যত রপ্তানি তত আমদানি, এর বাইরে বিপদ
আমার মতে যতগুলো দেশ বিপদে পড়েছে, তাদের বিপদে পড়ার কারণ হচ্ছে বিদেশি ঋণ। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান,নাইজেরিয়াসহ যতগুলো দেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তার কারণ হচ্ছে বাইরে থেকে ঋণ নেওয়া। মূলত এই ঋণ তারা করে ঘাটতি বাজেট পুরণ করার জন্য। অনেক সময় তারা ঋণ করে ঘি খেয়েছে। অনেক সময় তারা আয়ের থেকে বেশি ব্যয় করেছে। এখন যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে বাংলাদেশ,পাকিস্তানসহ বিশেষ করে শ্রীলঙ্কা তো বসেই গিয়েছে, অনেক দেশেরই হাঁটু কাঁপছে। এগুলো হচ্ছে ছোট অর্থনীতি। বড় অর্থনীতিগুলোতে খুব একটা সমস্যা হয় না ওদের রিজার্ভ কারেন্সি জন্য।
ইউ এস ডলার, ইউরো, ব্রিটিশ পাউন্ড ইত্যাদি। আমাদের সমস্যা হচ্ছে আমাদের কারেন্সি তো বাইরে গ্রহণযোগ্য নয়। তবে বাংলাদেশ যদি রপ্তানি করতে পারে ব্যাপকভাবে তাহলে বাংলাদেশের জন্য কোনো সমস্যা নেই। তবে আমাদের সাবধান থাকতে হবে।
মনে রাখতে হবে যে, আমরা পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা থেকে ভালো অবস্থানে আছি তার মানে এটি নয় যে, আমাদের বিপদ আসতে পারে না। আমাদেরও বিপদ আসতে পারে। আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য যদি গতি না পায় তাহলে আমাদেরও বিপদ আসতে পারে। আমাদের তেল আমদানি, খাদ্যশস্য আমদানি, মেটেরিয়াল আমদানি ইত্যাদির কারণে আমাদের সমস্যা হবে। তারপর বলা যায় এই যে বিরাট একটি অঙ্ক অর্থাৎ বিদ্যুৎ না কিনেও হাজার হাজার কোটি টাকা যারা কুইক রেন্টাল কোম্পানির মালিককে দিয়েছে। এখনো কিন্তু সেই বোঝাগুলো আমাদের বহন করতে হচ্ছে।
বিভিন্ন কারণেই আমাদের সমস্যা চলছে। এখন এগুলো থেকে পরিত্রাণ পাবার উপায় হচ্ছে যে, আমাদের খরচ কম করতে হবে। বর্তমানে গ্লোবাল মূল্যস্ফীতি চলছে। আমাদের টাকা যদি নিজস্ব কোনো কারণে মূল্য না হারায় ডলার যেহেতু শক্তিশালী হয়ে যাচ্ছে, ইন্ডিয়ান রুপির বিষয়টি একই।আমাদের জন্য একটি ভাল খবর আছে। দেশে এবার আমদানি কম হয়েছে। এটি নিশ্চয়ই একটি ভালো খবর।
এখন বলতে হবে দূর্যোগগুলো সারা বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে ডলার বাইরে চলে যাচ্ছে। অর্থ পাচার যদি কিছুটা রোধ করা যেত তাহলেও আমাদের এতটা চাপের মধ্যে থাকতে হত না। কথা হচ্ছে যদি স্বস্তি না আসে, সেখানে কিন্তু বিপদ আমাদের তাড়া করবে। বিশ্বাসের ঘাটতি হলে আরও বেশি অসুবিধা হবে। অর্থনীতি ও ম্যানেজমেন্টের মধ্যে যদি বিশ্বাসের ঘাটতি শুরু হয়, তখন তাড়াহুড়ো হতে থাকবে। চারিদিকে নাই নাই দুর্যোগ আসছে। তখন খুব ক্ষতি হয়ে যায়। বংলাদেশের প্রকল্প যেগুলো সম্পন্ন হবার পথে, সেগুলো সম্পন্ন করে ফেলা উচিত। এমন কিছু ঘটে নাই যে লোড নেওয়া উচিত। আইএমএফ থেকে লোন নিতে গেলে আইএমএফ অনেকগুলো শর্ত দেবে, বাংলাদেশ সরকারের জন্য সেটি এতটা সহজ হবে না।
বাংলাদেশের উচিত এখনো সময় আছে ভেবে, শক্ত করে কোমড়ে বেল্ট বাঁধা উচিত। সময় থাকতে যদি এটি না করা হয়, তাহলে পাকিস্তান যে বিপদে পড়েছে, ,শ্রীলঙ্কা তো পড়েই গিয়েছে। এখন একটি লোন শোধ করতে আরেকটা লোন করতে হচ্ছে তাদেরকে। এটি অন্যদেশেও আগে ঘটেছে। বাংলাদেশও অপ্রয়োজনীয় ভর্তুকি নিচ্ছে। তখন ঘাটতি বাজেট বাড়তে থাকে, তখন বিদেশ থেকে ঋণ নেয়, ভেতর থেকেও ঋণ নেয়। বিদেশ থেকে ঋণ নিলে সেটি সমস্যা সৃষ্টি করে বেশি। চলতি হিসাবে ঘাটতি যেন ধারাবাহিকভাবে না চলে, এটি দেখতে হবে। আমরা যতটা রপ্তানি করতে পারি ততটা যদি আমদানি করতে পারি তাহলে ঠিক আছে । এর বাইরে গেলে আমরা বিপদে পড়ব।
লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়