় মনটা আমার অস্থির হয়ে রয়েছে। এমনিভবে দিন শেষ হয়ে এল। মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা জেলে আছি। তবুও কর্মীরা, ছাত্ররা ও শ্রমিকরা যে আন্দোলন চালাইয়া যাইতেছে, তাদের জন্য ভালোবাসা দেওয়া ছাড়া আমার দেবার কিছুই নাই। মনে শক্তি ফিরে এল এবং দিব্য চোখে দেখতে পেলাম ‘জয় আমাদের অবধারিত।’ কোনো শক্তি আর দমাতে পারবে না।”

রাতে আর ঘুম আসে না। শুধুই চিন্তা। এর পরের দিন (৮ জুন) ডায়েরির পাতা জুড়ে রয়েছে প্রেপ্তার করা কর্মীদের বিবরণ। “কারও পায়ে জখম, কারও কপাল কেটে গিয়েছে, কারও হাত ভাঙা, এদের চিকিৎসা বা ঔষধ দেওয়ার কোনো দরকার মনে করে নাই কর্তৃপক্ষ।”

দিনভরই জেল ভর্তি করা হচ্ছিল। কিছু স্কুলের ছাত্রও তাদের মধ্যে ছিল। কেউ কেউ এদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছিল। তাই বাধ্য হয়ে তিনি জেল কর্তৃপক্ষকে জানালেন, “অত্যাচার বন্ধ করুন। তানা হলে ভীষণ গোলমাল হতে পারে।” ওই দিন বিরাট করে ডায়েরি লিখেছেন তিনি। ছয় দফা যে বৃথা যাবে না সে কথা জোর দিয়ে বলেছেন। “যে রক্ত আজ আমার দেশের ভাইদের বুক থেকে বেরিয়ে ঢাকার পিচঢালা কাল রাস্তা লাল করল, সে রক্ত বৃথা যেতে পারে না।”

সারাদিন তিনি পাগলের মতো ঘরে বাইরে করছিলেন। ছোট ছোট বাচ্চাদের ধরে এনেছে। জানালা দিয়ে চিৎকার করে দিনে বলছিলেন, “জমাদার সাহেব এদের খাবার বন্দোবস্ত করে দিবেন। বোধ হয় দুই দিন না খাওয়া।” এর পরের পাতাগুলোও এমন মানবিক আবেদন ও ছটফটানিতে ভর্তি। মানুষকে কতোটা ভালোবাসলে কারাবন্দি এক নেতা দেশবাসীর জন্যে এমন করে দুঃখ পেতে পারেন তা পাঠকই বিবেচনা করবেন। এই স্বল্প পরিসরে তার মানবিকতার বিবরণ সম্পূর্ণভাবে ফুটিয়ে তোলা আমার জন্যে সত্যি অসাধ্য।

এরপর রয়েছে মায়ের অসুখের কথা। তার জন্যে গভীর কষ্টের কথা। জেলে জেলে ঘুরছেন। মাকে দেখতে পারছেন না। মা বাবার ছোট্ট ‘খোকা’র সে যে কী আকুতি তা পড়ে চোখ ভিজে আসে। এসব কথা সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত তার কন্যাদেরও চোখের পানি ছল ছল করে বয়ে গেছে। টাইপ করেছে যে মেয়েটি তার চোখের জলে ভিজে গেছে কমপিউটারের কী-বোর্ড। এক দিকে মায়ের অসুখ, অন্যদিকে অনেক কর্মী জেলে, অনেকেই আহত নিহত। তিনি অস্থির। ট্রেন দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু, সিলেটের বন্যায় মানুষের কষ্ট- সবই তাকে উতলা করে তোলে। তার কিছুই ভালো লাগে না। তবুও অর্থমন্ত্রী শোয়েবের বাজেট বিবরণ ঠিকই তুলে ধরেছেন।

