বাজেটে অর্থের গুণগত মান নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ
আমাদের প্রবাসী ভাইয়েরা যারা বিদেশে কাজ করেন, তাদের পরিবারের কাছে অর্থ যায় ঠিকই, কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে যেসব এজেন্ট অর্থাৎ যেসব প্লেয়াররা রয়েছেন, যারা ডলারের কেনাবেচা করেন, ব্যবসা বাণিজ্য করে থাকেন, তারা কিন্তু বাইরে থেকেই সেটি অন্যত্র ছড়িয়ে দেন।
আরও একটি বিষয় হচ্ছে, অবৈধভাবে অর্থ দেশ থেকে বাইরে চলে যাচ্ছে। সেটি ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে হচ্ছে। অন্যদিকে ব্যবসাপাতি বিশেষ করে রপ্তানির ক্ষেত্রে কম করে দেখনো হয় এবং আমদানির ক্ষেত্রে বেশি করে দেখানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এসবের মাধ্যমে কিছু ডলার কিন্তু বিদেশেই রয়ে যায়। ডলারের রেটটা টাকার অংকে আরও বেড়ে যাচ্ছে। এই হলো বৈদেশিক ক্ষেত্রের অবস্থা।
আরেকটি বিষয় হলো বাজেটের খাতে কিন্তু বাজেটের যে সমস্ত উন্নয়ন কার্যক্রম থাকে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে অর্থ দরকার। সেই অর্থ কোথা থেকে আসবে? আমরা প্রতিবছর দেখছি যে অভ্যন্তরীণ সম্পদ সঞ্চালনের হার অনেক কম থাকে এবং যে লক্ষ্যমাত্রা থাকে সেটি সম্পন্ন হয় না। আমাদের ট্যাক্স কর জিডিপি হার অত্যন্ত কম। কর জিডিপি হার বাড়ানোর জন্য প্রচেষ্টা চালানো, কর ব্যবস্থাকে সম্পুর্ণ আধুনিকীকরণ করা, কর ফাঁকি বন্ধ করা ইত্যাদির জন্য পদক্ষেপ দরকার। এগুলো স্বল্প মেয়াদে যেমন দরকার , তেমনি দীর্ঘ মেয়াদেরও বিষয় রয়েছে। সুতরাং সরকারকে আর্থিকভাবে একটি যোগানের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ বাজেটে অনেক ধরনের সাপোর্টের কথা আমরা বলেছি। তাছাড়া বিভিন্নখাতে যেমন জ্বালানি খাত, কৃষিখাতে, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ভর্তুকি দেওয়ার বিষয় রয়েছে। সেগুলোও কিন্তু বাজেটে রাখতে হবে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন সামাজিক খাত, শিক্ষা, সাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা, এসমস্ত খাতে সরকারের পক্ষ থেকে আরও অর্থ বরাদ্দ থাকা দরকার। আমাদের শিক্ষাখাতে বাজেটের মাত্র ২%, স্বাস্থ্য খাতে মাত্র ১% এর নিচে থাকে, এসব ক্ষেত্রে আমরা যদি না বাড়াতে পারি, তাহলে সেটি একটি সমস্যা রয়েই যাবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বাজেটে বরাদ্দ যেমন একটি বিষয়, তেমনি তার বাস্তবায়নও অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই আমি বলবো যে, অর্থ ব্যয় করা শুধু না, অর্থের গুণগত মান নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ।
আমার কাছে মনে হয় এই মুহূর্তে মূল্যস্ফীতির চাপটিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে, রপ্তানি আয় অনেক কম, তারপর রেমিটেন্সের প্রবাহ অনেক কম। সুতরাং এখানে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। চলতি হিসাবের মধ্যে বেশ ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। সেই ঘাটতিগুলো পূরণের জন্য আমাদের যথেষ্ট পরিমাণে উদ্যোগ নিতে হবে। অপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি, বিলাসী পণ্যের আমদানি, কমিয়ে দিতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবহার সেটি কম করা অর্থাৎ সাশ্রয়ী হওয়া দরকার। যেসব ক্ষেত্রে হিসেবের মধ্যে ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলো দূরীকরণে যথেষ্ট পরিমাণে উদ্যোগ নিতে হবে।
লেখক: অর্থনীতিবিদ ও নির্বাহী পরিচালক, সিপিডি
আরএ/