তুলা চাষে সুদিন ফিরছে দক্ষিণের ৪ জেলায়
দেশের দক্ষিণের চার জেলা যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গায় তুলা চাষে সুদিন ফিরছে। ধান, পাট, সবজিসহ অন্যান্য ফসলের চেয়ে তুলার ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে এটি আবাদে আগ্রহ বাড়ছে। চলতি মৌসুমে এই ৪ জেলায় রেকর্ড পরিমাণ তুলার আবাদ হয়েছে। আবাদে নতুন সংযোজন উচ্চফলনশীল হাইব্রিড জাতের বীজ। এ বীজে ফলন যেমন বেশি হচ্ছে, তেমনি একই জমিতে অন্য সবজি আবাদ করে কৃষক দ্বিগুণ লাভ করছেন।
তুলা উন্নয়ন বোর্ড যশোরের উপপরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ওই ৪ জেলায় চলতি মৌসুমে তুলা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৬ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ১৬ হাজার ৬৩৫ হেক্টরে। এর মধ্যে যশোরেই আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৩৫২ হেক্টরে।
কৃষকরা জানান, এ বছর তুলা আবাদের জন্য আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো। বিঘাপ্রতি প্রায় ১৫ মণ তুলা উৎপাদন হচ্ছে। গত মৌসুমে প্রতি মণ তুলার দাম ৩ হাজার ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও এ বছর তা বেড়ে ৩ হাজার ৮০০ টাকায় পৌঁছেছে। এতে তারা বেশ লাভবান হচ্ছেন।
যশোরের এক তুলাচাষী বলেন, এ মৌসুমে যারা পাট আবাদ করেছেন তারা চরম লোকসান গুনেছেন। এক মণ পাটের দাম বর্তমানে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। অথচ এক মণ তুলার দাম ৩ হাজার ৮০০ টাকা। এক বিঘা জমিতে তুলা আবাদ করতে কৃষকের ব্যয় হয় ১২-১৫ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে তুলা উৎপাদন করে কৃষকের নিট আয় থাকে ৪০-৪৫ হাজার টাকা, যা অন্য কোনো ফসলে সম্ভব নয়।
আরেক চাষী বলেন, বাজারে অন্য ফসলের দাম উঠানামা করলেও তুলার দাম শুরু থেকেই নির্ধারিত। ফলে লোকসানের কোনো সুযোগ নেই। ক্ষেত থেকে তুলা উঠানোর পরই প্রক্রিয়াকরণ কারখানার লোকেরা এসে নিয়ে যায়। এতে বাড়তি কোনো ঝামেলা নেই।
তুলা উন্নয়ন বোর্ড যশোর অঞ্চলের উপপরিচালক ড. কামরুল হাসান বলেন, এ অঞ্চলে তুলা আবাদ সম্প্রসারণে আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। উচ্চফলনশীল নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন ও তা থেকে বীজ তৈরি করে কৃষকের মাঝে সরবরাহ করা হচ্ছে। যশোরের চৌগাছার তুলা গবেষণা খামারের বৈজ্ঞানিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে আমরা ২০২১-২২ অর্থবছরে দুই টন উচ্চফলনশীল হাইব্রিড জাতের তুলা বীজ উৎপাদন করে কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করি। আগামী অর্থবছরে তিন টন বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক আখতারুজ্জামান বলেন, দেশে বছরে ১ লাখ ৮০ হাজার বেল উৎপাদন হচ্ছে। এটি ৮-১০ লাখ বেলে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড। বিশেষ করে যশোরসহ দক্ষিণের জেলা ছাড়াও পাহাড়ি এলাকায় তুলা চাষের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
এসজি