যুগপৎ আন্দোলনে প্রধান বাধা জামায়াতে ইসলামী!
সমমনা দলগুলোকে নিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে চায় বিএনপি। কিন্তু এক্ষেত্রে বাকি দলগুলোর জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে আপত্তি রয়েছে। একারণে যুগপৎ আন্দোলন ইস্যুতে আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে এখন পর্যন্ত আলোচনা করেনি দলটি।
জানা যায়, দলের ভেতরে-বাইরে নানান সমালোচনায় এবার জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারবিরোধী আন্দোলনে জামায়াতকে এড়িয়ে চলার রাজনৈতিক কৌশলের পথে হাঁটছে বিএনপি। সেজন্য সরকারবিরোধী সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বেশকয়েকবার সংলাপ করে; পরবর্তীতে লিঁয়াজো কমিটি তৈরির মাধ্যমে বৈঠক করে যাচ্ছে বিএনপি। উদ্দেশ্য প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলকে একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা। তাই যুগপৎ আন্দোলন ইস্যুতে আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আলোচনা করেনি দলটি। তারপরও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো বারবার জামায়াত ইস্যুতে বিএনপির অবস্থান জানতে চাইলে কোনো আশানুরূপ উত্তর মেলেনি।
বিএনপির একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে যুগপৎ আন্দোলনে পাশে রাখতেই জামায়াতকে কিছুটা এড়িয়ে চলা হচ্ছে। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে তাদের যোগাযোগ আছে। যেহেতু এখন ২০ দলীয় জোট নেই। জোট ভেঙ্গে গঠিত নতুন কোনো জোটেও নেই জামায়াত। তারপরও বিএনপির মতো জামায়াতে ইসলামীও চায় বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের পতন।
এদিকে, জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতেই ২০ দলীয় জোট ভেঙ্গে দিয়ে আলাদাভাবে আন্দোলনের মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জামায়াত বিএনপির দাবির সমর্থনে যুগপৎ আন্দোলনে সক্রিয় আছে এবং ভবিষ্যতেও কর্মসূচী নিয়ে মাঠে থাকবে।
অন্যদিকে, বিএনপি দাবি করছে বিএনপি-জামায়াত এখন সম্পূর্ণ আলাদা এবং যে যার মতো আন্দোলন করছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির ১০ দফা দাবির সমর্থনে যুগপৎ আন্দোলনে যে কেউ যোগ দিতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন করতে যাচ্ছে বিএনপি। কিন্তু সঠিক সমন্বয়ের অভাবে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সঙ্গে পথচলা বা যুগপৎ আন্দোলন গতি পাচ্ছে না কিছুতেই। বরং যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান ইস্যুটিতে বৈঠকের পর বৈঠকেই আটকে থাকছে।
জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমরা যুগপৎ আন্দোলনে আছি। আমরা যুগপৎ আন্দোলন করব। তারপরও কিছুটা রাজনৈতিক কৌশলগত কারণেই দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত জোট-ভোটের বন্ধু জামায়াতকে পাশে রাখা নিয়ে বিএনপির সতর্ক অবস্থান দেখা যাচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, যুগপৎ-এর একটা যথার্থ মানে আছে। স্ব-স্ব অবস্থান। এখন এই সরকারের পতন নিয়ে যারা ভাবছে তারা একত্র হবে এটাই স্বাভাবিক। জামায়াত বলে কথা না, সরকারবিরোধী আন্দোলন নিয়ে আরও যেসব সমমনা দল আছে সবাই এই যুগপৎ আন্দোলনের অংশীদার। এখন জামায়াত যদি আমাদের ১০ দফা দাবিতে সহমত জানায় সেটাতে দোষের কিছু নেই। বাকি দলগুলোর মতোই তারাও এই সরকারবিরোধী কর্মসূচির একটা অংশ।
জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদের একজন প্রভাবশালী নেতা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বিএনপি নেতাদের ভাবনায় নানা কারণেই বর্তমান সরকারের ওপর মানুষ ক্ষুব্ধ। ফলে চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীকে ছাড়াই বিএনপি সফল হতে পারবে। এ কারণে যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতকে গুরুত্ব দিচ্ছে না বিএনপির হাইকমান্ড। আমাদের স্পষ্ট কথা; সময় বলে দেবে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা কী হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমরা যে লিঁয়াজো কমিটি করেছি, লিঁয়াজো কমিটি সরাসরি যেসব রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করছে, তারাই আমাদের সাথে যুগপৎ আন্দোলনে আছে। যুগপৎ করার অর্থই হচ্ছে যার যার মতো সে সে করো। সেখানে যদি কোনো দল নিজের ইচ্ছায় করে, আমরাতো না করতে পারবো না। তাছাড়া বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কে জামায়াত আর কে জামায়াত না তা চুলচেঁড়া বিশ্লেষণ করার সময় নয়।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, একটি ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করছি। ইতোমধ্যে বেশকয়েকটি রাজনৈতিক দল এক সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছি। আরও কিছু রাজনৈতিক দল যুক্ত হবে। তাছাড়া যুগপৎ আন্দোলন তো একসঙ্গেও করা যায় আবার পৃথক পৃথকভাবে একই দাবিতে করা যায়। সেক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীও যুগপৎ আন্দোলনে আছে বলা যায়। কারণ দলটির দাবি ও আমরা যারা সরকারবিরোধী আন্দোলন করছি সবার দাবি এক। এখন শুধু প্রয়োজন একে অপরকে কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও কাঙ্খিত লক্ষ্যে অগ্রসর হওয়া।
বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নূরুল হক নুর ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বিএনপি, জামায়াত, চরমোনাই, খেলাফত, বাম, ডান- যারাই আজ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাজপথে আছে তাদের প্রত্যেকের প্রতি আমাদের ফেলোফিলিং রয়েছে। সবাইকে নিয়ে আমরা রাজপথে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে চাই। তবে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, ছোট ছোট দলগুলোর বিশেষ কোনো সাপোর্ট নেই। সাপোর্ট দিয়ে কিভাবে তাদের আরও চাঙ্গা করা যায় সেই চেষ্টা বিএনপি কে করতে হবে।
যুগপৎ আন্দোলন প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারবিরোধী সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বোঝাপড়া আছে। অনেক কর্মসূচি আছে যেগুলো প্রত্যেক দল তাদের মতো করে পালন করবে, আমরা আমাদের মতো করব। কিন্তু মূল দাবি অর্থাৎ এই সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে দাবি একই সঙ্গে রাষ্ট্রের যে সংস্কারের কথাগুলো রয়েছে সে দাবিগুলোতে আমরা একমত রয়েছি।
১২ দলীয় জোটের একজন প্রভাবশালী নেতা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, শুধু মাত্র জামায়াতে ইসলামীকে দোষারোপ করে লাভ নেই। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া যুগপৎ আন্দোলন কোন পথে অগ্রসর হবে তা কেউ জানেন না। মির্জা ফখরুল কে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যেভাবে নির্দেশনা দেবেন তিনি সেভাবেই আন্দোলনের গতিবিধি নির্ধারণ করবেন।
আরইউ/এএস