বারহাট্টায় সূর্যমুখী চাষে অপার সম্ভাবনা
মাটি, অনুকূল পরিবেশ ও সরকারি তদারকি মিলে সূর্যমুখী চাষে অপার সম্ভাবনা রয়েছে নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলায়। দ্বিতীয় বারের মতো ‘সূর্যমুখী ফসলের চাষ’ করা হযেছে এবার এ উপজেলায়। ফসলের বাম্পার ফলনের আশা করছেন।
মাঠজুড়ে সূর্যমুখীর বাগানে ফুটেছে ফুল। সূর্যমুখী ফুলের এমন মনোমুগ্ধকর অপূর্ব সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে বিপুল সংখ্যক প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে আসছেন।
সাধারণত প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে ১ দশমিক ৮০ মেট্রিকটন সূর্যমুখীর তেলবীজ উৎপাদন হয়। বর্তমানে প্রতি কেজি তেল বীজের দাম ৬০-৭০ টাকা। তাতে এক হেক্টর জমিতে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকার তেল বীজ উৎপাদিত হওয়ার সম্ভাবনা। এ বছর বারহাট্টা উপজেলার সিংধা ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের ৬ হেক্টর জমিতে আরডিএস২৭৫ জাতের সূর্যমুখীর চাষ করেছেন কৃষকরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় স্থানীয় ৬৫ জন কৃষকের মাঝে সূর্যমুখী ফুলের বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে বিনামূল্যে। চাষিরা গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে বীজ রোপন করেন। এরপর তিন মাসের মধ্যে প্রতিটি গাছে ফুল ফোটার পর বাগানগুলো অপরূপ রূপ ধারণ করেছে।
বাগান দেখতে আসা প্রকৃতি প্রেমিক নুরুল ইসলাম বলেন, এ এলাকায় সূর্যমুখী ফসলের চাষের খবরটি ফেসবুকে দেখেছি ও বন্ধুবান্ধবের মুখে শুনে আজ পরিবারসহ দেখতে এসেছি। এখানে এসে খুবই ভালো লাগছে। প্রকৃতির এত রূপ না এলে বোঝা যেত না।
সূর্যমুখী ফসলের মালিক কৃষক মাসুদুর রহমান জানান, বারহাট্টা উপজেলা কৃষি অফিসের অনুপ্রেরণা থেকেই এ অঞ্চলে সূর্যমুখী ফসলের চাষ শুরু করেছি।
সরকারি ভাবে কৃষকদের মাঝে সূর্যমুখী ফসলের বীজ, সার ও প্রয়োজনীয় কীটনাশক দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। ফলন ভালো হওয়ার প্রত্যাশা করছি। ফলনের ন্যায্য মূল্য পেলে আমাদের পরিশ্রম স্বার্থক হবে এবং আমাদের মতো আরও অনেক কৃষক সূর্যমুখী চাষে আরো উৎসাহিত হবে এবং এতে বহুলাংশে দেশে বেকার সমস্যার সমাধান হবে।
বারহাট্টা উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ওবায়দুল ইসলাম খান অপু বলেন, সূর্যমুখী ফসলের চাষ পরিবেশবান্ধব যা আমাদের পরিবেশের জন্য যথেষ্ট উপকারী।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. রাকিবুল হাসান বলেন, বারহাট্টা উপজেলায় দ্বিতীয়বারের মতো সূর্যমুখী ফসলের চাষ করতে কৃষককে বীজ, সার ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মাঠে সর্বদা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছেন । এ ছাড়া আমি নিজে মনিটরিং করছি প্রত্যেকটি সূর্যমুখীর বাগান। এবার এ উপজেলায় ৬ হেক্টর জমিতে বীজ বপন করেছেন কৃষকরা। আশা করা যাচ্ছে, কৃষকরা ফলনও ভালো পাবেন।
সূর্যমুখী ফসলের মাঠ পরিদর্শন করে এবিষয়ে বারহাট্টা সহকারি কমিশনার (ভূমি) সানজিদা চৌধুরী বলেন, দেশের সাধারণ জনগণের তেলের চাহিদা পূরণে সূর্যমুখী চাষ তেল জাতীয় ফসল হিসেবে নতুন মাত্রা বহন করবে।
বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মাজহারুল ইসলাম বলেন, বারহাট্টা উপজেলায় সরকারি প্রণোদনায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ করতে কৃষকদের বীজ, সার দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্প সফল হলে আগামী বছর আরও ব্যাপক আকারে সূর্যমুখী ফুলের চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা হবে। কৃষকরা যেন ন্যায্য মূল্য পান সে দিকটিও নিশ্চিত করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ভোজ্য তেল বেশির ভাগ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। দেশে যদি এ সূর্যমুখী প্রকল্প সফলতা পায় তা হলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে আমরা এ তেল বিদেশে রপ্তানি করতে পারব বলে আশা করছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এফ এম মোবারক আলী বলেন, নানা কারণে নেত্রকোনায় আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। সে জন্য নেত্রকোনার চর ও হাওর এলাকায় প্রণোদনার মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণের কাজ করা হচ্ছে। সূর্যমুখীসহ উপযোগী ফসলের আবাদ বাড়াতে কৃষি বিভাগ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
এসএন