রংপুরে অহিমায়িত ঘর নিয়ে আশাবাদী আলুচাষিরা
রংপুরে আলুর বহুমুখী ব্যবহার, সংরক্ষণ ও বিপণনে অহিমায়িত মডেল ঘরে আশার আলো দেখছেন চাষিরা। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বলছে, মডেল এই ঘরে ২৫-৩০ টন আলু সংরক্ষণে কৃষকের বছরে সাশ্রয় হবে প্রায় দেড় লাখ টাকা। একেকটি অহিমায়িত মডেল ঘর ১২-১৫ বছর ব্যবহার করা গেলে দেড় কোটি টাকার বেশি কোল্ড স্টোরেজ খরচ বাঁচবে। সঙ্গে কমবে আলু সংরক্ষণের বিড়ম্বনা।
রংপুর কৃষি বিপণন অধিদপ্তর জানায়, আলুর বহুমুখী ব্যবহার, সংরক্ষণ ও বিপণন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে রংপুর বিভাগসহ দেশের ১৬টি জেলায় ৪৫০টি অহিমায়িত মডেল ঘরে আলু সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে রংপুর বিভাগের আট জেলায় হবে ২৮৩টি অহিমায়িত মডেল ঘর। চলতি অর্থ বছরে রংপুর জেলায় ৭৫টি অহিমায়িত মডেল ঘরের মধ্যে ৪৫টিতে আলু সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি ঘরে ২৫-৩০ টন আলু ৪-৬ মাস ধরে সংরক্ষণ করা যাবে। সরকারি অর্থায়নে নির্মিত এসব অহিমায়িত মডেল ঘরে আলু সংরক্ষণে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। বর্তমানে এটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর সুফল মিললে সারা দেশে এই প্রকল্প ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উপহার পাওয়া মডেল ঘর পেয়ে আনন্দিত স্বচাষ গ্রামের স্থানীয় কৃষক বিপণন দলের সভাপতি আলুচাষি তৈয়বুর রহমান জানান, আমরা আলুচাষিরা ন্যায্য মূল্য পাই না। প্রতিবছর আমরা অর্থনৈতিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছি। সার, বীজ, শ্রমিক, উৎপাদন খরচ ছাড়াও কোল্ড স্টোরেজে আলু সংরক্ষণ খরচের কারণে নুমাফা নিয়ে হিশমিশ খেতে হয়। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের দেওয়া অহিমায়িত মডেল ঘরে আমরা এখন ২৫-৩০ টনের বেশি আলু রাখতে পারব। এটি একটি বিজ্ঞানসম্মত মিনি কোল্ড স্টোরেজ। এতে আমাদের এই ঘর থেকে হিমাগারের তুলনায় দেড় লাখ টাকা সাশ্রয় হবে। বিশেষ করে আলুর দাম বাড়লে চাহিদা অনুযায়ী আমাদের ইচ্ছে মতো আলু বিক্রি করতে পারব।
রংপুর জেলা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সিনিয়র বিপণন কর্মকর্তা রবিউল হাসান বলেন, চাষিদের আলু সংরক্ষণের খরচ লাঘবে আমরা অহিমায়িত এই মডেল ঘরের পাইলট প্রোগ্রাম গত বছর থেকে হাতে নিয়েছি। প্রোগ্রামের আজ বাস্তব রূপ পেতে শুরু করেছে। আমাদের এই একেকটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয় দেড় লাখ টাকা। কৃষকরা ১২ থেকে ১৫ বছর ধরে নিশ্চিন্তে আলু সংরক্ষণ করতে পারবে। একেকটি ঘরে প্রায় ২৫-৩০ টন আলু ৪-৬ মাস সংরক্ষণ করা যাবে। প্রতি বছরে একেকজন আলুচাষিদের দেড় থেকে পৌনে দুই লাখ টাকা হিমাগার খরচ সাশ্রয় হবে।
আলুর বহুমুখী ব্যবহার, সংরক্ষণ ও বিপণন উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক আনোয়ারুল হক বলেন, সাধারণ কোল্ড স্টোরেজে আলু রাখতে প্রতি কেজিতে ৬ টাকা এবং অন্যান্য খরচ মিলে কেজিতে ১০ টাকা দাঁড়াবে। কিন্তু অহিমায়িত মডেল ঘরে আলু সংরক্ষণে কোনো খরচ নেই। কৃষকের যদি হিমাগারের খরচ বেচে যায়, তাহলে তারা ১৫-১৬ কেজিতে আলু বিক্রি করলে অনেক বেশি লাভবান হবে। এই মিনি অহিমায়িত মডেল ঘরে জুন পর্যন্ত আলু রাখতে পারলেও দাম নিয়ে চাষিদের চিন্তা করতে হবে না। কারণ তারা নিজেদের ইচ্ছে মতো আলু বিক্রি করতে পাবে।
কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার বলেন, রংপুর অঞ্চলে চাহিদার তুলনায় আলুর উৎপাদন অনেক বেশি। আমি নিজেই বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেছি বাড়ি এবং খেতে আলু, উপচে পড়ে আছে। সংরক্ষণের জায়গা নেই, আবার কেউ চাইলেও সহজে কোল্ড স্টোরেজে আলু রাখতে পারছেন না। কোল্ড স্টোরেজে একটা সীমাবদ্ধতা আছে। এ পরিস্থিতিতে অহিমায়িত মডেল ঘর আলু সংরক্ষণে একটি উত্তম ব্যবস্থাপনা।
এর আগে রবিবার (১৯ মার্চ) দুপুরে রংপুর জেলার পীরগাছার কল্যাণী ইউনিয়নের স্বচাষ গ্রামে আনুষ্ঠানিকভাবে অহিমায়িত মডেল ঘরে আলু সংরক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। উদ্বোধনী কার্যক্রমে নতুন এই ঘরে আলু সংরক্ষণ পদ্ধতি তুলে কৃষকদের আশার কথা শোনান কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ কৃষি কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ফাও)এর রিপ্রেজেন্টিভ ইন বাংলাদেশ রবার্ট ডি সিস্পাসন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ বাদল বিশ্বাস চন্দ্র, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ওমর মো. ইমরুল মহসিন, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করর্পোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক আফতাব হোসেন, রংপুর কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উপপরিচালক আনোয়ারুল হক, রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল।
এসএন