বারবার আগুন, মাঠে বিশেষ গোয়েন্দা ইউনিট
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়িয়েছে সরকার। বারবার অগ্নিকাণ্ডের কারণে সরকার মনে করছে এটা নাশকতাও হতে পারে। গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়িয়ে অনুসন্ধান করে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে অগ্নিদুর্ঘটনা কমাতে চায় সরকার।
গোয়েন্দা তথ্য মতে, সম্প্রতি বঙ্গবাজারে আগুন ও নিউ মার্কেটের আগুনের ঘটনার তদন্তে মাঠে নেমেছে সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা। গোয়েন্দা তৎপরতার বিষয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, কেনো এত আগুন লাগছে সেটা ক্ষতিয়ে দেখতে আমাদের বিশেষ বিশেষ ইউনিট মাঠে কাজ করছে।
অবশ্য এসব বিষয়ে র্যাব-পুলিশের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বঙ্গবাজার ও নিউ মার্কেটে কি এমনিতেই লেগেছে নাকি এর পেছনে নাশকতা রয়েছে তা খতিয়ে দেখতেই মূলত মাঠে অবস্থান করছে গোয়েন্দারা। বিশেষ করে ঢাকায় আগুনের ঘটনাগুলো গোয়েন্দারা বিশেষভাবে আমলে নিয়ে কাজ করছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, আগামীকাল রবিবার (১৬ এপ্রিল) থেকে ঢাকার বিপণী বিতানগুলোতে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হবে। সম্প্রতি আগুনের ঘটনাগুলোতে কোনো নাশকতা রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এসব বিষয়ে আমাদের গোয়েন্দা বিশেষ টিম কাজ করছে।
বঙ্গবাজারের আগুন ও নিউ মার্কেটের আগুনের ঘটনাটি আমাদের পুলিশের পক্ষ থেকে সব কিছু মাথায় রেখে তদন্ত করা হচ্ছে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আপনারা জানেন যে আগে দুইটা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এরপরে আমাদের বঙ্গবাজারে একটি বড় আগুনের ঘটনা ঘটল। গতকাল শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) রাতে হাজারীবাগে একটি ট্যানারি কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ভোরে আবার এই নিউমার্কেটে আগুন লেগেছে। বিস্ফোরণের দুইটা ঘটনায় আমরা মামলা নিয়েছি। বঙ্গবাজারের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আর আমরা গোপনেও তদন্ত করছি।
শনিবার (১৫ এপ্রিল) আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বেশ কয়েকটি ইউনিটের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বঙ্গবাজারের আগুনের ঘটনায় অভিযুক্ত ৩ যুবককে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে নিউমার্কেটের আগুনের ঘটনায় স্পেশাল ইউনিটের সদস্যরা কাজ শুরু করেছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রাজধানীর বঙ্গবাজার ও নিউমার্কেটের আগুনের ঘটনাটি আমাদের পক্ষ থেকে এর যথাযথ কারণ ও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এটি দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা, তা খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমেছে র্যাবের তদন্ত দল।
এদিকে, আগুনের ঘটনায় ব্যবসায়ীরা বলছেন, নিয়মিত মার্কেটগুলোতে কয়েকদিন পর আগুন লাগার কারণে তারাও কারণ জানতে চান। তারা বলছেন, এসব আগুনের কারণে আমরা পথের ভিখারি হয়ে যাচ্ছি।
আগুনের ঘটনায় বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ী ও নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, নাশকতার গন্ধ পাচ্ছি আমরা। এ আগুনের পেছনে কারও না কারও হাত রয়েছে অন্যথায় এত বড় আগুন লগবে কেন। এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা শুরু থেকেই অভিযোগ করছিলেন।
বঙ্গবাজারে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী নাহিদ বলেন, এটি পরিকল্পিত ঘটনা মনে হচ্ছে। আমাদের উচ্ছেদ করতে কেউ পেছন থেকে আগুন লাগিয়ে থাকতে পারে।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত নিউ মার্কেটের আরেক ব্যবসায়ীর বেলাল বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজ আছে সেটি দেখে তদন্ত করা উচিত আগুন লাগিয়ে দেওয়া নাকি এমনি লেগেছে। আমাদের সন্দেহ হয়।’
নিউ মার্কেটের আরেক ব্যবসায়ী মা এন্টারপ্রাইজের ব্যবসায়ী নাসিমা চৌধুরী বলেন, ‘আমার সব শেষ হয়ে গেছে। ঈদ উপলক্ষে মার্কেটের গোডাউন ভর্তি পণ্য তোলা হয়েছিল, কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সব পুড়ে শেষ হয়ে গেল। এই আগুন কেউ লাগিয়ে দিয়েছে কি না সেটা সরকারের বাহিনীর দেখা উচিত। আমরা তো অসহায় হয়ে পড়লাম, আমাদের কী হবে?’
বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজের আরেক ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন,
‘আমার এখানে তিনটা দোকান ছিল সব পুড়ে গেছে। এই আগুন আমার কাছে মনে হচ্ছে নাশকতা। এটা তদন্ত করা উচিত।’
আগুনের এসব বিষয়ে নিয়ে পুলিশ প্রধান আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ফোনে ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ইদানিং লক্ষ্য করছি রাজধানীর কয়েকটি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব অগ্নিকান্ডের প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করছে আমাদের বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ বিশেষ ইউনিট। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক আরও বলেন,বঙ্গবাজার ও নিউ মার্কেটের অগ্নিকাণ্ডে ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তারা যেসব অভিযোগ করেছেন তা আমলে নিয়ে পুলিশ কাজ করছে। ইতিমধ্যে আগুনের রহস্য উদঘাটন করতে পুলিশের বিশেষ টিম ও একাধিক সংস্থা মাঠে নেমেছে। আগুন লাগার পেছনে কোনো ধরনের নাশকতার কিছু পেলে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবং এর সঠিক কারণ ও বের করা হবে।
এই বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিভিন্ন সময়ের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছে। তা ছাড়া, এসব ঘটনায় কমিটি গঠন করে কাজ করা হচ্ছে।
এসব ঘটনা নাশকতা কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অগ্নিকাণ্ডে ঘটনাগুলোতে গোয়েন্দাদের কোনো গাফিলতি নেই। তবে যেসব জায়গায় আগুন লাগছে সেই সব ভবন আগে থকেই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তারপরও দেখা হচ্ছে এসব ঘটনা নাশকতা কি না।
বঙ্গবাজার এবং নিউ সুপার মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আতঙ্ক আর সন্দেহ নিয়ে ব্যবসা করা যায় না। বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ক্ষত না শুকাতেই রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা নিউমার্কেটের নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড ঘটল। দুটি মার্কেটেই একদম সকালে আগুন লেগেছে। ঈদের আগে পরপর এমন ঘটনায় আতঙ্ক ও সংশয় দেখা দিয়েছে ব্যবসায়ীদের মনে। এসব আগুন কীভাবে লাগল তা খতিয়ে দেখতে প্রসাশনকে অনুরোধ জানাই।
আরইউ/এমএমএ/