আলুতে লোকসানে মানিকগঞ্জের কৃষক
নতুন আলু বাজারে এনে আশানুরূপ দাম পাচ্ছে না কৃষক। আলুর বীজ এবং কীটনাশকের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিগত বছরগুলোর চেয়ে উৎপাদন খরচ বেড়েছে অনেকাংশে। পাইকারি বাজারে খরচের অর্ধেক দামে বিক্রি করতে হচ্ছে আলু। অনাবৃষ্টি উপেক্ষা করে আলু চাষে ন্যায্যমূল্য না পেয়ে হতাশ হয়েছেন মানিকগঞ্জের কৃষকেরা, পরেছেন পুঁজি হারানোর ঝুকিতে।
কৃষক ২৫ টাকা কেজি দরে আলুর বীজ কিনে জমিতে রোপন করেছেন অথচ সেই আলু ৭ থেকে ১০ টাকা কেজিতে বেঁচতে হচ্ছে। পরিবহন খরচ দিয়ে জামি থেকে আলু তুলে এনে বিক্রি করে যে টাকা বিক্রি হয় তা দিয়ে শ্রমিকের মজুরি আর পরিবহন খরচ দিতেই হিমশিম। ক্ষতির আশঙ্কায় অনেক কৃষকের আলু জমিতেই নষ্ঠ হচ্ছে।
নতুন আলু বাজারে উঠার পর থেকেই খুব দ্রুত দাম কমেছে। যেখানে বিগত বছরগুলোতেও নতুন আলুর দামে সন্তুষ্টু ছিল কৃষক। আলু বিক্রয় করে কৃষক লাভবান না হলেও খুরচা বিক্রেতারা লাভবান হচ্ছেন ঠিকই। তাই কৃষকের দাবি আলুর সরকারি ভাবে পাইকারি মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার।
মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আলু চাষের উপযোগী জমি ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় জেলায় গত তিন দশক ধরে প্রচুর পরিমাণে আলু চাষ হয়ে আসছে। গত বছরে ১হাজার ৫শত ৭৭ হেক্টর জমিতে গোল আলুর চাষ করা হয়েছিল। এতে ৩৭ হাজার ৬ শত ৪৭ মেট্রিক টন আলু উৎপন্ন হয়। এবার ১ হাজার ৫শত ৬৫ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে।
আলু চাষিরা জানিয়েছে, কৃষক পাইকারের কাছে প্রতি কেজি আলু ৫ থেকে সর্বচ্চ ৮ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে পারছে। খুচরা বাজার থেকে একজন সাধারণ ক্রেতাকে কেজি প্রতি গুনতে হচ্ছে ১৫-২০ টাকা।
গত বছর করোনাকালীন সময়েও প্রতি কেজি আলু জমি থেকে কৃষক বিক্রয় করেছে ১৫-১৬ টাকা দরে। বর্তমানে এই আলু পাইকারি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ৮ টাকা। যা গেল বছরের অর্ধেক। জেলার দেড় হাজার কৃষক, মৌসুমি আলু চাষি ও ব্যবসায়ীরা প্রায় পাঁচ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে এই নতুন আলু চাষে।
সদর উপজেলার কৃষক তরব আলী বলেন, 'প্রায় ৬৬ শতাংশ জমিতে আলু চাষ করেছি, বাজারে আলুর দাম ভাল না। ৭-৮টাকা দরে বিক্রি করছি অথচ আলুর বিজ ২০ টাকা কেজি কিনে জমিতে রোপন করেছি। শ্রমিক নিয়ে জমি থেকে আলু তুলে ৭-৮ টাকা দরে বিক্রয় করে কোনে লাভ হচ্ছেনা। কোন মতে খরচের টাকা উঠেছে। ন্যয্যমূল্য না পাওয়ায় পুঁজি হারিয়ে পথে বসার উপক্রম আমাদের।'
ঘিওর উপজেলার চরবাইলজুরী গ্রামের কৃষক দুলাল মিয়া বলেন, 'আমার নিজস্ব জমি নাই। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে আলুর আবাদ করেছি। আমি প্রতি বছরই এই শীত মৌসুমে আলুর আবাদ কারি, এই বছরের মত লোকসান কখনও হয় নাই। বীজ বুনার পর বৃষ্টিতে অনেক ক্ষতি হয়েছে। সামনে বার আর আলু করবো না। সরকার যদি আলুর দাম নির্ধারণ করে দিত তাহলে আমরা বাঁচতাম।'
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ এনায়েত উল্লাহ বলেন, 'চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষক আলুর দাম পাচ্ছেনা। কৃষককে আলুর বিকল্প চাষের পরামর্শ দিচ্ছি। কেনা বেচার উপরে বাজারের অর্থনীতির সূচক উঠানামা করে।'
কেএফ/