সাকিব কাণ্ডে বিসিবি পরিচালকদের চাপা ক্ষোভ
বিশ্বব্যাপী জুয়া খেলার স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান বেটউইনারের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বেটউইনার নিউজের সঙ্গে সাকিব আল হাসানের চুক্তির ঘটনা এবং পরে বিসিবি তার বিরুদ্ধে কোনো কঠোর পদক্ষেপ না দিয়ে ছাড় দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত অধিনায়ক করা নিয়ে বিসিবির একাধিক পরিচালকের মাঝে চাপা ক্ষোভ আর অসন্তোষ দেখা গেছে।
দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থার নীতি নির্ধারক হওয়ায় সামাজিকভাবে তাদের এ নিয়ে অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়। যার কোনো জবাব বা সদুত্তর তাদের কাছে ছিল না বা থাকে না। কেন বিসিবির পরিচালক হওয়ার পরও সাকিবের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ তারা নিতে পারেন না- এরকম প্রশ্নের মুখেও তাদের পড়তে হয়।
ঢাকাপ্রকাশ-এর সঙ্গে আলাপকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিসিবির একাধিক পরিচালক জানান, সাকিব একটার পর একটা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করেই চলেছেন। প্রতিবারই পার পেয়ে যাচ্ছেন। আর এতে করে তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। জাতীয় দলে যখন ইচ্ছে খেলা, তার ইচ্ছেকেই প্রাধান্য দেওয়া দেখে তাদের কাছে মনে হয়েছে সাকিব বিসিবিকে পাত্তাই দেন না। এখানে কেউ কেউ আবার জানিয়েছেন, সাকিবের বিপক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তারা জানেনই না। তাদের ডাকাও হয় না। সংবাদমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর তারা জানতে পারেন! এ নিয়েও তাদের মাঝে অসন্তুষ আছে।
নাম প্রকাশ না করে এক পরিচালক বলেন, ‘এটা ঠিক সাকিবের বিকল্প আমাদের নেই। কিন্তু এর মানে এই না যে সাকিব খেললেই আমরা জিতি, না খেললে হেরে যাই। সাকিবকে ছাড়া আমরা নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের মাটিতে টেস্টে জিতেছি। আবার সাকিব খেলার পরও উইন্ডিজে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি হেরেছি। আবার না খেলার পরও ওয়ানডে সিরিজ জিতেছি। এরকম একটি জুয়া খেলার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করার পর আমরা সাকিবকে দলে না রেখে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারতাম। তাকে একটা ম্যাসেজ দিতে পারতাম, যত বড় খেলোয়াড়ই হও, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’
আরেক পরিচালক বলেন, ‘ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব গোপন করার জন্য আইসিসি যদি সাকিবকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করতে পারে, তাহলে জুয়াড়ি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করার জন্য আমাদেরও উচিত ছিল তার বিরুদ্ধে এরকম ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু তা না করে তাকে আমরা দলে নিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত অধিনায়ক করে যেন তাকে পুরস্কৃত করলাম।’
সাকিবের এই ঘটনা ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব গোপন করার চেয়েও ভয়াবহ ও ভয়ংকর বলে মন্তব্য করেন অন্য এক পরিচালক। তিনি বলেন, ‘গভীরভাবে চিন্তা করে দেখেন, সাকিব জুয়া খেলার এই প্রতিষ্ঠানকে দেশের সব মানুষের সামনে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। সে হয়তো আমাদের চাপে পড়ে চুক্তি বাতিল করেছে। এটা হয়তো একটা সমাধান। কিন্তু দেশের মানুষের মুখে মুখে যে এই প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে গেছে, তার কী হবে? এই প্রজন্মের যেরকম মর্ডান টেকনোলজি সম্পর্কে অনেক বেশি ধারণা, তারা যে জুয়া খেলায় জড়িয়ে পড়বে না, তার নিশ্চয়তা দেবে কে? সাকিব কি এই দায়িত্ব নেবে?’
বারবার বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করে পার পেয়ে যাওয়া নিয়ে এক পরিচালক বলেন, ‘ও (সাকিব) আর জীবনেও ঠিক হবে না।’
বেটউইনার নিউজের সঙ্গে সাকিব আসলেই চুক্তি করেছিলেন কি না এ সন্দেহ প্রকাশ করেন জাতীয় দলের সাবেক এক অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘একটি চুক্তি করলাম। আবার ১৫ দিন না যেতেই বাতিল করে দিলাম। এটা কি আদৌ সম্ভব? সে আসলেই চুক্তি করেছিল কি না তা খতিয়ে দেখা উচিত।’
এমপি/এসজি/