ওই বাজেটে যে বাঙালির হিস্যা খুবই সামান্য সে কথা অঙ্ক কষে বের করেছেন জেলে বসে। কর ধার্য বেশি করায় জনগণের কী কষ্ট হবে সে কথা ভেবেই তিনি উদ্বিগ্ন। পাশাপাশি, পূর্ব-পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী এম এন হুদার বাজেট নিয়েও তার মন্তব্য রয়েছে। বিশেষ করে, ছয়-দফার বিরুদ্ধে বলায় তাকে এক চোট নিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। এরপর পরিবারের কথা লিখেছেন। ছেলে মেয়েরা ও স্ত্রী তাকে দেখতে আসেন। বড় দুটো ছেলেমেয়ে বুঝলেও ছোট দুটো তো বোঝে না। তারা বাবাকে ছেড়ে ফিরতে চায় না। তাই বাচ্চাদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তার মন খারাপ হয়ে যায়। বাবা-মার দেখা পান না বলে তার মন আরও ভারাক্রান্ত।

ইত্তেফাকের সম্পাদক মানিক ভাইয়ের গ্রেপ্তারে তিনি দারুণ উদ্বিগ্ন। তিনি সত্য কথা বলেন বলে তাকে জেলে নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি কীভাবে জেলের এই জুলুম সহ্য করবেন সেই চিন্তাতেই তার ঘুম আসে না। কয়েক দিন ধরে ইত্তেফাক ও মানিক মিয়াকে নিয়ে কত কথাই না তিনি তার ডায়েরিতে লিখেছেন। সংবাদের কথাও বার কয়েক এসেছে। এসেছে ন্যাপের কারাবন্দি নেতাদের সঙ্গে জেলে দেখা হওয়ার কথা। ভিন্ন দলের হলেও তাদের জন্য তার দরদ কম নয়। যেসব কর্মী জেলে থেকে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন তাদের জন্যেও তার উৎকণ্ঠার শেষ নেই।

এ ছাড়া জেলে বন্দিরা তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান, তাদের তিনি খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ান, মেটসহ কয়েদিদের ভালো মন্দ খাবারের ভাগ দেন। পাশের গাছে দুটো হলুদ পাখি, বারান্দায় কবুতরের বাচ্চাটির বেড়ে ওঠা, এমকি মুরগির মৃত্যু যন্ত্রণা- সব কিছুই তার দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। শুধু গুরুত্বপূর্ণ ছিল না তার নিজের জীবন। এই ডায়েরির পাতায় পাতায় জায়গা পেয়েছে রাজনৈতিক সহকর্মী, কর্মী ও সাধারণ কয়েদিদের কথা। আর জায়গা পেয়েছে স্বদেশের মুক্তি চিন্তা। এর মাঝেই আচমকা তাকে আসামি করা হয় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায়। নিয়ে যাওয়া হওয়া কুর্মিটোলায়। সামরিক আদালতে বিচার শুরু হবে। সর্বক্ষণ পাহারা। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। নিঃসঙ্গ। টান টান উত্তেজনা। সারা পূর্ব বাংলায় চলছে আন্দোলন। এক পর্যায়ে ১৯৬৯ সনে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে মুক্তিপান শেখ মুজিব। তাদের ভালোবাসায় হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধু। মানুষের প্রতি তার বিশ্বাস ও ভালোবাসার কোনো কমতি ছিল না বলেই এমন প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে পেরেছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের দিকে। ডাক দিতে পেরেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের। তিনিই প্রকৃত বীর যিনি মৃত্যুকে ভয় পান না। বারে বারে তিনি মৃত্যুকে উপেক্ষা করে বীরের বেশে জেল থেকে বের হয়ে এসেছেন।

মাটি ও মানুষের প্রতি নির্ভেজাল ভালোবাসার দলিল এই রোজনামচা। তার কন্যা শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধায়নে শেষ পর্যন্ত যে বইটি বাংলা একাডেমি প্রকাশ করেছে তার ঐতিহাসকি মূল্য অপরিসীম। যুগে যুগে তার এই ত্যাগের কথা, মানুষের প্রতি ভালোবাসার কথা আমাদের দেশে এবং সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

