ভাইরাসে মরছে ‘সাদা সোনা’
বাগরহাটের রামপাল ও মোংলা উপজলায় ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মরছে ‘সাদা সোনা’ খ্যাত চিংড়ি মাছ। এর ফলে মৌসুমের শুরুতে এ দুই উপজলায় চিংড়ি শিল্পে কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চিংড়ি চাষিরা।
মৎস্য বিভাগ বলছে, অপরিকল্পিত ঘের করা ও ভাইরাসযুক্ত পোনা ছাড়ায় এমনটা হতে পারে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র ও ভুক্তভোগীদেরে সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাগেরহাটের রামপাল ও মোংলা উপজেলায় চিড়িং চাষি রয়েছেন কয়েক হাজার। এ দুই উপজেলায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার চিংড়ি ঘের রয়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে এ দুই উপজলার বিভিন্ন এলাকায় চিংড়ি ঘেরে হঠাৎ করে মাছ মরতে শুরু করে। তবে কী কারণে চিংড়ি মরছে চাষিরা তার সঠিক কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না। তারা ধারণা করছেন, ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই মাছগুলো মরে যাচ্ছে।
রামপাল উপজেলার ভোজপাতিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা চিংড়ি ঘের ব্যবসায়ী নুরুল আমিন বলেন, আমাদের ইউনিয়নের ৮০ ভাগ চিংড়ি ঘেরে মড়ক লেগে চিংড়ি মরে গেছে। এতে চাষিরা সর্বস্ব হারিয়েছেন। কী কারণে মাছ মরছে তাও তো কেউ বলতে পারছে না।
উপজেলার গৌরম্ভা ইউনিয়নের চিংড়ি চাষি রাজীব সরদার বলেন, ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ ঘেরের চিংড়ি মরে শেষ। যারা ঋণ নিয়ে চিংড়ি চাষ করেছেন তারা একবারই নিঃস্ব হয়ে গেছেন। এ উপজেলার রাজনগর, বাইনতলা ও পেড়িখালি ইউনিয়নের সব চিংড়ি ঘেরের অবস্থা একই রকম।
মোংলা উপজেলার সোনাইলতলা ইউনিয়নের বাসিন্দা জসিম উদ্দিন সরদার বলেন, বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আমার তিন বিঘা জমিতে মাছ ছেড়ে ছিলাম। গত চার দিন ধরে মাছ মরতে শুরু করেছে। ঘের থেকে মরা মাছ উঠিয়ে দেখি প্রতিটি মাছের গায়ে সাদা সাদা দাগ রয়েছে। কী রোগে মাছ মরছে, তা তো বুঝতে পারছি না। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আমার তো পথে বসা লাগবে।
একই উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নের কাটাখালি এলাকার বাসিন্দা মারুফ হাওলাদার বলেন, এর আগেও ঘেরে মাছ মরেছে, কিন্তু এত দ্রুত কখনো মাছ মরতে দেখিনি। সব মাছ মরে ঘেরের পানির তলায় রয়েছে। ঘেরে নামার পর হাতিয়ে মরা মাছ উঠাচ্ছি।
এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস. এম রাসেল বলেন, জেলার রামপাল ও মোংলা উপজেলার প্রায় ২০ হাজার চিংড়ি ঘেরের ৩৫ শতাংশ ঘেরের মাছ মারা গেছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। তবে কী কারণে চিংড়ি মারা যাচ্ছে, সেটি বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা ধারণা করছি অতিরিক্ত গরম, হোয়াইট স্পট সিনড্রম ভাইরাস বা মৌসুমের শেষে ভাইরাস যুক্ত চিংড়ি ঘেরে ছাড়ার কারণে এমনটা হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, জেলার অধিকাংশ ঘের প্রস্তুতির আগে চাষিরা ব্লিচিং পাউডারসহ ভাইরাস মুক্তকরণের যেসব পদ্ধতি আছে তা প্রয়োগ না করে গতানুগতিকভাবে ঘের প্রস্তুত করে চিংড়ি ছাড়েন। এ ছাড়া চিংড়ি পোনা ছাড়ার আগে পোনা ভাইরাস মুক্ত কি না তা পিসিয়ার পরীক্ষা না করে পোনা ছাড়ার কারণে এমনটা হতে পারে বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।
এসএন