মাগুরায় গম চাষে আলোর মুখ দেখছেন কৃষকরা
মাগুরায় গম চাষে আলোর মুখ দেখছেন জেলার কৃষকরা। এ জেলায় ধান,পাট, সরিষা, মুশুরির পাশাপাশি গম চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি বছর শ্রীপুর উপজেলায় পেঁয়াজ চাষে ধস নামায় এ উপজেলার অধিকাংশ কৃষকরা এখন গম চাষে ঝুকচ্ছেন। এবার আবহাওয়া ও পরিবেশ ভালো থাকার কারণে জেলার কৃষকরা গম উৎপাদনে বাম্পার ফলনের আশাবাদী।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানা গেছে, চলতি বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় জেলার ৪ উপজেলায় গমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। জেলায় এবার মোট ৫ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে গমের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদরে ১ হাজার ৩৪৫ হেক্টর, শ্রীপুরে ২ হাজার হেক্টর, শালিখায় ৩৩৫ হেক্টর ও মহম্মদপুরে ১ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে গমের চাষ হয়েছে। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৪৫৬ মেট্রিক টন। হেক্টর প্রতি উৎপাদন হবে ৩.৩৩ মেট্রিক টন। চলতি বছর বারি গম ৩৩, ৩০, ৩২, ২৮, ২৭ ও ২৫ জাতের গমের বীজের চাষ হয়েছে বেশি।
মাগুরা শ্রীপুর উপজেলার মদনপুর গ্রামের কৃষক রোকন মিয়া জানান, চলতি মৌসুমে আমি ১৬ শতাংশ জমিতে গমের চাষ করেছি। পৌষ মাসে গমের বীজ রোপন করি। তারপর চারা একটু বড় হলে পরিচর্যা শুরু করি। মাঘ মাসের মাঝামাঝি চারাগুলো বড় হলে আগাছা পরিস্কার করি। এখন ফাল্গুন মাস। গমের গাছ পরিপূণ হয়েছে। প্রতিটি গমের মাথায় শীশ বের হয়েছে। গম পেকে হলুদভাব হয়ে গেলে আগামী দেড় মাসের মধ্যে গম কাটাতে পারবো।
শ্রীপুরের চরজোকা গ্রামের কৃষক আলমগীর বলেন, পেঁয়াজ চাষে ধস নামার পর আমি গমে চাষ করি। এবার আবহাওয়া ভালো থাকার কারণে গম চাষের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এখন প্রতিটি মাঠে গমের শীশ বের হয়েছে। আর কয়দিন পরেই এ গম পেকে যাছে। যদি আবহাওয়া ও পরিবেশ ভালো থাকে তবে ফলন ভালো পাব। আমি ১৪০ শতক জমিতে গমের চাষ করেছি। বিঘাপ্রতি ১৫ মণ গম পাব আশাকরি।
মাগুরা সদরের ছয়চার গ্রামের কৃষক শফিকুল বলেন, আমি অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি গমের চাষ করি। এবার ৭০ শতক জমিতে আমার গমের চাষ রয়েছে। গত বছর গমের ভালো ফলন পেয়ে ছিলাম। তাই এবারও গমের চাষ করেছি। কোন প্রাকৃতিক দূযোগ না হলে গমের বাম্পার ফলন হবে।
শ্রীপুরের চরমালাইনগরের গম চাষী আকরাম বলেন, আমি এবার ১৬০ শতক জমিতে গমের চাষ করেছি। চলতি বছর গমের গমের সংকট থাকবে কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধেও প্রভাব রয়েছে। আমাদেও দেশে প্রতি বছর বিদেশ থেকে গম আমদানি করতে হয়। তাই গমের সংকট যাতে না হয় সেই জন্য একটু বেশি চাষ করেছি। গমের বড় শত্রু ঝড়-শিলা বৃষ্টি। এবার যদি ঝড় ও শিলা বৃষ্টি বেশি না হয় তবে গমের বাম্পার ফলন পাব। আর ২ মাসের মধ্যেই গম কাটা শুরু হবে।
মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুফি মো: রফিকুজ্জামান বলেন, চলতি বছর জেলায় গমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এবার আবহাওয়া ও পরিবেশে ভালো থাকার কারণে জেলার কৃষকরা গম চাষে বেশি ঝুকেছেন। এবার শীত দীর্ঘ স্থায়ী থাকায় গমের চাষ ভালো হয়েছে। জেলা কৃষি বিভাগ থেকে এবার ৩ হাজার কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে। আমাদের মাঠ কর্মী সবর্দা গমের ভালো ফলনের জন্য নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করছেন। আশাকরি আবহাওয়া ভালো থাকলে গমের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
এএজেড