ভর্তুকির সংস্কৃতি থেকে সরে আসতে হবে
বাজেটে সরকার ভর্তুকি দিয়ে আসছে অনেক আগে থেকেই। অনেক কলকারখানা লাভে চলা বন্ধ হয়ে গেছে আগে থেকেই। সরকার এগুলোতে ভর্তুকি দিচ্ছে। বিমানে ভর্তুকি দিচ্ছে। রেলওয়েতে ভর্তুকি দিচ্ছে। পেট্রোলিয়ামেও ভর্তুকি দিচ্ছে। সরকারি সংস্থাগুলিতে খুব বেশি লুটপাট হয়ে থাকে। এসব কারণে সরকারের ভর্তুকি বেশি হয়। সরকারকে এই ভর্তুকির সংস্কৃতি থেকে দূরে থাকতে হবে। কিছু কলকারখানা যেগুলি চলবে না সেগুলি বন্ধ করা উচিত। যে সকল রাষ্ট্র বেশি ভর্তুকি দিচ্ছে সে সকল রাষ্ট্রের বাজেট হয়েছে ঘাটতি। বাজেটের ঘাটতি মানে বাজেট বাড়তেই থাকে। কাজেই আমি বলব, এই ভর্তুকি হয়ে গিয়েছে, অর্থনীতিকে পিছিয়ে টেনে আনার বিশাল বড় অনুঘটক।
ভর্তুকি দেওয়া সেটি যদি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে দেওয়া হয় সেটি হয়তো ঠিক আছে। এবারে যেটি গুরুত্বপুর্ণ সেটি হলো, দুই কোটি তিন কোটি মানুষকে খাওয়াতে হবে। এবারের কোভিডের থাবা অনেককে কর্মহীন করে দিয়েছে। গরীব আরও গরীব হয়ে গিয়েছে। সারা দুনিয়াতে এটি হয়েছে, বাংলাদেশও এর বাইরে না। সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টিকে বাজেটে সামঞ্জস্য করতে হবে। আমি আরও একটি বিষয় বলতে চাই যে, বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। শ্রীলঙ্কার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।শ্রীলংকা ঋণ করে ঘি খাওয়ার ফলে আজ দেওলিয়া হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে আয় যা তার থেকে বেশি ব্যয় করা। এই ব্যয় আসে কোথা থেকে? বিদেশি ঋণ থেকে। বাংলাদেশের জন্য সুবিধা হচ্ছে বিদেশি ঋণ থেকে সেই অংশ এখনো আসে নাই। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে ঋণটা যেন বেশি না হয়।
ফুটপাত থেকে শুরু করে সর্বত্র চাঁদাবাজি হচ্ছে। সরকারি দলের ছত্রছায়ায় কাজগুলি হচ্ছে। এখন জনগণ এদের চাঁদা দিবে নাকি সরকারকে ট্যাক্স দেবে? এজন্য বাংলাদেশে যে আর্থিক খাতে দুরাবস্থা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ব্যাংক ব্যবস্থাপনার মধ্যে যে দুনীতি আছে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাইরের দুষ্ট বলয়। এই যে ঋণ গ্রহীতা ঋণ খেলাপিরা। এগুলোতো সরকার থেকেই যাচ্ছে। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় যাচ্ছে। বাংলাদেশের পুঁজিবাজার থেকে যেভাবে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে সেদিকে খেয়াল করতে হবে। এক্সপোর্ট-ইম্পোর্টের ব্যাপারটি আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। আমাদের প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারত কিন্তু একটি আইটেম থেকে প্রতিবছর প্রচুর অর্থ আয় করে,যেটি আমাদের পক্ষেও করা সম্ভব এবং করতে হবে।
সারা পৃথিবীতে আর্থিক খাতের বিষয়টি যেখানে খুব শক্ত অবস্থানে থাকে, সেখানে আমাদের দেশে সেটি খুবই রিল্যাক্স মনে হয়। এখন ব্যাংকের বোর্ডে বসে বসে অনেকে অকাজ করছে। ব্যাংকগুলোকে শোষণ করছে। সাধারণ লোকেরা যারা ৭০ শতাংশ শেয়ার হোল্ডার তারা ঠকছে। আরও একটি বিষয় হলো বাংলাদেশে ৪.৫ শতাংশ ঘাটতি বাজেট ছিল। এবারও সেই অবস্থাতেই থাকা উচিত। এটি বৃদ্ধি হতে দেওয়া ঠিক হবে না। মূল্যস্ফীতিতো এমনিতেই সৃষ্টি হচ্ছে বাইরের অর্থনীতির কারণে। সরকারের হাতে মূল্যস্ফীতি রোধ করার মতো ক্ষমতা খুব কমই আছে। যেহেতু বাইরের সঙ্গে এটি জড়িত। বাইরে চাল, তেল, জ্বালানির দাম বাড়ছে, বাংলাদেশ যেহেতু এসব বাইরে থেকে ইম্পোর্ট করে সেক্ষেত্রে সরকার তেমন কিছুই করতে পারবে না। তবে সরকার যেন ঘাটতি বাজেটের লিমিটেশনের সেই ধারাবাহিকতাটুকু মেনে চলে। আমি মনে করি, বাজেটের আকারের চেয়ে বাজেটের কার্যকারিতা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই সেই বিষয়টি লক্ষ্য রেখে বাজেট প্রণয়ন করা উচিত।
লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়