সিটি নির্বাচনে অংশ না নিতে নেতাদের কঠোর নির্দেশনা বিএনপির
পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। কিন্তু তারপরও দলটির আশঙ্কা, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়েও কেউ কেউ নির্বাচন করতে পারেন। এমন আশঙ্কা থেকে নেতাদের নজরদারিতে রেখেছে বিএনপি।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, দলটি মূলত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন ছাড়া আর কিছু ভাবছে না। তাই সিটি নির্বাচন আসন্ন হলেও অতীতে এসব নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন এবং নতুন করে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন দলের এমন নেতাদের আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক কোনো বার্তা দেওয়া হয়নি। উপরন্তু দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সেজন্য তাদের রাখা হয়েছে সাংগঠনিক নজরদারিতে।
জানতে চাইলে বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ওবায়দুর রহমান চন্দন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, শুধু সিটি নির্বাচন নয় বর্তমান সরকার ও শেখ হাসিনার অধীনে আমরা কোন নির্বাচনে যাচ্ছি না। এটা দলীয় সিদ্ধান্ত। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে কথা বলেছেন, সিটি নির্বাচন ইস্যুতে দলের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। আমরা এটাকেই নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত বলে মনে করছি।
বিএনপি'র ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ যদি প্রার্থী হয় সে ক্ষেত্রে দলের সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের বাইরে অবস্থান বিবেচনায় অতীতে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের বিষয় যে সিদ্ধান্ত, এখনো যদি কেউ প্রার্থী হয় তাদের ক্ষেত্রেও একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তাছাড়া দলের পদ পদবী ব্যবহার করে কেউ নির্বাচনে অংশ নিবে না, আমরা এই সিদ্ধান্তেই আছি। এর বাইরে কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। আমাদের স্পষ্ট কথা বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার ও শেখ হাসিনার অধীনে কোন ধরনের নির্বাচনে অংশ নিব না।
এক্ষেত্রে বাহ্মণবাড়িয়া উপনির্বাচনকে সামনে রাখছে বিএনপি। বিএনপি নির্বাচনে যাবে না মির্জা ফখরুল এমন কথা বললেও পদত্যাগ করা বিএনপির সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তার ঠিকই নির্বাচন করে আবার এমপি হয়েছেন। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগও কোনও প্রার্থী দেয়নি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ প্রসঙ্গে বলেন, বিএনপিতে উকিল সাত্তারের অভাব নেই। বিএনপির অনেক নেতা তলে তলে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যোগাযোগ করছে। যেটা সময় হলেই টের পাওয়া যাবে।
বিএনপি নেতৃত্ব বলছে, অতীতের নানা অভিজ্ঞতা থেকে ক্ষমতাসীন সরকার ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনে আস্থা নেই বিএনপির। তাই নির্বাচন কমিশন একাধিকবার সংলাপের চিঠি দিলেও সাড়া দেয়নি দল। বরং এই মুহুর্তে সরকারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবিতে অটল বিএনপি। দলীয় সরকার বিশেষ করে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে কোনো নির্বাচন হয় না।
দলটির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালীন আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। বিএনপির লক্ষ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিএনপির কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থায়ীভাবে বহিষ্কার পর্যন্ত হতে পারে। যদি কোনো প্রার্থী দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে তৃণমূল নির্বাচনে যেতে চায় বলে আওয়াজ তুলতে চায় সেটাও কঠোরভাবে মোকাবেলা করা হবে। কারণ সিটি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল দলের হাইকমান্ড।
বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের একটি সূত্র মতে, নিকট অতীতে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে মেয়র পদে প্রার্থী হয়ে দল থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক তৈমুর আলম খন্দকার ও কুমিল্লার মনিরুল হক (সাক্কু)। এবারও পাঁচ সিটিতে যদি কেউ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ইভিএম নয়, ব্যালটে; আবার ব্যালট নয় ইভিএম পদ্ধতিতে নির্বাচন, এগুলো বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কুটকৌশল। ইতোপূর্বে আমরা স্থানীয় পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি নাই। এখন এমন কোনো পরিস্থিতি আসে নাই যে আমরা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করব এবং সিটি নির্বাচনে অংশ নেব।
সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না, জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, প্রশ্নই ওঠে না। আমরা বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করব না। এই সিদ্ধান্তই এখনো আছে, এর কোনো পরিবর্তন হয়নি।
নির্বাচনে অংশগ্রহনের পূর্ব শর্ত তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, আন্দোলন একটাই। আন্দোলন হচ্ছে এই সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে না এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। আর স্থানীয় সরকার নির্বাচন তো অনেক আগেই বাদ দিয়েছি…।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার অনির্বাচিত সরকার। দলীয় সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বিএনপি। কাজেই বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার তো কোনো প্রশ্নই আসে না। এখন পর্যন্ত অনানুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হলো- সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না।
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের ১৬তম সভা শেষে নির্বাচন কমিশনের সচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আগামী জুনের মধ্যেই দেশের পাঁচটি সিটি করপোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ২৩ মে থেকে ২৯ জুনের মধ্যে তিন ধাপে হবে এই নির্বাচন। ৫ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করেছে ইসি। আগামী ২৫শে মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন, রাজশাহী ও সিলেট ২১ শে জুন, খুলনা ও বরিশালে ১২ জুন ভোটগ্রহণ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দলীয় সিদ্ধান্ত না হলেও অনেকেই সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে চাইছেন। নির্বাচনে অংশ নিতে তোড়জোড় চালাচ্ছেন দলের অনেক নেতা। তবে এখন পর্যন্ত তেমন সাড়া পাননি তারা। কেউ কেউ বলছেন; সিটি নির্বাচনে অংশ না নিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেওয়ার পথ খোলা রাখা উচিত বিএনপির হাইকমান্ডের। দলীয় পদ পদবি নেই- এমন অনেকেই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিবে এমন খবর পেয়েছে বিএনপি। দলের পক্ষ থেকে তাদেরকে নির্বাচনে না যাওয়ার মেসেজ দেওয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, দলের এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না। সেক্ষেত্রে তো সিটি নির্বাচনও অংশ না নেওয়ার মধ্যেই পড়ে।
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে আমার মনে হচ্ছে না দলের কেউ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা বিবেচনায় নিয়ে ভোটের মাঠে নামবে।
এদিকে খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু। তিনি বিগত খুলনা সিটি নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন। মঞ্জু বলেন, বিএনপির সিদ্ধান্ত এখনো পাইনি। বিএনপি দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া কোনো ভোটে অংশ নিবে না। সিটি নির্বাচন নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আমরা পাইনি। বিএনপি নির্বাচনে গেলে আমি প্রার্থী হব। আমি প্রস্তুত রয়েছি। তবে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করব না।
আরইউ/এএস