ইসির সিদ্ধান্তকে আওয়ামী লীগের স্বাগত, বিএনপির না
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে সেটা নিয়ে এখনো দেশের প্রধান দুটো রাজনৈতিক দল বিপরীতমুখী অবস্থানে অনড়। ক্ষমতাসীন সরকার ও আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী, বর্তমান সরকারের অধীনেই। আর বিএনপি নেতারা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ও শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হবে না; নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন।
এ নিয়ে রাজনৈতিক নেতারা যখন একে অপরের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করছেন ঠিক তখন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ঘোষণা করেছে আগামী নির্বাচনে ইভিএমএ নয়, ভোট হবে ব্যালটে।
ইসির এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অপরদিকে, নির্বাচন কমিশনের এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি।
সোমবার (৩ এপ্রিল) ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানান, নির্বাচন কমিশন সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ লক্ষ্যে ইভিএম মেরামতের জন্য সরকারের কাছে এক হাজার ২৬০ কোটি টাকা চেয়েছিল ইসি। ওই টাকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় ৩০০ আসনেই স্বচ্ছ ব্যালট পেপারে ভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ভোট ইভিএমে হলো না কি ব্যালটে হলো সেটি নিয়ে বিএনপির কোনো মাথাব্যথা নেই। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না। ইভিএম বা ব্যালট কোনো বিষয় নয়, বিষয় হচ্ছে অনির্বাচিত অবৈধ সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ভোটচুরির এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য। সুতরাং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া কোনো নির্বাচনে জনগণ বা বিএনপি যাবে না।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছে যে, ইভিএমে নয়, ব্যালটেই নির্বাচন হবে। এটাতে আমাদের এতটুকু আগ্রহ নেই। কারণ, আমার কাছে যেটা মনে হয়...আমরা পরিষ্কার করে বলেছি যে, আজকে জাতির যে সংকট সেই সংকট হচ্ছে নির্বাচনকালীন সময়ে কোন সরকার থাকবে, কী ধরনের সরকার থাকবে-সেটিই প্রধান সংকট। এই সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতেই ক্ষমতা দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নতুন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগনের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের একজন সদস্য বলেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন ইভিএমে ভোট নেওয়ার ব্যাপারে অনড় ছিল। ইভিএমের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলো। নির্বাচন কমিশনের সংলাপেও বেশিরভাগ দল ইভিএমের বিপক্ষে ছিল। এখন ইভিএমে ভোট না করার ইসির সিদ্ধান্তে তারাও আশ্বস্ত হবে, ইসির উপর আস্থা রাখতে পারবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সংস্থা। তারা স্বাধীনভাবে যে সিদ্ধান্ত নেবে, সে হিসেবে নির্বাচন কমিশন ইভিএমের বদলে ব্যালটে ভোট নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাকে আমরা স্বাগত জানাই।
জাতীয় পার্টি (এরশাদ) চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, আমরা দাবি করেছিলাম ব্যালটে নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশন তা মেনে নিয়েছে, এজন্য তাদের ধন্যবাদ। তবে এটাই সমস্যার সমাধান নয়। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, না কারচুপি হবে তা সরকার ঠিক করে। কে জিতবে, কে হারবে তাও সরকার নির্ধারণ করছে, এটাই সমস্যা।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আগামীতে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাব না। আমাদের ১০ দফা দাবির মূল দাবি হলো নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচন। শেখ হাসিনা সরকার যদি বলে কালকে থেকে পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করে আমি পদত্যাগ করব তাহলে আমরা কালকে থেকেই কিছু বলব না।
তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ করেছি গণতন্ত্রের জন্য। আমরা যুদ্ধ করেছি শোষণ ও বঞ্চনা মুক্তির জন্য। আমরা যুদ্ধ করেছি আইনের সুশাসনের জন্য। আর সেই দেশেই গণতন্ত্র থাকবে না, তাহলে আমরা কী আঙুল চুষব?’
এদিকে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ইভিএম কিংবা ব্যালেট সবচেয়ে বড় সমস্যা নির্বাচন কমিশন নিয়েই। কারণ, নির্বাচন কমিশনের উপর মানুষের আস্থা নেই। কোনো দলীয় সরকারের আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না, কেননা আমরা দেখেছি অতীতের যত নির্বাচন হয়েছে তার মধ্যে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু হয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু হয়েছে। তবে নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে, নাকি নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে হবে তা নির্ধারণ করবে রাজনৈতিক দলগুলো। আমরা শুধু সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করছি। তা ছাড়া সংবিধান সংস্কার করে ইসির অধীনে থাকা সংস্থাগুলো শক্তিশালী করলেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।
প্রসঙ্গত, গত বছরের জুলাই মাসে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে গুরুত্ব পেয়েছিল ইভিএম ইস্যুও। সংলাপ শেষে অনধিক ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোট করার পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। এ জন্য সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার ইভিএম কেনার প্রকল্প নেয় ইসি। কিন্তু তাতে সরকারের সায় না পাওয়ায় প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাতিল হয়ে যায়।
ইসি সূত্র জানায়, বিদায়ী হুদা কমিশন দেড় লাখ ইভিএম রেখে গিয়েছিল। সেগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করায় প্রায় ৪০ হাজার ইভিএম ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। বাকি এক লাখ ১০ হাজার ইভিএমও মেরামত করতে হবে। এজন্য ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা প্রয়োজন।
এনএইচবি/এমএমএ/