উত্তেজনায় ভরা ম্যাচে সিলেটের কাছে আবারও হার বরিশালের
আক্রমণের পর পাল্টা আক্রমণ। ফরচুন বরিশালের মোহাম্মদ ওয়াসিমের বোালিং মিসাইলের পর সিলেট স্ট্রাইকার্সের ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্তর অশান্ত হয়ে উঠে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দুই দলের এমন উত্তেজনাকর চিত্তাকর্ষক লড়াইয়ের এটি ছিল প্রথম পর্ব। দ্বিতীয় পর্বে ছিল সিলেটের ১৭৩ রান অতিক্রম করতে গিয়ে পথ হারানো বরিশালের দফায় দফায় ম্যাচে ফিরে আসা।
পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচ দর্শকদের জন্য বিনোদনের পসরা সাজিয়ে এনে তবেই হয়েছে ফলাফল। যেখানে শেষ হাসি হেসেছে সিলেট। জিতেছে মাত্র ২ রানে। যা ছিল এবারের বিপিএলের সবচেয়ে উত্তেজনাকর ম্যাচ। বরিশাল করে ৮ উইকেটে ১৭১ রান।
এবারের বিপিএলে বরিশালের ৭ ম্যাচে এটি ছিল দ্বিতীয় হার। প্রথম ম্যাচে তারা সিলেটের কাছে হারের পর জিতেছিল টানা ৫ ম্যাচ। ম্যাচ শুরুর আগে দুই দলের পয়েন্ট সমান ছিল। এই জয়ে সিলেট ৭ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে নিজেদের শীর্ষ স্থান ধরে রাখার পাশাপাশি শেষ চারে খেলাও অনেকটা নিশ্চিত করেছে।
সিলেটের ১৭৩ রানের জবাব দিতে নেমে দুই ওপেনার সাইফ হাসান ও ইব্রাহিম জাদরানের ধীরগতির সূচনার কারণে রান রেটে কিছুটা পিছিয়ে পড়ে বরিশাল। ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে রান আসে ১ উইকেটে ৪৪। ৭ ওভারে ২ উইকেটে ৪৬। এসময় বরিশালকে ম্যাচে রাখার চেষ্টা করেন সাকিব ও জাদরান। তারা তৃতীয় উইকেট জুটিতে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে ৬.৩ ওভারে ৬১ রান যোগ করে রানের সঙ্গে বলের ব্যবধান কমিয়ে আনেন। কিন্তু এক ওভারে তানজিম হাসান সাকিব দুইজনকেই ফিরিয়ে দিলে বরিশাল আবার চাপে পড়ে যায়। প্রথমে আউট হন সাকিব ১৮ বলে ১ ছক্কা ও ৩ চারে ২৯ রান করে। পরে আউট হন জাদরান ৩৭ বলে ২ ছক্কা ও ৪ চারে ৪২ রান করে। এসময় তাদের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৬৭ রানের। ওভার বাকি ছিল ৬.৩টি।
সাকিব ও জাদরান আউট হওয়ার পর ইফতিখার ও করিম জানাত জুটি বাঁধেন। ৪ বলে ৩ রান করা করিম জানাত হঠাৎ করে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে মাশরাফিকে পরপর ৩ ছক্কা মেরে রান ও বলের ব্যবধান অনেক কমিয়ে আনেন। ১২ বলে ২১ রান করে মোহাম্মদ আমিরের বলে বোল্ড হওয়ার সময় বরিশালের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৪১ রান। ওভার বাকি ৪টি। করিম আউট হওয়ার পর তানজিম হাসান সাকিবের পরের ওভারে ইফতিখার হয়ে উঠেন আক্রমণাত্মক। ২ চার ও ১ ছক্কায় তিনি ১৮ রান নিয়ে খেলাকে ফিফটি-ফিফটি পজিশনে নিয়ে আসেন। শেষ ২ ওভারে প্রয়োজন পড়ে ২৩ রানের। মোহাম্মদ আমিরের ১৯তম ওভারে মাহমুদউল্লাহর উইকেট হারিয়ে বরিশাল ৮ রান সংগ্রহ করলে শেষ ওভারে প্রয়োজন পড়ে ১৫ রানের।
