আমাদের পথ হচ্ছে ভাল সরকার ব্যবস্থায় যাওয়া
আমাদের পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেছেন যে, শ্রীলঙ্কার অবস্থা থেকে আমাদের জন্য শিক্ষা নেওয়া উচিত। বিষয় হচ্ছে কোনো একটি সমস্যা যখন প্রতিবেশী রাষ্ট্রে সৃষ্টি হয় তখন সাবধান হতে হয়। আইএমএফ আমাদের সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছে।
আমার মনে হয় বাংলাদেশ সাবধান হচ্ছে। যেহেতু আমাদেরসহ অনেক দেশেই ভাল সরকার ব্যবস্থাপনা নেই। সমস্যাগুলো সৃষ্টি হয় সরকারের কারণে। অনেকে অনেক সময় বলেন বিদেশিরা সমস্যাগুলো সৃষ্টি করে। এখন আমার কথা হচ্ছে ক্ষেত্র যদি আপনি প্রস্তুত না করেন, বিদেশিরা কিছু করতে পারবে না। যেহেতু আইএমএফ আমাদের সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছে। আমরা জানি, ভাল সরকার ব্যবস্থা ছিল না শ্রীলঙ্কাতে। এজন্য তারা সমস্যাগ্রস্ত হয়েছে। কাজেই আমাদের পথ হচ্ছে ভাল সরকার ব্যবস্থায় যাওয়া। অত্যাধিক ব্যয় পরিহার করা। হা এবং না সেসব প্রজেক্ট না নেওয়া। দুর্নীতি কমানো। এই ক্ষেত্র তো বন্ধ হয়নি। কোথাও হবেও না। কিন্তু সেসব কমানো প্রয়োজন।
শ্রীলঙ্কার ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা অনুমান করা খুব কঠিন। তবে সাধারণভাবে যেটা বলা যায়, তা হলো— শ্রীলঙ্কার সামাজিক সমস্যা আছে। বিশেষ করে সামাজিকভাবে সেখানে খুবই শক্ত ডিভিশন আছে। কিন্তু আমি খুবই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি তারা এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে। আরও হয়ত কিছু সংঘাত হবে। আরও কিছু সময় হয়ত লাগবে। কারণ এগুলো হয়েছে তাদের পূর্ববর্তী ভুল সিদ্ধান্তের কারণে। শ্রীলঙ্কা একেবারেই পরিবারভিত্তিক একনায়কতন্ত্রে পৌঁছে গিয়েছিল। যা তাদের বেশি ক্ষতি করেছে। একক ক্ষমতা যেখানেই থাকে, সেখানেই এই ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। তবে আমি মনে করি তারা এটা কাটিয়ে উঠতে পারবে। বিশেষ করে যেহেতু একটা গণআন্দোলন হচ্ছে। কাজেই আমি মনে করি তাদের সব সংগঠনের মধ্যেই এক ধরনের রেস্টেইনও আছে। ফলে তারা এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে। যদিও তাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আরও কিছু ক্ষতি হয়ত হবে। শ্রীলঙ্কায় একটাই ছোট সমস্যা এখনো আছে সেটা হলো— তাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনো ঐক্যের অভাব রয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে যে ঐক্য রয়েছে, সেটা সেখানকার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নেই। এই সমস্যা তাদের অবশ্যই কাটিয়ে উঠতে হবে। যত তাড়াতাড়ি তারা এটা কাটিয়ে উঠতে পারবে, তত তাড়াতাড়ি এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারবে বলে আমার মনে হয়।
শ্রীলঙ্কার ঘটনা থেকে বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর শিক্ষণীয়— যেখানে মুখে যত কিছুই বলা হোক না কেন, মানুষ কিন্তু কিছু হলেও শিক্ষা নেয়। একটা বিষয় হলো এ অঞ্চলের মধ্যে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতেই প্রথম সমস্যাটা। এরপর মুখে যে যাই বলুক সবাই কিন্তু কিছু কিছু পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে। আমাদেরও কিন্তু যেগুলো জরুরি প্রকল্প নয়, সেখানে বরাদ্দ না দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। যেগুলো চলমান সেগুলোর বরাদ্দ আর না বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। এই পদক্ষেপগুলো কিন্তু নেওয়া হচ্ছে। কাজেই প্রত্যেক ঘটনা থেকেই শিক্ষণীয় থাকে। যেখান থেকে কিছু শিক্ষা নেওয়া হয়, কিছু নেওয়া হয় না। তবে আমি মনে করি— আমরা এখনো শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি নই। শ্রীলঙ্কার ক্রাইসিস অন্তত আমাদের কোনো সমস্যায় ফেলবে বলে আমি মনে করি না। আমরা নিজেদের কতটা সামলাতে পারি, নিজেদের দেশকে আমরা কেমন চালাতে পারি, তার উপর নির্ভর করবে কতটুকু ভালো বা মন্দ হবে।
লেখক: সাবেক পররাষ্ট্র সচিব
আরএ/