বইটির সম্পাদনায় প্রচুর মুন্সিয়ানার পরিচয় মেলে। সংযোজনীতে ছয়-দফা, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ, টীকা, নির্ঘণ্ট- বইটির সম্পাদনায় পেশাদারিত্ব ও আধুনিকতা স্পষ্টতই ফুটে উঠেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের দিন বলেছেন যে, এই বইয়ের পাতায় পাতায় সাধারণ মানুষের দুঃখ ও গ্লানি ঘোচানোর যে আকুতি রয়েছে তার আলোকেই তিনি স্বদেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। গরিব-দুঃখী মানুষের মঙ্গল চিন্তাই হবে তার সব নীতির মূল কথা। সেটাই স্বাভাবিক।

মানুষকে যে বঙ্গবন্ধু কতোটা ভালোবাসতেন তা এই বই পড়ে যেমন বোঝা যায়, তেমনি তার ভাষণগুলো পড়লেও অনুভব করা যায়। আমি অন্যত্র তার জীবন ও ভাষণগুলো নিয়ে গবেষণা করেছি। সেই বইতে (আতিউর রহমান: শেখ মুজিব বাংলাদেশের আরেক নাম) বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী শাহরিয়ার ইকবালের সৌজন্যে অন্য আরেকটি ডায়েরির ইংরেজিতে লেখা একটি পাতা থেকে কয়েকটি লাইন উদ্ধৃত করার লোভ সম্বরণ করতে পাচ্ছি না। “As a man, what concerns mankind concerns me. As a Bengalee, I am deeply involved in all that concerns Bengalees. This abiding involvement is born of and nourished by love, enduring love, which gives meaning to my politics and to my very being.”

রাজনীতির এই অমর কবি অক্ষরে অক্ষরে তার কথা রেখেছেন। মানুষকে চিরদিনের ভালোবাসার বন্ধনে বেঁধে ঘুমিয়ে আছেন তিনি বাংলাদেশের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে।

লেখক: সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সাবেক বঙ্গবন্ধু চেয়ার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

Header Ad

তিন পার্বত্য জেলায় সংঘর্ষ নিয়ে আইএসপিআর এর বিবৃতি

ছবি: সংগৃহীত

তিন পার্বত্য জেলায় সংঘর্ষ নিয়ে বক্তব্য দিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর)।

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে আইএসপিআর।

আইএসপিআর জানায়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি জেলা সদরে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে উচ্ছৃঙ্খল জনগণের গণপিটুনিতে মো. মামুন (৩০) নামে এক যুবক নিহত হন। পরবর্তীতে সদর থানা পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরদিন (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে দীঘিনালা কলেজ হতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি দীঘিনালার বোয়ালখালী বাজার অতিক্রম করার সময় ইউপিডিএফ (মূল) এর সন্ত্রাসীরা মিছিলের উপর হামলা করে ও ২০-৩০ রাউন্ড গুলি ছড়ে। এর প্রেক্ষিতে বিক্ষুব্ধ জনতা বোয়ালখালী বাজারের কয়েকটি দোকানে অগ্নি সংযোগ করে।

আইএসপিআর আরও জানায়, সংঘর্ষ চলাকালে উভয় পক্ষের ৬ জন আহত হলে তাদেরকে চিকিৎসার জন্য দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর টহল দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ফায়ার ব্রিগেড ও স্থানীয় জনসাধারণের সহায়তায় আগুন নেভায়।

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, দীঘিনালা, পানছড়ি ও আশেপাশের এলাকা সমূহে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে ক্রমেই পরিস্থিতিকে আরো উত্তেজনাকর করে তুলে।

দ্রুততার সঙ্গে খাগড়াছড়ি জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে জরুরি ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে ১০টা থেকে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, দীঘিনালা ও পানছড়িসহ সকল উপজেলায় যৌথভাবে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সমন্বয়ে টহল দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন কমিউনিটি লিডারদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে সকল পক্ষকে সহিংস কার্যকলাপ হতে বিরত থাকার পরামর্শ প্রদান করতে বলা হয়।