শেষ ওভার করতে আসেন রেজাউর। স্ট্রাইকে ইফতিখার। কিন্তু প্রথম বল ওয়াইড দেওয়ার পর পরের বলেই তাকে আউট করে দেন রেজাউর। ১৩ বলে ১৭ রান করেন ইফতিখার। এসময় ম্যাচ আবার হেলে পড়ে সিলেটের দিকে। পরের বলে মোহাম্মদ ওয়াসিমকেও রেজাউর আউট করলে সিলেটের জয় সময়ের ব্যাপার হয়ে উঠে। শেষ ২ বলে প্রয়োজন পড়ে ১৩ রানের। পঞ্চম বলে ওয়াসিম ছক্কা মারলে ম্যাচ টাই হওয়ার সম্ভাবনা জেগে উঠে। তার জন্য প্রয়োজন পড়ে শেষ বলে ছক্কার। কিন্তু মোহাম্মদ ওয়াসিম মারেন বাউন্ডারি। শেষ হয় এবারের বিপিএলে চরম নাটকীয়তায় ও সবচেয়ে বেশি টানটান উত্তেজনায় ভরা একটি ম্যাচ। সিলেট জয় পায় ২ রানে।
রেজাউর ৪১ রানে ৩ উইকেট, মোহাম্মদ আমির ২৪ ও তানজিম হাসান সাকিব ৪২ রানে নেন ২টি করে উইকেট।
এর আগে সিলেটের ইনিংস শুরু হয়েছিল মোহাম্মদ ওয়াসিম ঝড়ে। তার প্রথম ওভারেই (ইনিংসের দ্বিতীয়) তিনি একে একে তুলে নেন তিন তিনটি উইকেট। যেখানে শিকার ছিল ইনজুরি কাটিয়ে ফেরা তৌহিদ হৃদয়সহ (৪) ওপেনার জাকির (০) ও মুশফিকুর রহিম (০)। কিন্তু ওয়াসিম ঝড় খুব বেশি সময় স্থায়ী হতে দেননি প্রথমবারের মতো খেলতে নামা টম মরিস ও ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত। বিশেষ করে শান্ত। বলা যায় ওয়াসিম ঝড় থামিয়ে দিয়ে মিরপুরে মঞ্চস্থ হয় শান্ত ঝড়।
মরিস ও শান্ত দুইজনে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১১.৫ ওভারে ৮১ রান যোগ করেন। জুটি ভাঙে টম মরিস ৩০ বলে ১ ছক্কা ও ৪ চারে ৪০ রান করে আউট হলে। তাকে শিকার করেন সাকিব। কিন্তু তিনি আউট হলেও শান্ত ছিলেন অশান্ত। থিসারা পেরেরাকে নিয়ে তিনি ৫.৪ ওভারে ৬৮ রান যোগ করেন। এবারও জুটি ভাঙে শান্ত অটুট থাকলে। থিসারা আউট হন কামরুল ইসলাম রাব্বির বলে। তিনি ১৬ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ২০ রান করেন। নাজমুল ৪৮ বলে ১ ছক্কা ও ৪ চারে হাফ সেঞ্চুরি করার পর শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৬৬ বলে ১ ছক্কা ও ১১ চারে ৮৯ রান করে। হাফ সেঞ্চুরি করার পর তিনি পরের ৩৯ রান যোগ করেন মাত্র ১৮ বলে ৭ চারে। শেষ ৫ ওভারে সিলেটের রান আসে যথাক্রমে ১৪, ১০, ১৪, ১১ ও ১৪।
মোহাম্মদ ওয়াসিম শুরুতে ঝড় তুললেও পরে আর ঝড় তুলতে পারেননি। পরের তিন ওভারে তিনি শুধু রানই দিয়ে গেছেন। কোনো উইকেট নিতে পারেননি। ৪ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। সাকিব ১১ ও কামরুল ৩১ রানে নেন ১টি করে উইকেট।
এমপি/এসজি