এবার এক লাখ টনের বেশি আলু রপ্তানি হবে: কৃষি সচিব
কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার বলেছেন, এবার দেশ থেকে এক লাখ মেট্রিকটনেরও বেশি আলু রপ্তানি করা হবে। ২০১২-২০১৩ সালে এক লাখ মেট্রিকটনের উপরে আলু রপ্তানি হয়েছে। ১৪ সালের পর নানা কারণে আলু রপ্তানিতে একটা ধস নামে। আমরা সেটি কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করেছি। গত মৌসুমে আমরা প্রায় ৭৮ হাজার মেট্রিনটন আলু রপ্তানি করেছি।
রবিবার (১৯ মার্চ) দুপুরে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার বেলতলী বিরাহিম এলাকায় জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং সারা বাংলা কৃষক সোসাইটির উদ্যোগে ‘উত্তম চাষাবাদ পদ্ধতিতে’ আলু রপ্তানি কার্যক্রমের উদ্বোধন শেষে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, রপ্তানি বৃদ্ধি সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। আলু রপ্তানিতে সরকার উৎসাহ প্রদান করছে। আমি এফএও এর এমএমআই এবং ডিএই, বিএডিসি, আলু রপ্তানিকারক সমিতি (বিপিইএ) এবং উৎপাদনকারী সংগঠনগুলোর যৌথ প্রচেষ্টা ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত রাখায় তাদের প্রশংসা করেন। তৃণমূল পর্যায়ে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের উন্নয়নে এবং দেশের স্বার্থে রপ্তানি প্রক্রিয়া সহজ করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা বর্তমানে মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশসহ ২৮টি দেশে আলু রপ্তানি করছি।
কৃষি সচিব বলেন, আমাদের লক্ষ্য রাশিয়ার বড় বাজার ধরা। রাশিয়া, ফিজি এবং ভিয়েতনামে আলু রপ্তানি শুরু করার চেষ্টা আছে। গত চার বছর ধরে রংপুরের আলু উৎপাদনকারী সংগঠনগুলো এফএওর সহায়তায় নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর চাষাবাদ ও প্রক্রিয়াজাত করণের সমন্বিত নীতি উত্তম চাষাবাদ পদ্ধতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তা কাজে লাগিয়ে রপ্তানিমানের আলু উৎপাদন করছে। চাষিরা এ ধারা অব্যাহত রাখবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
মাঠ পর্যায়ে এফএও, সরকারের প্রতিনিধি, আলু উৎপাদনকারী সংগঠন এবং কৃষকদের অংশগ্রহণে আলু উৎপাদন ও রপ্তানি বিষয়ে একটি ব্যবসা অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানস্থলের পাশে চাষিরা স্থানীয় ও উন্নত জাতের আলুর প্রদর্শন করেন।
এতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (নীতি পরিকল্পনা ও সমন্বয়) রুহুল আমিন তালুকদার, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান ও অতিরিক্ত সচিব আবদুল্লাহ সাজ্জাদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক আফতাব হোসেন, এগ্রোমি এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমা রহমান, বাংলাদেশ আলু রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিইএ) সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, বিরাহিম আলু উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির আলু চাষি সালমা আক্তার আদুরী আলোচক হিসেবে অংশ নেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, রংপুর জেলায় দেশের প্রায় এক-চতুর্থাংশ আলু উৎপাদিত হয়। এ বছর আলু চাষিরা ভালো ফলন পেয়েছে এবং ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ আলু রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিইএ) সঙ্গে তাদের চুক্তি রয়েছে। কৃষকরা বিশেষভাবে রপ্তানির উদ্দেশে সানশাইন নামে একটি নতুন আলু চাষ করতে শুরু করেছে। জাতের দ্রুত বর্ধনশীল এবং উচ্চ ফলন অর্জনে সহায়ক। কৃষি মন্ত্রণালয় আলু রপ্তানি বাড়াতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) এবং বিএডিসির মাধ্যমে ২০১৯ সাল থেকে চাষিদের সহায়তা দিচ্ছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ফাও) এর রিপ্রেজেন্টিভ ইন বাংলাদেশ রবার্ট ডি সিস্পাসন বলেন, বাংলাদেশের কৃষি খাতকে রূপান্তরিত করার দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গির অংশ হিসেবে এফএও আলুসহ প্রধান প্রধান ফসলের রপ্তানি বাড়াতে সরকারের সঙ্গে কাজ করছে। বাংলাদেশি আলু উৎপাদনকারীরা প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছর দেশে ১ কোটি ১০ লাখ মেট্রিকটন আলু উৎপাদন হয়েছে, যা চীন এবং ভারতের পরে এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এর মধ্যে ৮ লাখ মেট্রিক টন আলু রপ্তানি করা হয়েছে। মালয়েশিয়া থেকে গত বছর অনেক চাহিদা ছিল, যার ফলে বাংলাদেশের আলু রপ্তানির এক তৃতীয়াংশেরও বেশি সেখানে (৩৮ শতাংশ)। নেপাল ও শ্রীলঙ্কা (প্রত্যেকটিতে ২০ শতাংশ) গিয়েছে। বাংলাদেশ মিয়ানমার (০৯ শতাংশ), সিঙ্গাপুর (০৪ শতাংশ), সংযুক্ত আরব আমিরাত, ব্রুনাই, কাতার, বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, জর্ডান এবং লেবাননে আলু রপ্তানি করেছে।
এসজি