একই রাতে (১৯ সেপ্টেম্বর) খাগড়াছড়ি জোনের একটি টহল দল সাড়ে ১০টায় একজন মুমূর্ষু রোগীকে স্থানান্তরের সময় খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর এলাকায় পৌঁছালে অবস্থানরত উত্তেজিত জনসাধারণ ইউপিডিএফ (মূল) এর নেতৃত্বে বাধা সৃষ্টি করে। এক সময় ইউপিডিএফ (মূল) এর সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীর টহল দলের সদস্যদের উপর গুলি করে এবং আত্মরক্ষার্থে সেনাবাহিনী পাল্টা গুলি চালায়। এ গোলাগুলির ঘটনায় ৩ জন নিহত এবং কয়েকজন আহত হন বলে জানা যায়।

আইএসপিআর জানায়, একই ঘটনার ধারাবাহিকতায় খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়িতে স্থানীয় উচ্ছৃঙ্খল জনসাধারণ কয়েকজন যুবকের মোটরসাইকেল থামিয়ে তাদের উপর হামলা ও লাঠিপেটা করে। সেই সঙ্গে উত্তেজিত জনসাধারণ ইউপিডিএফ (মূল) এর নেতৃত্বে ফায়ার ব্রিগেড এর অফিসে ভাঙচুর করা হয়।

আজ সকালে পিসিজেএসএস সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ রাঙ্গামাটি জেলা সদরে সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন এর ব্যানারে স্থানীয় জনসাধারণ রাঙ্গামাটি জিমনেশিয়াম এলাকায় সমবেত হয়। এ সময় ৮০০-১০০০ জন উত্তেজিত জনসাধারণ একটি মিছিল বের করে বনরুপা এলাকার দিকে অগ্রসর হয় এবং বনরুপা বাজার মসজিদ, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, সিএনজি- অটোরিকশা, মোটরসাইকেল এবং বেশকিছু দোকানে ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগ করে। এতে করে উভয় পক্ষের বেশকিছু লোকজন আহত হন। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে রাঙামাটি জেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, উপরোক্ত ঘটনাসমূহের পরিপ্রেক্ষিতে চলমান উত্তেজনা তিন পার্বত্য জেলায় ভয়াবহ দাঙ্গায় রূপ নিতে পারে। অনতিবিলম্বে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকে চলমান উত্তেজনা প্রশমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। যথাযথ তদন্ত কার্যক্রম সম্পাদনের মাধ্যমে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের সনাক্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিন পার্বত্য জেলায় শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সর্বসাধারণকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।

শনিবার খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি পরিদর্শনে যাচ্ছে সরকারের উচ্চপর্যায়ের দল

ছবি: সংগৃহীত

খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে সৃষ্ট সমস্যা নিরসনে কাজ করছে সরকার। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানায়, শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি পরিদর্শন করবেন।

এই প্রতিনিধি দলে থাকছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এবং প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী।

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, কাল সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি পরিদর্শনে যাবেন।

এতে বলা হয়, ১৮ সেপ্টেম্বর জনৈক ব্যক্তিকে গণপিটুনি ও পরবর্তীতে তার মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলমান হামলা, আক্রমণ ও প্রাণহানির ঘটনায় সরকার গভীরভাবে দুঃখিত এবং ব্যথিত। সরকারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সকল বাহিনীকে সর্বোচ্চ সংযম দেখাতে এবং পার্বত্য তিন জেলায় বসবাসকারী সকল জনগনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেখানে শান্তি, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি নিশ্চিতকরণে সরকার বদ্ধপরিকর।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়া এবং ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত না হওয়ার জন্য সকলকে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে। আইন নিজ হাতে তুলে নেয়া এবং যেকোনো সম্পত্তি ধ্বংস করা দণ্ডনীয় ও গর্হিত অপরাধ। সহিংসতার সকল ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিত করা হবে। এ লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি খুব শিগগিরই গঠন করা হবে। আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে এতে বলা হয়।

জাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ

ছবি: সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাসে সকল ধরনের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীর লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুর তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এ দাবিতে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি শহীদ মিনার থেকে অমর একুশে, টার্জান হয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

উপাচার্যের বাসভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন। এসময় উপাচার্য বাসভবনের বাইরে আসলে শিক্ষার্থীরা তার কাছে তিন দফা দাবি জানান। উপাচার্যের কাছে লিখিত দেওয়া এই দাবিগুলো হলো, সকল ধরনের দলীয় ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারী, কর্মকর্তা রাজনীতি আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করতে হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাকসু নির্বাচন দিতে হবে। গত ১৪ থেকে ১৭ জুলাই ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের উপর হামলাকারী এবং মদদদাতাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও রাষ্ট্রীয় আইনে বিশ্ববিদ্যালয় বাদী হয়ে মামলা করতে হবে ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

এসময় ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী হাফিজুর বলেন, 'আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি চাই না। আমরা বিশ্বাস করি এই উপাচার্য আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের চাওয়া বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত সময়ে ক্যাম্পাসে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করবেন। '

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী শাকিল বলেন, আমরা একটি সমতার সমাজ গঠনের জন্যই আন্দোলন করেছি।আমাদের এ রক্ত যেন বৃথা না যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীই চায় দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক। আশা করি উপাচার্য আমাদের দাবির পক্ষে সিদ্ধান্ত দিবেন।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান বলেন, 'যেহেতু এতোদিন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পুর্ন প্রশাসন কাঠামো ছিল না, তাই আমরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। তাই আগামী রবিবার আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটা জরুরি মিটিং ডেকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।' উপাচার্যের আশ্বস্তে এসময় শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল সমাপ্ত ঘোষণা করেন। একইসাথে রোববারে শিক্ষার্থীদের দাবির পক্ষে সিদ্ধান্ত না আসলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী দেন তারা।

উল্লেখ্য, গত বুধবার গণপিটুনিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা শামীম মোল্লার মৃত্যুর ফলে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জোড়ালো হয়ে ওঠে ক্যাম্পাসে।

সর্বশেষ সংবাদ

তিন পার্বত্য জেলায় সংঘর্ষ নিয়ে আইএসপিআর এর বিবৃতি
শনিবার খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি পরিদর্শনে যাচ্ছে সরকারের উচ্চপর্যায়ের দল
জাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ
হিজবুল্লাহর ঘাঁটিতে ইসরায়েলের ব্যাপক বিমান হামলা
১৪৯ রানেই অলআউট বাংলাদেশ, ফলো-অন করায়নি ভারত
বায়তুল মোকাররমে দুই গ্রুপের সংর্ঘষ, নামাজ না পড়িয়ে পালিয়ে গেলেন সাবেক খতিব
পুলিশের ২৩ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার রদবদল
বান্দরবানে অস্ত্র, গুলি ও ড্রোন সিগন্যাল জ্যামারসহ বিপুল সরঞ্জাম উদ্ধার
পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষ: রাঙ্গামাটিতে ১৪৪ ধারা জারি
মা-বাবা-ভাইয়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ঢাবিতে নিহত তোফাজ্জল
লেবাননে ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলা, যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা
গরম কমে বৃষ্টি হবে কবে, জানালো আবহাওয়া অফিস
হাসানের ৫ উইকেট, ৩৭৬ রানে থামল ভারত
জাবিতে কোনো কমিটি নেই, হত্যাকাণ্ড নিয়ে অপপ্রচার চলছে: ছাত্রদল
দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই জাদেজাকে ফেরালেন তাসকিন, সাকিবের ক্যাচ মিস
পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মশিউর রহমান গ্রেফতার
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক হলেন সিপিডির ফাহমিদা খাতুন
ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় যে প্রশ্ন তুললেন জয়
নিউইয়র্কে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে প্রধান উপদেষ্টার
ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যায় জাবির ৮ শিক্ষার্থী বহিষ্কার, তদন্ত কমিটি গঠন