গরম-বন্যা বলে অনাবশ্যক হইচই ঠিক নয়!
এই সময়ে শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে গরম পড়া খুবই স্বাভাবিক। গত বিশ বছরের গড় তাপমাত্রা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে, এই সময়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি থেকে ৩৭ ডিগ্রি পর্যন্ত হয়ে থাকে। আমরা এয়ারকন্ডিশন ঘরে থেকে গরম গরম করছি।তা ছাড়া এয়ারকন্ডিশন অনেক বেশি চলার কারণে শহরগুলো গ্রামের চেয়ে দুই থেকে তিন ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধি হয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তরের পণ্ডিতরা বিভ্রান্ত করছে। ভাদ্র মাসে তালপাকা গরম পড়ে। তখন ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রা হয়। অন্যদিকে জ্যৈষ্ঠমাসে প্রচন্ড গরম পড়ে এবং এটি প্রাকৃতিক এবং খুবই স্বাভাবিক। যে বছর গরম পড়ে না সে বছর আম পাকতে দেরি হয় এবং আমের গুণগত মান খারাপ হয়। কাজেই গরম বলে অথবা বন্যা বলে সবাই যে অনাবশ্যক হইচই করছে, এটি ঠিক নয়।
এ বছরের বন্যা অত্যন্ত মারাত্নক আকার ধারণ করেছিল। কিন্তু ক্ষতির অনেক ভাগ আছে। একটি ভাগ হচ্ছে কৃষিক্ষেত্রে ক্ষতি। কৃষিক্ষেত্রে এ বছর ক্ষতি হওয়ার কথা নয়। কারণ, এ সময় বোরো ধান নেই মাঠে। আমন ধান লাগানো হয় নাই। তাহলে ক্ষতি হলো কি করে? ক্ষতি হয়েছে বাড়িঘরের। কৃষি ছাড়া ব্যবসা অথবা অন্যকিছু। বুঝে শুনে মেসেজ দিতে হবে।
একটি প্রকৃতি বিরূপ ঘটনা ঘটছে। উত্তরবঙ্গে বৃষ্টিপাত কম হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের উচ্চতা স্বাভাবিক উচ্চতার চেয়ে বেড়েছে। যে করণে গত তিন বছর ধরে, ২০২০, ২০২১, ২০২২ অমাবস্যা পূর্ণিমার সময় বরিশাল শহরে পানি ঢুকছে। এর আগে ঢোকে নাই। এ বছর বরং চট্টগ্রাম প্রতিনিধি খুব ভালো বলতে পারবেন অমাবস্যা পূর্ণিমায় শহরে পানি ঢুকছে। প্রতিমাসে দুই থেকে তিনবার কোমড় পানি হচ্ছে, হাঁটু পানি হচ্ছে। এটি নিয়ে রিপোর্ট করা উচিত বলে আমি মনে করি।
আমরা শহরের মানুষ গরম ও রোদের সঙ্গে জীবন যাপনে অভ্যস্ত নই। গ্রামের কৃষকরা জানেন। এরা অসময়ে মাঠে কাজ করে না। এরা অন্ধকার থাকতে মাঠে নামে। তারপর ১০টা ১১টা অব্ধি থাকে। তারপর মাঠ থেকে উঠে আসে। তারপর আবার খেয়ে দেয়ে মাঠে নামে। কারণ, কৃষক জানে কখন মাঠে গিয়ে কাজ করতে হবে।
তবে হ্যাঁ, এটি বলা যায়, প্রকৃতি বদলাচ্ছে তার প্রাথমিক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন সেটি ভবিষ্যতের সমস্যা। এই সময় পৃথিবীজুড়ে প্রচন্ড খাদ্যাভাব দেখা দেবে। আগুন লেগেছে, চীন,পর্তুগাল, ফ্রান্স তারপর আমেরিকার ক্যানসাসে বন্যা হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়াতে বন্যা হচ্ছে। আবার এসব বন্যা বেশ আকর্ষিক।
বেলুচিস্থানে দুই তিন দিন আগে বৃষ্টি হয়েছে। তার মানে অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে। অর্থাৎ আবহাওয়া সংক্রান্ত ঘটনাগুলো অনুমানের বাইরে হচ্ছে। আষাঢ় শ্রাবণে বৃস্টি হওয়ার কথা কিন্তু বৃষ্টি নাই। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, আজকের আকাশটি শ্রাবণের আকাশ নয়। রবীন্দ্রনাথ বলে গিয়েছেন, নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহিরে, সেই আকাশ কিন্তু এটি নয়।
দুইশ বছর আগে পৃথিবীর লোকসংখ্যা ছিল ১০০ কোটি। এখন ৮৬০ কোটি। কিছুদিন পরে ১০০০ কোটি হবে। যে পৃথিবীতে ২০০ বছর আগে লোকসংখ্যা ছিল ১০০কোটি।সেখানে ১০০ কোটির জায়গায় ১০০০ কোটি মানুষ হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রকৃতির উপরে চাপ পড়ছে। জলা ভূমি শুকিয়ে ফেলা হল, বন কেটে ফেলা হল, এই কারণে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়ে সচেতনতা ও পূর্ব সাবধানতা গ্রহণ করতে হবে।
লেখক: শিক্ষাবিদ, পরিবেশবিদ ও পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