মাঠে জাল টাকার কারবারিরা, সতর্ক গোয়েন্দারা
ঈদকে কেন্দ্র করে মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছে জাল টাকার কারবারিরা। ইতিমধ্যে চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তারও করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ চক্রকে ধরতে মাঠে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে গোয়েন্দারাও।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, এই চক্রের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে । উৎসব আসলেই জাল টাকা চক্রের সদস্যরা সক্রিয় হয় এমন অভিজ্ঞতা থেকে অতিরিক্ত সতর্ক অবস্থান নেওয়া হয়েছে।
গত ২ এপ্রিল রাজধানীর রমনা মডেল থানা এলাকা থেকে এক লাখ টাকার জাল নোটসহ ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-মামুন শেখ ও মেশকাত চৌধুরী।
এই বিষয়ে ডিবি উত্তরা বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) হাবিবুর রহমান বলেন, ‘রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন এলাকা থেকে বিপুল জাল টাকাসহ অবস্থান কালে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে কয়েকজন পালিয়ে যায়। এই চক্রটির টার্গেট ছিল ঈদে সারা ঢাকাতে তারা জাল টাকা ছড়িয়ে দেবার। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের ধরতে আমরা সক্ষম হয়েছি।’
এদিকে, বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) মিরপুরে ডলার জালিয়াতি চক্রের হোতা বেলায়েত হোসেন শেখ ওরফে ডলার বেলায়েতসহ তার তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই চক্রটি ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে জাল টাকা ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছিল। অবশেষে তাদের একটি গ্যাংকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, বেলায়েতের গ্যাংরা সারা দেশ ও ঢাকায় ডলার ও জাল টাকা ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের আমরা গ্রেপ্তার করেছি। তবে এই গ্রুপের অনেকেই এখন বাইরে রয়েছে ,তাদের ধরার চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে ডিএমপির লালবাগ বিভাগের (গোয়েন্দা) উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, পবিত্র রমজানের মধ্যে ও আসন্ন ঈদুল ফিতরের মধ্যে জাল টাকা কারবারির সদস্যরা বিভিন্ন মার্কেটে গিয়ে কৌশলে এসব টাকা ছেড়ে দেয়।
তবে পুলিশেরও অভিজ্ঞতা এমন যে গ্রেপ্তার করার পর অনেকবার তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে । কিন্তু এসব অপরাধীরা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে আসে এবং আবারও একই কাজ শুরু করে।
ডিসি মশিউর রহমান আরও বলেন, জাল টাকার কারবার এখন অনলাইনেও দেখা যায়। বিভিন্ন পেজ খুলে জাল টাকার বিজ্ঞাপন করে থাকে, সম্প্রতি এমন অনেক চক্রের সদস্যদের আমরা গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।
জানতে চাইলে ডিবি পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি মিডিয়া) ফারুক হোসেনও বলেন, এরা এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের এমন কাযক্রমে আমাদের গোয়েন্দারা বিশেষভাবে সতর্ক রয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বলেন, বিভিন্ন উৎসব এলে সংঘবদ্ধ হয়ে কাজ করে এসব চক্র। এসব বিষয়ে যদি সরকারের বাহিনীগুলো আগে থেকে সতর্ক না হয় তাহলে সাধারণ মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হলো দৈনন্দিন টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে সবাইকে সচেতন হতে হবে। অন্যথায় ঝামেলায় পড়তে হতে পারে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, কোনো জাল টাকা ধরা পড়লে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাছে থাকে। এসব জাল টাকা শনাক্ত করার জন্য এবং তা যাচাই বাচাই করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাকের কাছে পাঠানো হলে সেটি চিহ্নিত করে আবারও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আরইউ/এমএমএ/